Advertisment

Exclusive: কেষ্টহীন বীরভূমে বিরোধীদের 'হোয়াইট-ওয়াশ' করবে তৃণমূল? অকপট নানুরের কাজল শেখ

দুর্নীতি থেকে বাহুবলী রাজনীতির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে? একান্ত সাক্ষাৎকারে সব নিয়েই নিজের মতামত জানিয়েছেন কাজল।

author-image
Joyprakash Das
New Update
nanoor tmc leader kajal shaikh interview before panchayat election 2023 , পঞ্চায়েত ভোটের আগে নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখের সাক্ষাৎকার

এবারের পঞ্চায়েতের প্রার্থী কাজল শেখ। অলঙ্করণ- প্রত্যুষ রায়

বছর পেরিয়ে যেতে চলেছে বীরভূমের 'মুকুটহীন সম্রাট' গরুপাচার কাণ্ডে তিহার জেলে বন্দি। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল জলবন্দি হওয়ায় কোর কমিটি এখন জেলার সংগঠন পরিচালনা করছে। মাথার ওপর রয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে কিছু দিন বসে গেলেও এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম চষে বেরাচ্ছেন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কাজল শেখ। নিজেও জেলা পরিষদের প্রার্থী। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে নানা প্রশ্নের খোলামেলা- সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন কাজল শেখ।   

Advertisment

প্রশ্ন- প্রচারে বেরিয়ে মানুষের মনের অবস্থা কি বুঝতে পারছেন?

কাজল শেখ- তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনও দল কোনও জায়গায় কোনও আসনে জিতবে না। সব তৃণমূল কংগ্রেসই জিতবে।

প্রশ্ন- অনেক জায়গায় গোঁজ প্রার্থীরা দলের প্রতীক পেয়েছে, যাঁরা প্রার্থী ভেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল তাঁরা নির্দল হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের বিধায়করা কেউ কেউ এই ধরনের অভিযোগ করছেন।

কাজল শেখ- যাঁদের টিকিট দেওয়া হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বাংলা জুড়ে নবজোয়ার কর্মসূচি করেছিল। সেই কর্মসূচিতে মানুষ যাঁদেরকে প্রার্থী করার জন্য ভোট দিয়েছে তাঁদেরকে দল প্রার্থী করেছে। সুতরাং এখানে তাঁরাই টিকিট পেয়েছে। সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। যাদেরকে মানুষ ভোট দিয়েছে তাঁরা প্রার্থী, সুতরাং হারবে-জিতবে তাঁদের ব্যাপার।

প্রশ্ন- তাহলে দলের যাঁরা বলছে ওই পদ্ধতি না মেনে বলছে…..

কাজল শেখ- দলের উর্দ্ধে কেউ নয়। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে। এবার রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি নতুন মুখ এসেছে। নবজোয়ার কর্মসূচির মাধ্যমে এসেছে। রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করে দেয়নি কে প্রার্থী হবে। মানুষই ঠিক করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে কে মানল, না মানল তাঁর ব্যাপার।

প্রশ্ন- বীরভূমে নতুন মুখ কত?

কাজল শেখ- এখানেও ৫০ শতংশের বেশি নতুন মুখ আছে। এখানেও মানুষ যাকে চেয়েছে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে।

প্রশ্ন- বীরভূমের অনুব্রত মন্ডল জেলে রয়েছে। লোকে বলছে বীরভূমে তৃণমূল নেতৃত্ব কাজল শেখের গুরুত্ব বেড়েছে। শেষ কথা হতে যাচ্ছে কাজল শেখ। কি বলবেন?

