Advertisment

সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার টোপ, আঙুলের ছাপে সাফ অ্যাকাউন্ট, ধৃত ২

বিরাট প্রতারণা চক্রের পর্দাফাঁস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Abas_Cheating New

ধৃত প্রতারকরা। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

সরকারি আবাস যোজনা নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় কিছুতেই যেন বিরাম পড়ছে না। এতদিন শোনা গিয়েছে সরকারি আবাস যোজনার উপভেক্তাদের কাছ থেকে কাটমানি আদায়ের ঘটনা। এবার সামনে এল প্রতারকদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তাদের থেকে টাকা হাতানোর নতুন কৌশল। যা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কর্তারা যেমন চিন্তিত, তেমনই চিন্তিত পুলিশের কর্তারাও। উপভোক্তারা যাতে প্রতারকদের খপ্পরে না-পড়েন, তার জন্য গ্রামের মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিচ্ছে জেলা পুলিশ।

Advertisment

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সহায়ক পরিচয় দিয়ে গ্রামে যাচ্ছিল প্রতারকরা। তারা উপভোক্তাদের বলত, আবাস যোজনার বকেয়া টাকা পাবার জন্য আঙুলের ছাপ দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার লিংক করতে হবে। এই কথা বলে নিজেদের স্ক্যানার মেশিনে উপভোক্তাকে আঙুলের ছাপ দেওয়ানোর পর প্রতারকরা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা হাতিয়ে নিত।

এক প্রতারিত মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে ওই প্রতারণা চক্রের দুই পাণ্ডা শোভন মহান্ত ও আলিবুদ্দিন মল্লিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের রবিবার শ্রীঘরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দু’জনেই পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানা এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের থেকে একটি ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার মেশিন, ৩টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ৮ হাজার ১৭০ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এই প্রতারণা চক্রে আর কারা যুক্ত এবং এখনও পর্যন্ত ধৃতরা কত উপভোক্তাকে প্রতারিত করেছে, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মন্তেশ্বরের ভাগড়া গ্রামে বাড়ি আবদুল সেলিম শেখের। স্যুটেড-বুটেড হয়ে বাইকে চেপে গত ২৯ নভেম্বর সেলিমের বাড়িতে যায় মেমারির দুই যুবক আলিবুদ্দিন মল্লিক ও শোভন মোহান্ত। তখন সেলিম বাড়িতে ছিলেন না। দুই যুবক নিজেদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের সহায়ক বলে সেলিম শেখের স্ত্রী হাসনা বেগমের কাছে পরিচয় দেয়।

তারা হাসনা বেগমকে জানায় যে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার লিংক করা নেই বলেই হাসনা বেগমের অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনার বকেয়া টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না। প্রকল্পের টাকা পেতেও দেরি হচ্ছে। বাকি টাকা পেতে গেলে এখন আবাস যোজনার নথি লাগবে। আঙুলের ছাপ লাগবে। তারপরই প্রকল্পের বকেয়া টাকা কিছু দিনের মধ্যে হাসনা বেগমের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে।

ওই প্রতারকদের কথা হাসনা বেগম সরল মনে বিশ্বাস করে নেন। এরপরেই তাঁর আধার কার্ড, ব্যাংকের বই, জবকার্ড তাঁদের হাতে তুলে দেন। এই সুযোগে আধার কার্ডের সঙ্গে ব্যাংকের লিংক করানোর কথা বলে যুবকরা তাঁদের স্ক্যানার মেশিনে হাসনা বেগমের আঙুলের ছাপ স্ক্যান করে নেয়। এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবার পরে ওই যুবকরা হাসনা বেগমকে জানায় যে একমাসের মধ্যে আবাস যোজনার বকেয়া টাকা তিনি পেয়ে যাবেন।

নিজেদের কাজ হাসিল করে নিয়ে ওই যুবকরা মুহুর্তের মধ্যে বেপাত্তা হয়ে যায়। পরে হাসনা বেগম ব্যাংকে গিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্ট বই আপডেট করে জানতে পারেন তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। তিনি যুবকদের দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে হাসনা বেগম এরপর মন্তেশ্বর থানার দ্বারস্থ হন।

আরও পড়ুন- বিচারপতির বিরুদ্ধে টুইটের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা বিবেক অগ্নিহোত্রীর, স্বশরীরে হাজিরার নির্দেশ আদালতের

তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ মন্তেশ্বর থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দুই যুবককে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতরা স্বীকার করেছে যে তাঁরা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের উপভোক্তাদের প্রতারণা করেছে। তাঁদের প্রধান টার্গেট থাকত গ্রামের মহিলা উপভোক্তারা। যা শুনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন।

এই বিষয়টি জানার পর সোমবার পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, 'এমন প্রতারণা নজিরবিহীন। পুলিশের তৎপরতাতেই সরকারি আবাস যোজনার টাকা হাতানোয় জড়িত প্রতারকদের জালে পোরা গেছে। আর কেউ যাতে প্রতারকদের খপ্পরে না-পড়েন, তার জন্য গ্রামের মানুষজনকে সচেতন করার ব্যাপার পুলিশ উদ্যোগ নিচ্ছে বলে শুনেছি। জেলার পঞ্চয়েতগুলোও যাতে জনগণকে সচেতন করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।'

police Arrest PM Awas Yojana
Advertisment