Advertisment

শব দাহ করতে ভাগীরথীর বিপদসংকুল পথই ভরসা

নদীর নিচ থেকে উপরে শ্মাশানে পৌঁছনোর সিঁড়ি ভেঙে পড়ায় মৃতদেহ নিয়ে উপরে ওঠা বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি পথ দিয়ে চলার সামিল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বছরখানেক আগের ওড়িশার কালাহান্ডির দানা মাঝির কথা হয়ত অনেকেরই মনে আছে। মৃতা স্ত্রী আমঙ্গের দেহ সৎকার করতে কাঁধে নিয়ে প্রায় বারো কিলোমিটার পথ হাঁটতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মুর্শিদাবাদে ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের পুরোপুরি তেমনটা না হলেও, সমস্যা সেই দেহ সৎকারেরই। মরেও যেন শান্তি নেই।

Advertisment

ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের একাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের কারোর শবদাহ করার সময় হলেই শীত হোক কিংবা বর্ষা, অশেষ নাকাল হতে হয় সবসময়। কারণ জঙ্গিপুর বাদ দিলে ভাগীরথী নদীর অববাহিকার প্রায় ৫০ কিমি এলাকা জুড়ে বাকি যে দুটি বৈদ্যুতিক চুল্লি বিশিষ্ট শ্মশান রয়েছে, সেগুলি ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে। ফলে নদীর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের মৃতদেহ দাহ করতে গিয়ে নিত্যদিন হিমশিম খাচ্ছেন তাঁদের পরিজন।

আরো পড়ুন: গরুমারায় খড়্গবিহীন গণ্ডারের মৃতদেহ, আশঙ্কা পোচিংয়ের

publive-image পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের ভরসা বলতে নদীপথ

পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের শ্মশানে পৌঁছতে হলে ভরসা বলতে সেই নৌকো করে দীর্ঘ জলপথ পেরানো। সেক্ষেত্রে অভিযোগ, এই অবস্থায় জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার অন্তর্গত জিয়াগঞ্জ শ্মশানে ভাগীরথী নদী বেয়ে যে সিঁড়ি রয়েছে, তা দিয়ে শবদেহ নিয়ে উপরে উঠতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় মানুষজনকে, আবার সেই ভাঙাচোরা সিঁড়ির আশপাশ ভরে উঠেছে জঙ্গলেও। অথচ সেদিকে নজর নেই কারোর।

তবে এই ব্যাপারে আশার কথা শোনাচ্ছেন জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ (মনু)। তিনি বলেন, "ওই এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা পুরসভা করেছে। শুধু তাই নয়, পুরসভার নদীপাড়ের পশ্চিম দিকে আজিমগঞ্জ শহরেও দ্রুত বৈদ্যুতিক চুল্লির সুবিধা মানুষজন খুব শীঘ্রই পাবেন এবার।"

আরো পড়ুন: মায়ের মৃতদেহ আগলে কত দিন? রবিনসন স্ট্রিটের ছায়া সল্ট লেকে

জিয়াগঞ্জ শ্মাশানের উপর নির্ভর করেন ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের পুরসভার আজিমগঞ্জ সহ মুকন্দবাগ, কিরীটেশ্বরী, ডাহাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও সাগরদীঘি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা। দুর্গম পথ পেরিয়ে মৃতদেহ নিয়ে তাঁরা যখন ভাগীরথী পেরিয়ে জিয়াগঞ্জ শ্মশানে উঠতে যান, তখন ভীষণ বিপদের মুখে পড়েন। নদীর নিচ থেকে উপরে শ্মাশানে পৌঁছনোর সিঁড়ি ভেঙে পড়ায় মৃতদেহ নিয়ে উপরে ওঠা বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি পথ দিয়ে চলার সামিল। কদিন আগে মৃতদেহ নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে মৃতদেহ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে নদীর জলে পড়ে গিয়ে অশেষ দুর্গতি হয় জনৈক পরিবারের।

এদিকে সিঁড়ির পাশ দিয়ে গভীর জঙ্গল গড়ে ওঠায় শ্মশানে ভয়ঙ্কর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তার উপর আছে সাপখোপের উপদ্রব। তাতেও স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ জমেছে বাসিন্দাদের মধ্যে। এই ব্যাপারে পুরাডাঙ্গার বাসিন্দা রতন বিশ্বাস, পাটকেলডাঙ্গার বিকাশ সাহারা এক জোটে বলেন, "এমনিতেই আত্মীয় বিয়োগ নিয়ে পরিবারের মধ্যে মানসিক কষ্ট থাকে। তার উপর শ্মশানের এই দুর্ভোগের ফলে সেই যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে ওঠে। তারপর শ্মশানের পুরকর্মীদের নানান বায়নাক্কায় দিশাহারা হন সাধারণ মানুষ। দ্রুত এই যন্ত্রণা লাঘব হওয়া দরকার।"

Murshidabad
Advertisment