Advertisment

'জয় শ্রীরাম' না বলায় বেদম মার, অভিযোগ এবার ক্যানিং লোকালে!

জিআরপি-র এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এদিন জানান, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জিআরপি-র দাবি, সিটে বসা নিয়ে গোলমাল শুরু হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
forced to say jai shri ram

প্রহৃত শাহরুফ হালদার

'জয় শ্রীরাম' বলতে রাজি না হওয়ায় সংখ্যালঘুদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল এবার এই রাজ্যেও। তাও খোদ কলকাতার বুকে!

Advertisment

গত ২০ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরের ট্রেনে ক্যানিং থেকে শিয়ালদহে আসছিলেন কয়েকজন মুসলিম যুবক। ওইদিনই মধ্য কলকাতায় একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মসূচি ছিল। হিন্দু সংহতি নামে ওই সংগঠনের কয়েকশো কর্মী বিভিন্ন স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরেই তাঁরা ওই যুবকদের উদ্দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিচ্ছিলেন। ঢাকুরিয়া পেরনোর পর তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সরাসরি কটাক্ষ করা হয়। এরপর 'জয় শ্রীরাম' বলতে জোর করা হয়। ওই সংখ্যালঘু যুবকেরা রাজি না হওয়ায় তাঁদের উপর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মীরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। জিআরপি-র কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে ওই যুবকেরা জানিয়েছেন, পার্ক সার্কাস স্টেশন আসা পর্যন্ত একটানা মারধর করা হয় তাঁদের। পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্থানীয়দের সাহায্যে তাঁরা পার্ক সার্কাসে নেমে পড়েন।

আরও পড়ুন, ফেসবুকে অভিমান উগরে দিলেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন

হিন্দু সংহতির পাল্টা দাবি, ট্রেনে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দেওয়ার বিরোধিতা করছিলেন ওই যুবকেরা। সেখান থেকেই বচসা ও হাতাহাতির সূত্রপাত। পার্ক সার্কাসে ট্রেন থেকে নেমে তাঁরা হিন্দু সংহতির কর্মীদের দিকে পাথর ছোড়েন। তাতে একজন আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ।

বাসন্তী চুনাখালির বাসিন্দা শাহরুফ হালদার আরামবাগের এক মাদ্রাসায় কর্মরত। তাঁর কথায়, "আমরা বেশ কিছু মুসলিম ছেলে ক্যানিং থেকে ট্রেনে উঠেছিলাম। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগে মাথায় হিন্দু সংহতি লেখা গেরুয়া ফেট্টি পরা অনেকে কামরায় উঠে পড়ে। ট্রেনের জানলায় গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় মুসলিমদের প্রতি অশ্রাব্য গালাগালি করে স্লোগান, খুনের হুমকি। বলা হয়, মুসলিম-মুক্ত ভারত তৈরি করা হবে। একজন আমাদের সামনে বসে পা দিয়ে বারবার শরীরে আঘাত করতে থাকে। আমরা সংখ্যায় মাত্র দু-তিন জন ছিলাম। তাই কিছু বলতে পারি নি। দীর্ঘক্ষণ এমন হেনস্থা চলে। যাদবপুর ঢোকার আগে থেকেই আমাদের মুখের সামনে পতাকা নেড়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল।"

আরও পড়ুন, ‘দিদি, জয় শ্রীরাম’, অনলাইনে বিকোচ্ছে এই টি-শার্ট

ওই কামরায় আরেক যাত্রী সরবেড়িয়ার মহম্মদ নইম লস্কর বলেন, "আমরা তিন ভাই কলকাতায় যাচ্ছিলাম। যাদবপুর পেরোতেই আমাদের বলা হয়, এই রকম লুঙ্গি পরে দাড়ি রেখে রাস্তায় বেরোতে লজ্জা করে না! আমরা বলি, লজ্জা কেন করবে! এরপরই ওরা উত্তেজিত হয়ে যায়। গায়ে থুতু দেওয়া হয়। বলা হয়, 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিতে হবে। আমরা রাজি হই না। এরপর ওরা আমাদের বেধড়ক মারতে থাকে। সিট থেকে নামিয়ে লাথি, ঘুষি, চড় মারে। মারের চোটে মুখ ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। চোখ ফুলে গিয়েছে।  বালিগঞ্জ স্টেশনে কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন নি। অবশেষে পার্ক সার্কাসে কোনওরকমে নামি। জানলা দিয়ে চিৎকার করছিলাম। তা শুনে স্টেশনের লোকজন আমাদের টেনে নামান। ওখানেই স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে। এরপর জিআরপি-র কাছে অভিযোগ দায়ের করি।"

যাবতীয় অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে হিন্দু সংহতি। সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, "ঘুটিয়ারি শরিফের লোকজন আমাদের কর্মীদের জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে বাধা দিচ্ছিল। আমাদের কর্মীরা তা প্রতিরোধ করেছে। বরং ওরাই পার্ক সার্কাসে নেমে রেললাইনের পাথর ছুড়ে মেরেছে। তাতে সুপ্রকাশ মন্ডল নামে তালদির বাসিন্দা আমাদের এক কর্মীর হাতে আঘাত পেয়েছে। ওই মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে আমরা জিআরপি-র কাছে অভিযোগ করেছি।"

আরও পড়ুন, গান্ধীহত্যা বিতর্ক সত্ত্বেও মহাত্মার ‘স্বপ্ন পূরণে’ আরএসএস

জিআরপি-র এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক এদিন জানান, তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জিআরপি-র দাবি, সিটে বসা নিয়ে গোলমাল শুরু হয়। পরে তা অন্য কোনও দিকে বাঁক নিয়েছিল কিনা তা তদন্তসাপেক্ষ।

দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায় বলেন, "এই হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুদের কলঙ্ক। এরা তালিবানের মতো ভয়ঙ্কর শক্তি। মানুষকে জোর করে, ভয় দেখিয়ে 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করা হলে তা যে আসলে রামের অপমান, তা বোঝার ক্ষমতা এদের নেই। তবে বাংলার মানুষ সর্বশক্তি দিয়ে এই মৌলবাদীদের প্রতিরোধ করবেন।"

সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের কথায়, "বাংলায় এসব ছিল না। বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের বিষাক্ত শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। আর এদের সার-জল দিচ্ছে তৃণমূল। এই হিন্দু সংহতি একসময় তৃণমূলের হয়ে ভোট করিয়েছিল। এখন শ্রীরামের নাম নিয়ে সন্ত্রাস করছে। রাজ্যটাকে বাঁচাতে হলে যে করে হোক এদের আটকাতে হবেই। আমরা বামপন্থীরা আপ্রাণ সেই চেষ্টা করব।"

tmc bjp
Advertisment