দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। অবশেষে চাকা ঘুরল মিতালি এক্সপ্রেসের। বুধবার সকালে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেল মিতালি এক্সপ্রেস। এদিন ভারত ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী ভার্চুয়ালি এই রেল পরিষেবার উদ্বোধন করেন। মিতালি এক্সপ্রেস যাতে সপ্তাহে ৫ দিন চালানো যায় সেব্যাপারে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে বুধবার মিতালি এক্সপ্রেসের উদ্বোধন নিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
দু'দিন আগেই কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে মৈত্রেয়ী এক্সপ্রেস। বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা মিতালি এক্সপ্রেসের। এদিন দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি ওই ট্রেনের সূচনা করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। দীর্ঘদিন ধরে এই ট্রেন চালুর দাবি ছিল উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হল।
করোনার জেরে এই রেল পথের কাজ বেশ কিছুদিন ধরেই থমকেছিল। অবশেষে সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে চালু হল মিতালি এক্সপ্রেস। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থকে এদিন ১৮ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে মিতালি এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনটির এসি কেবিন বার্থের ভাড়া মাথা পিছু ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি কেবিনে চেয়ার কারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। এসি চেয়ার কারের ভাড়া ২ হাজার ৭০৭ টাকা।
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫৯৫ কিলোমিটার। যার মধ্যে মাত্র ৬৯ কিলোমিটার পথ ভারতের মধ্যে পড়ছে। বাকি রেলপথ বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ভারতীয় সময় সকাল ১১.৪৫ মিনিটে ছেড়ে বাংলাদেশের সময়ে রাত ১০.৩০ টায় ঢাকায় পৌঁছোবে। মাঝে ভারতের দিকে শেষ স্টেশন হলদিবাড়ি। বাংলাদেশের দিকে শেষ সীমান্ত স্টেশন চিলাহাটি। দু'টি স্টেশন ছাড়া এই ট্রেনটির আর কোনও স্টপেজ নেই।
আরও পড়ুন- দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকছে কবে, অবশেষে দিনক্ষণ জানাল আবহাওয়া দফতর
জানা গিয়েছে, মিতালি এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে প্রতি রবিবার ও বুধবার। ট্রেনটি বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ছাড়বে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার। ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা আবশ্যক। নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনেই কাস্টমসের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই যাত্রীদের যাবতীয় নথি খতিয়ে দেখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এদিন মোট ১৮ জন যাত্রী নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন থেকে মিতালি এক্সপ্রেসে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন।
জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায় বলেন, "এক ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী থাকলাম। দুই বাংলা আরও কাছে চলে এল। গোটা উত্তরবঙ্গের আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।" উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনসুল গুপ্তা বলেন, "উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে রওনা দেওয়া মিতালি এক্সপ্রেসই প্রথম ট্রেন। এই ট্রেন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।"
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাসিন্দা সরজ চৌধুরী বলেন, "আমি প্রথমে বিমানের টিকিট কেটেছিলাম। পরে বিমানের টিকিট বাতিল করে ট্রেনের টিকিট কাটলাম। দুই বাংলার মানুষের জন্যই এই ট্রেন চালুর জেরে অনেক সুবিধা হবে।" আরেক যাত্রী ঢাকার বাসিন্দা টিটু সিদ্দিক বলেন, "আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। প্রচুর পর্যটক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।'' মিতালি এক্সপ্রেস ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী তৃতীয় ট্রেন এবং উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ যাওয়া প্রথম ট্রেন।