একের পর এক হিংসার ঘটনায় অশান্ত হয়েছে দিল্লি। প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। সেই আগুনের আঁচেই আটকা পড়েছিল বাংলার শ্রমিকেরা। গত কয়েকদিনে চলা দিল্লির হিংসাত্মক ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল সেই সব শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবার। অবশেষে সেই ভয় কাটিয়ে এবার ঘরের ছেলেরা ফিরল ঘরে। বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর সহায়তায় শুক্রবার গভীর রাত থেকেই মুর্শিদাবাদের নওদায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন শ্রমিকের দল।
আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসায় বেনজির দৃশ্য, মন্দির পাহারা দিলেন মুসলিমরা, মসজিদে হিন্দু
এদিন মুর্শিদাবাদে নিজের বাড়িতে বসে সেই দুঃস্বপ্নকে ফিরে দেখতে গিয়ে কালাম শেখ জানিয়েছেন যে এক সপ্তাহ আগেও যে মহল্লায় কর্মব্যস্ততার মধ্যে তাঁরা দিন কাটাতেন সেখানে কয়েকদিন ধরে তাঁরা গৃহবন্দি হয়ে ছিলেন। খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় দু’দিন কেবল জল খেয়েই রাত দিন গুজরান করেছেন তাঁরা। নিজের বাড়ি ফিরে নওদার মেহারিয়া এলাকার শ্রমিক মহম্মদ কালাম বলেন, "জেলার অনেক শ্রমিক দিল্লিতে কাজ করেন। তাঁরা কী অবস্থায় রয়েছেন কে জানে। আমরা গণ্ডাচক এলাকায় থাকতাম। বেশ কয়েক বছর ধরেই দিল্লি যাচ্ছি। সবাই এখানে মিলেমিশে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে এমন হবে ভাবতে পারিনি। এলাকার কোনও দোকান খোলা নেই। অধিকাংশ দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় খুব আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। ফোনে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তবে আমাদের ঘরে কেউ আক্রমণ করেনি। সবকিছু বাইরে হয়েছে। সংঘর্ষ থামার পর পুরো এলাকায় শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। পুলিশ এলাকার দখল নেয়। তারাই আমাদের ঘর থেকে উদ্ধার করে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েছে। আগে বাড়ি ফেরার পর দিল্লি যাওয়ার জন্য মন ছটফট করত। এবার যে ছবি চোখের সামনে দেখলাম তাতে দিল্লিতে আর যাব কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে"।
আরও পড়ুন: ‘আসল মুখোশ খুলে গিয়েছে আপনার’, জাভেদ আখতারকে তোপ বাবুলের
প্রসঙ্গত, জেলা থেকে দিল্লিতে গিয়ে কেউ শ্রমিকের কাজ করছেন ১০ বছর ধরে, কেউ আবার ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে থাকার সুবাদে রাজধানীর রাজপথ তাঁদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে চলা দিল্লির হিংসাত্মক পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে সকলেই এখন ফিরতে চাইছেন মুর্শিদাবাদে তাঁদের গ্রাম নওদায়।
দিল্লিতে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান তিনি বলেন, "জেলার ছেলেদের দিল্লিতে আটকে থাকার কথা জানতে পারি। তারপরই আমি আমার দলীয় কর্মীদের সক্রিয় করি। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে কথা বলে তাঁদের উদ্ধারের জন্য বলি। তারপরেই পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়"। এদিকে ঘরের ছেলেরা ঘরে ফেরা শুরু করতেই এলাকায় এখন স্বস্তির পরিবেশ। ট্রেন ধরায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন তাঁদের পরিবারের লোকজনও। শ্রমিক ইমামুল ইসলাম বলেন," আমরা আস্তে আস্তে দিল্লি ছেড়ে নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ ফিরে আসতে চাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা কেউ এখন আর ওখানে যেতে চাইনা"।