মুর্শিদাবাদের নওদায় তৃণমূল নেতা খুন নিয়ে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল চরমে উঠল। দলের নেতাকে খুনের ঘটনায় তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তৃণমূলেরই নদিয়া জেলা পরিষদ সদস্যার দিকে আঙুল তুলেছেন। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে খুনের ঘটনায় মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তৃণমূলের বিধায়ককেই কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়াচ্ছেন অভিযুক্ত।
বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের নওদায় খুন হন নদিয়ার তৃণমূল নেতা মতিরুল ইসলাম বিশ্বাস। নিহতের স্ত্রী নদিয়ার থানারপাড়ার নারায়ণপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান। নওদা থেকে করিমপুরে ফেরার সময় দুষ্কৃতীরা তাঁর পথ আটকায়। তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। বোমা-গুলির আঘাতেই মৃত্যু হয় নদিয়ার নারায়ণপুরের ওই তৃণমূল নেতার। শাসকদলের নেতা খুনের পিছনে দলেরই গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে বলে জোর জল্পনা ছড়ায়।
শুক্রবার বেলা বাড়তেই এই অভিযোগে কার্যত সিলমোহর পড়ে যায়। খুন নিয়ে শাসকদলের নেতাদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে যায়। তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা এই খুনে নদিয়া জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য টিনা ভৌমিক সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে টিনা পাল্টা খুনের পিছনে দায়ী করেছেন তাপস সাহাকেই।
নওদায় তৃণমূল নেতা খুনে অধরা দুষ্কৃতীরা। যদিও এই খুনে নওদায় তৃণমূল ব্লক সভাপতি ও নদিয়া জেলা পরিষের সদস্যার নামে এফআইআর করা হয়েছে। তৃণমূল ব্লক সভাপতি সফিরুদ্দিন জামাল শেখ ও নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্যা টিনা ভৌমিক সাহার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। শাসকদলের দুই নেতা-সহ নওদা থানায় এখনও পর্যন্ত মোট ১০ জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। প্রথমে সিবিআই তদন্তের দাবি করেও পরে সুর বদলেছেন নিহতের স্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সিআইডি তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।
আরো পড়ুন- ‘রোজ বোমাবাজি-খুন, দুষ্কৃতীরা সব তৃণমূলের নেতা’, নওদার খুন নিয়ে কটাক্ষ দিলীপের
এদিন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা বলেন, ''নারায়ণপুর ১ নং ও নারায়ণপুর ২ নং অঞ্চল। একটির দায়িত্বে মিঠু আর একটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন মতিরুল। এদেরকে টিনা সাহা বিজেপির হয়ে ভোট করতে বলেছিল। এক বছর ধরে এদের মারার ষড়যন্ত্র করছে। সিপিএম, বিজেপি ও তৃণমূলের একাংশ এদের মারার পরিকল্পনা করেছিল। পরিকল্পনা করে ছক করে ওকে মারা হল। টিনা সাহাই এই খুনের পিছনে রয়েছেন।'
যদিও দলেরই বিধায়কের তোল এই বিস্ফোরক অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন নদিয়া জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যা টিনা সাহা ভৌমিক। তিনি এদিন বলেন, ''বিধায়কের চাপে নিহতের স্ত্রী বলতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজনৈতিকভাবে পেরে না উঠে আমার বিরুদ্ধ প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। এই ঘটনার পিছনে তাপস সাহা থাকতে পারেন। তাপস সাহার কয়েকজন লোকও থাকতে পারেন। তবে উনি প্রত্যক্ষভাবেই এর পিছনে রয়েছেন।''
আরও পড়ুন- এক ফ্রেমে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী ও কয়লা মাফিয়া, বিজেপিকে বিঁধলেন অভিষেক
তবে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র অবশ্য এই খুনের পিছনে দলের কোন্দল দেখছেন না। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই এই খুন বলে সন্দেহ করছেন তিনি। এদিন মহুয়া মৈত্র বলেন, ''দলের কোন্দল নয়। ব্যক্তিগত শত্রুতায় খুন। তদন্ত চলছ। পুসিশের উপর ভরসা আছে। দোষীরা ধরা পড়বে। যারা মেরেছে তারা ভাড়াটে খুনি বলেই মনে করা হচ্ছে। এটা ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল।'