মমতার সুরেই এবার অভিষেক বিজেপির নবান্ন অভিযানে হিংসা-অশান্তি নিয়ে কড়া ভাষায় তোপ দাগলেন। বুধবার দুপুরেই পূর্ব মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে নবান্ন অভিযান নিয়ে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলে গুলি চালাতে পারত। কিন্তু সংযম দেখিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে পুরোটাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিকেলেই আরও কড়া শোনাল ভাইপো অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে।
মমতার মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসএসকেএম হাসপাতালে বিজেপির মারে জখম পুলিশকর্তা দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে দেখতে আসেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা পুলিশের এসিপির সঙ্গে দেখা করে তাঁর স্বাস্থ্যের খবর নেন। এর পর বাইরে এসে উডবার্ন ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে তোপ দাগা শুরু করেন।
অভিষেক বলেন, "আমি অফিসারকে কুর্নিশ জানিয়েছি। যেভাবে তিনি ধৈর্য আর সংযমের পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি তাঁকে স্যালুট জানিয়েছি। আমি যদি ওখানে থাকতাম তাহলে মাথায় শুট করে দিতাম। গুলি চালিয়ে দিতাম।" এদিন পুলিশের প্রশংসা ঝরে পড়ে অভিষেকের গলায়। বলেন, "চাইলে সাঁতরাগাছিতে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে বিজেপির ২০-২৫ জনকে শিক্ষা দিতে পারত। খেলা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু তা করেনি। যা হয়েছিল একুশে জুলাই, যা হয়েছিল সিঙ্গুর কিংবা নন্দীগ্রামে। কাল কিন্তু তা হয়নি। এটাই তো পরিবর্তন। পুলিশের সবথেকে বড় পরিবর্তন এটাই।"
অভিষেক আরও বলেন, "গণতান্ত্রিক ব্য়বস্থায় বিরোধী দল আন্দোলন করতেই পারে। তার মানে এই নয় যে গুন্ডামি, রাহাজানি করবে। জখম পুলিশ অফিসারের মাথায় হেলমেট ছিল বলে বেঁচে গিয়েছেন। না হলে প্রাণ সংশয় হত। সেকথা উনিও আমাকে বলেছেন।"
এদিন তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, "যাঁরা গুন্ডামি করল, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করল, পুলিশকে মারল তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিজেপি বুঝে গিয়েছে, আমরা আইন হাতে নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারি। বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা থাকবে কী করে মানুষের। যাঁরা গুন্ডামি করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় হাইকোর্ট সেদিকে আমাদের সবার নজর থাকবে।"
নবান্ন অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয় গঙ্গার দুপাড়ে। হাওড়ার মতো অশান্ত হয় কলকাতাও। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিককে বাঁশ, পতাকার লাঠি, কিল-ঘুসি-লাথি মারছে বিজেপি কর্মীরা। রাস্তায় ফেলে মারা হয়েছে, পাথর ছোড়া হয়েছে শরীরে। এবার পুলিশ আধিকারিককে মারধরের ঘটনায় খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ।
জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়কে একা পেয়ে রাস্তার মধ্যে বেধড়ক মারধর করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান তিনি। তাঁকে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাত ভেঙেছে তাঁর। তাঁকে মারধরের ঘটনায় খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক মামলা রুজু হয়েছে।
আরও পড়ুন পুলিশকর্তাকে বেধড়ক মারধর বিজেপি কর্মীদের, খুনের চেষ্টার মামলা রুজু কলকাতা পুলিশের
পুলিশ আধিকারিককে মারধরের ভিডিও টুইট করে তৃণমূল কংগ্রেস। টুইটে তৃণমূলের কটাক্ষ, "রাখিবন্ধনের দিন পুলিশকে রাখি পরান বিজেপি নেতা-নেত্রীরা এবং অন্য দিনে এই ভাবে প্রাণঘাতী হামলা করেন। বিজেপির দ্বিচারিতার মুখোশ খুলে পড়েছে।"
তবে এখন প্রশ্ন হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনের কেউ নন। মন্ত্রিসভার সদস্যও নন। সেক্ষেত্রে কোনও মন্ত্রীর বদলে তিনি আহত পুলিশ আধিকারিককে দেখতে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, তাহলে কি প্রশাসনেও প্রভাব বাড়ছে অভিষেকের? এদিকে, নবান্ন অভিযানে গন্ডগোলের অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের দুপুরে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়।