Advertisment

ফুঁসছে দেউচা, 'মমতা এসে কথা বলুন'- ধরনা থেকে দাবি আদিবাসীদের

প্রকল্পের জন্য ঘোষিত এলাকার আদিবাসীরা জমি ছাড়তে নারাজ।

author-image
Joyprakash Das
New Update
movement of adibasis against deucha pachami coal plant

আন্দোলনে দেউচার আন্দোলনকারীরা। ছবি- পার্থ পাল

দেউচা-পাঁচামি প্রকল্প রূপায়ন করতে ইতিমধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে রাজ্য। বেশ কয়েকজনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবু দেওচা-পাঁচামি কয়লা পকল্পের বিরোধিতায় ৪২ দিন ধরে ধরনায় বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বীরভূম জমি জীবন জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা বীরভূমের বারমেশিয়ায় ধরনা-অবস্থানে বসেছেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছে মহাসভা। তবে প্রকল্পের জন্য ঘোষিত এলাকার আদিবাসীরা জমি ছাড়তে যে নারাজ সেকথাও জানিয়ে দিয়েছেন।

Advertisment

সম্প্রতি রামপুরহাটের বগটুইয়ে তৃণমূলের উপপ্রধান খুনের পর জীবন্ত ৯জনকে পুড়িয়ে মারা হয়। এই ঘটনার পর মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, দেউচা-পাচামির প্রকল্প রূপায়নে বাধা দেওয়ার জন্য বগটুই একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। পড়ন্ত বিকেলে বারমেশিয়ায় গিয়ে দেখা গেল আন্দোলনকারীদের হাতে তীরধনুক। শ-দুয়েক আন্দোলনকারী স্লোগান দিচ্ছে। সিপিএমও দেউচায় জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছে।

publive-image
তির-ধনুক হাতে বিক্,োভকারীরা। ছবি পার্থ পাল

মহাসভার আহ্বায়ক ভাড়কাঁটার পলাশবনির বছর ছত্রিশের গণেশ কিস্কু চাইছেন সরকার আগে প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করুক। গণেশ কিস্কু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'সরকার আইন মেনে চলুক। আমরাও আইন মানব। সরকার বলছে কয়লাখনি হবে। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে কোনও অনুমোদন নেয়নি। আমরা জানিও না। টিভি বা কগজে দেখেছি প্যাকেজ দেওয়া হবে। আমাদের সঙ্গে কেউ বসেওনি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তৃণমূলের লোকেদের কথা শুনব না। সরকার আমাদের সঙ্গে বসুক। তারপর সিদ্ধান্ত নিক।' বারমেশিয়ায় পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে মহিলারাও আন্দোলনে সামিল হয়েছে। সোমবার গণেশ জানান, 'আমাদের আন্দোলন ৪২ দিনে পড়েছে। আরও অনেকে আমাদের এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।'

আশা কর্মী সনদি হাঁসদাও আন্দোলনে সামিল। স্বামী চাষাবাদ করেন। ১০ বিঘে জমি রয়েছে। দিদি, ছেলে-মেয়ে আছে সংসারে। সনদি হাঁসদার দাবি, 'আন্দোলনে আছি বলে বেতন বন্ধ করার হুমকিও পেয়েছি। জেলাশাসক, মহকুমাশাসকরা ডেকে মিটিং করে বলেছেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকল্প বোঝাতে হবে। জোর করতে হবে। যাতে ভুল না বোঝে। আমি বলেছি কয়লাখনি চাই না। সার্ভে করব না। আপনারা পারলে ধরনা মঞ্চে গিয়ে একথা বলুন। তারপরই আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নেয়।' আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা এলাকা ছেড়ে নারাজ সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।

publive-image
জমি ছাড়তে নারাজ দেউচার আদিবাসীরা। ছবি পার্থ পাল

এশিয়ার বৃহত্তম কোল ব্লক দেউচা-পাচামি। ইতিমধ্যে কয়েকজনের হাতে নিয়োগপত্র ও ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্য সরকার। মহাসভার সহসম্পাদক ঢোলকাটা গ্রামের জগন্নাথ টুডু বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এসে মনুষের সঙ্গে কথা বলুক। এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিনিধি এখানে আসেনি। বরং ভয় দেখানো হচ্ছে, হুমকি দেখানো চলছে। জোর করে জমি নিতে চাইছে। আমাদের সমাজটা একটা পরিবারের মতো। পরিবারের ওপর যাতে কোনও অত্যাচার না হয় সেদিকে নজর রাখতে তো হবে।' আন্দোলনকারীদের বক্তব্য আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে। এই পরিবেশ থাকবে না। আদিবাসী পাহার-জঙ্গলে থাকতে ভালবাসে। এই পরিবেশ ছাড়তে চাইছে না। গণেশের কথায, 'প্রকল্প এলাকার ৩৬-৩৭ গ্রাম রয়েছে। ৩০হাজার পরিবার আছে। প্রায় সব গ্রামের লোকই আমাদের সঙ্গে আছে। মূলত এখানে জমি রয়েছে, বাইরে থাকে। তাঁরাই চাকরি চাইছে। এখানকার যুবকরা চাকরি চাইছে না। কোনও রাজনৈতিক দলকে ভরসা করব না। জঙ্গলে চড়কা পুঁতেছি।'

Mamata Banerjee Birbhum Deucha-Panchami West Bengal
Advertisment