Malda Communal Harmony: মুখে হরিনাম সংকীর্তন, আর খোল-করতাল বাজিয়ে এক বৃদ্ধ হিন্দুর মৃতদেহ শ্মশানে সৎকার্যের জন্য নিয়ে গেলেন এলাকার মুসলিম যুবকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈষ্ণবনগর থানার শোভাপুর-পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হাজিপাড়া এলাকার এমন ঘটনায় সম্প্রীতির বার্তা উঠে এসেছে।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের বক্তব্য, অসহায় ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কারণ, এই গ্রামে একমাত্র হিন্দু বলতে ওই পরিবারটি ছিল। তাদের সঙ্গে সকলের মেলামেশা খুবই ভালো ছিল। তাই ওই অসহায় পরিবারের জন্য এদিন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় যুবকেরা পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার আগে বাঁশের চাঙি দিয়ে তার ওপর কাগজের রঙিন তোরন করেন এলাকার যুবকেরা। এরপরই এদিন দুপুরে নিকটবর্তী শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয় ওই বৃদ্ধের দেহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম লক্ষী রবিদাস (৮১)। পেশায় দিনমজুর ওই বৃদ্ধ বার্ধক্য জনিত কারণে বৃহস্পতিবার ভোররাতে বাড়িতেই মারা যান। ওই বৃদ্ধের দুই মেয়ে সাত সকালেই বাবার বাড়িতে এসে পৌঁছান। এরপর গোটা পরিবার শোকার্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু অসহায় ওই পরিবারের পক্ষে মৃতদেহ শ্মশানের যাওয়ার জন্য লোকবল ছিল না। তখনই এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা পাশে এসে দাঁড়ান। ওই বৃদ্ধকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার এবং সৎকার্যে যাবতীয় খরচা তারাই বহন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সামিম শেখ, মিরাজ আলি, ফিরোজ শেখ বলেন, লক্ষ্মী রবিদাসের পরিবারটি অত্যন্ত ভালো। এতদিন ধরে গ্রামে বসবাস করছি, কোনদিন ওদের খারাপ আচরণ এবং দুর্ব্যবহার দেখিনি। লক্ষীবাবুর অনেক বয়স হয়েছিল। এদিন ভোররাতে বার্ধক্যজনিত কারণেই মারা যান তিনি। পরে তার আত্মীয়-স্বজনেরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে থাকেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অসহায় ওই পরিবারটির পাশে আমরাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। পেশায় দিনমজুর ছিলেন লক্ষ্মী রবিদাস। বয়সের ভারে এখন তিনি আর কাজ করতে পারতেন না। তার দুই মেয়ে বাইরে থাকে। ঘটনার খবর পেয়ে এদিন তাঁরা এসেছেন। কিন্তু এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকেরা রীতিমতো ছেলের ভূমিকা নিয়েই ওই বৃদ্ধের মৃতদেহ নিকটবর্তী শ্মশানে নিয়ে গিয়ে সৎকার্য করেছেন।
উল্লেখ্য, গত দুই মাস আগে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান এলাকায় দুষ্কৃতীদের হামলায় শতাধিক মানুষ গঙ্গা নদী পেরিয়ে এই বৈষ্ণবনগর এলাকার একটি সরকারি স্কুলের আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেই সময় বিরোধীরা সাম্প্রদায়িক গোলমালের উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠে। কিন্তু এই বৈষ্ণবনগরেই আবারও এমনই সম্প্রীতির ঘটনায় রীতিমতো বিরোধীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বৈষ্ণবনগরের তৃণমূল বিধায়ক চন্দনা সরকার বলেন, সম্প্রীতির যে বাংলা সেটা আবারও প্রমাণিত হলো। বিরোধীরা যতই ভেদাভেদের রাজনীতি করুক না কেন, এখানে সেটা হবে না। এদিন হাজি পাড়ার বাসিন্দাদের এমন কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।