Advertisment

সন্টুর মৃত্যুতে মর্মাহত, স্মৃতি হাতড়াচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের নওপাড়া

বাবা বজবজে চলে এলেও নাড়ির টান ছিন্ন করেননি সুব্রত। মন্ত্রী হওয়ার পরও একাধিকবার গিয়েছেন জন্মভিটেতে। গ্রামে পানীয় জলসংকট দূরীকরণেও তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য।

author-image
Joyprakash Das
New Update
nadanghat of east burdwan mourning for loss of Subrata mukherjee

নওপাড়ায় বাল্যবন্ধুর ছবিতে মাল্যদান শামসুল শেখের।

বর্ষীয়াণ রাজনীতিক তথা রাজ্য়ের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকাতুর জন্মস্থান নওপাড়া। পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটে নওপাড়ায় মন্ত্রীর বাল্যবন্ধুরা অতীত স্মৃতি হাতড়ে বেরাচ্ছেন। কারও মনে পরছে পেয়ারা চুরি করতে গিয়ে বোলতার কামড়া খাওয়ার কথা, কেউ বলছেন হাডুডু খেলার কথা।

Advertisment

নাদনঘাটের নওপাড়ায় সুষমা সুন্দরী প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাবা অশোক মুখোপাধ্যায় ছিলেন হাইস্কুলের শিক্ষক। পরবর্তীতে বজবজে ট্রান্সফার হলে সপরিবারে মুখোপাধ্যায় পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে যান সেখানে। তবে নারির টান ছিন্ন করেননি সন্টু। গ্রামের বন্ধুরা তাঁকে এই নামেই ডাকতো। রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পরও একাধিকবার গিয়েছেন নওপাড়া। গ্রামে গিয়েই প্রথমে পুজো দেন সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মন্দিরে। জলপ্রকল্প করে গ্রামে পানীয় জলের সংকট দূর করার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা দেখছেন বাল্যবন্ধুরা।

আরও পড়ুন- ‘পারলে, ও-ই পারবে!’, মমতাকে লোকসভায় পাঠিয়েই ছেড়েছিলেন সুব্রত

চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত গ্রামেই পড়াশুনা করেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তখনকার বন্ধুরা তাঁর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল। শামসুল শেখ বলেন, 'ও আমাদের গ্রামের ছেলে, পাড়ার ছেলে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে পড়েছি। গ্রামের সেই স্কুলটা ভেঙে গিয়েছে। সরে গিয়ে অন্যত্র স্থাপিত হয়েছে। এখনও মনে পরে, আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম। হাডুডু খেলতাম। ও ভাল খেলতো। সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজো দিয়ে গ্রামে ঢুকতো।'

কাল রাতে মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বৃদ্ধ শামসুল বলেন, 'আমরা খুবই মর্মামত। ওনার শূন্যস্থান পূরণ হবে না। আমাদের জলের কষ্ট থেকে রেহাই দিয়েছেন।' তিনি জানান, মন্ডা খেতে খুব ভালবাসতেন। পূ্র্বস্থলী ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক জানিয়েছেন, গ্রাম থেকে হাতে ভাজা মুড়ি সুব্রতবাবুর জন্য় কলকাতায় নিয়ে যেত হাবিব।

আরও পড়ুন- প্রয়াত সুব্রতকে শ্রদ্ধা নয়, আক্রমণের নামে বিতর্কিত পোস্ট রূপার

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক বন্ধু তিনকরি বৈরাগ্য স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, 'সন্টু কলকাতায় গিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় হয়ে গেল। আমরা একসঙ্গে প্রাইভেট পড়তাম। এখনও মনে আছে, একবার সুব্রত কাঁদায় পড়ে গিয়েছিল। গা-ময় কাদা। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুকুরে চান করিয়েছিলাম। তারপর মুড়ি-দুধ খেয়েছিল। কাপড়-জামা ভিজে গিয়েছিল। বুহ কষ্টে তা শুকানো হয়েছিল। ওর বাবা খুব রেগে গিয়েছিল।'

আর একটা মজার ঘটনা এখনও মনে পরে, বলেন তিনকরিবাবু। তিনি বলেন, 'আমরা গ্রামে দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াতাম। একবার সুধা চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে পেয়ারা চুরি করার সময় সন্টু পড়েও গিয়েছিল। এছাড়া পেয়ারা পারতে গিয়ে বোলতায় কামড় দিয়েছিল। সেই সব কথা আজ খুব মনে পড়ছে।' তাঁর কথায়, 'সন্টুর মৃত্যুতে আমি শোকে ব্যথিত। শরীর খারাপ হচ্ছে। দেহ ভারি ভারি হচ্ছে।' অনেকেই জানেন সুব্রতবাবুর জন্ম স্থান বজবজ। আদপে বাবার চাকরিসূত্রে সেখানে গিয়েছেন বর্ধমান থেকে। তিনকরিবাবু বলেন, 'মনে পরে, একবার বানে ঘরদুয়ার পড়ে যায়। ওর বাবা সব গুটিয়ে নিয়ে কলকাতায় চলে গেল। আমার চোখে অস্ত্রোপচারের জন্য অর্থ সাহায্য় করেছিল দু'বছর আগে। বলেছিল আমার ওখানে চলো চোখের চিকিৎসা করিয়ে দেব।'

সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজেদের চাষের জমিটাকে বলতেন আষাঢ়ে। শ্যামসুন্দর হাজরা বলেন, 'আমরা বংশ পরম্পরায় চাষ করছি। গ্রামের লোক সবাই ওনাকে খুব ভালবাসতেন।' এই জন্মভিটেতে সুব্রতবাবুর বাবা অশোক মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এদিন জানিয়েছেন, নওপাড়ায় এবার মূর্তি বসবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

আরও পড়ুন- ‘প্রিয়দা থাকলে হয়তো কংগ্রেসে ফিরতাম,’ সুব্রতর অজানা কথা

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Subrata Mukherjee East Burdwan
Advertisment