কাজল শেখ- আমার রাজনীতির জীবন ৩০ বছর। শুরু থেকে দল করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চলার পথের আদর্শ অনুসরণ করে চলি। যে ভাবে দল বলে সেভাবে করি। এর আগে রাজনীতিতে ভোটে কখনও অংশগ্রহণ করিনি। এই প্রথম করছি। এর আগে অনেক সাংসদ, বিধায়কের ভোটে প্রচার করেছি, গ্রামপঞ্চায়েতে প্রচার করেছি। এখনও করছি। আমি ছাড়া বাকিদের হয়ে প্রচার করছি। তফাৎ আছে বলে আমি মনে করছি না। দু'চারদিন নিজের হয়ে পায়ে হেঁটে প্রচার করেছি। তারপর শুরু করে দিয়েছি অন্যের হয়ে প্রচার করার। স্বভাবতই কে কি ভাবে নিচ্ছে সেটা আমি বলতে পারব না। সেটা তাঁদের ব্যাপার।

প্রশ্ন- ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে আপনার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল? নানুরে আপনিই শেষ কথা।

কাজল শেখ- দেখুন নানুর নয়, সারা বাংলার মুখে শেষ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন। এই উন্নয়ন অর্থাৎ মানুষের জন্য যে পরিষেবার ব্যবস্থা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা দেওয়ার জন্য মানুষের বাড়ি বাড়ি যাই। এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি না থাকে তাহলে বাংলার বুকে তৃণমূল কংগ্রেস দলটা কেউ করবে নাকি। সুখ, দুঃখ, আপদ-বিপদে মানুষের পাশে থাকি। স্বভাবতই বসে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে, সেটাই হয়েছিল।

প্রশ্ন- আপনি বসে যাওয়াতে দলের ক্ষতি হয়েছিল…

কাজল শেখ- গদাধর হাজরা কোরাপ্টেড, তাও প্রমানিত হয়েছে। তিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। নানুরের মানুষ তথা বাংলার মানুষ রাজনীতি সচেতন মানুষ। বিজেপি এরাজ্যে এসে কোটি কোটি টাকা খরচ করেও এখানে জিততে পারল না। পর পর তিনবার বাংলার মসনদে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানুরের মানুষও রাজনীতি সচেতন। গদাধর হাজরা আসার পর মানুষের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করছিলেন তা মানুষ বুঝেছে। স্বভাবতই নানুরের মানুষ তাঁকে হারিয়ে দিয়েছে।

প্রশ্ন- প্রার্থী করাই তাহলে ভুল হয়েছিল?

কাজল শেখ- সেটা তো আমি বলতে পারব না। নানুরের মানুষ সঠিক জবাব দিয়েছে এটাই আমি বলব।

প্রশ্ন- ২০১৬ নির্বাচনে বহু বুথে তৃণমূলের এজেন্ট ছিল না..

কাজল শেখ- পাওয়া যাবে না তো। মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন। তাঁরা রাজনীতি বোঝেন। কোন মানুষকে জেতালে আমাদের উন্নয়ন হবে তা বোঝেন। এখন যে বিধায়ক আছেন তাঁকে জিতিয়েছেন। আবার বামফ্রন্টের বিধায়ক ছিল তাঁকে হারিয়েছেন।

প্রশ্ন- আপনার বাড়িতে তো ইতিহাস আছে। রাজনীতি করতে গিয়ে হারাতে হয়েছে আপনজনদের।

কাজল শেখ- আমাদের পরিবারের ৩ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাবা ও দুই দাদাকে। নানুরে ২০০০ সালে শহিদ হয়েছেন আমার দাদা বদরুজ্জামান ওরফে সাজু। চাকরি করতেন। বাড়িতে ছুটিতে এসেছিল। আমার আরেক দাদা শাহনাজকে খুন করার উদ্দেশে এসেছিল। শাহনাজ মরে গিয়েছিল ভেবে ফেলে পালাচ্ছিল, তখন এই দাদা বাড়ি থেকে বের হতেই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে লড়াই হয়। গুলি করে মারে বদরুজ্জামানকে। তারপর ২০০৩ সালে আমার মেজদা লবু শেখকে মারে। ২০০০ সালে দাদাকে যখন খুন করে তখন বাবার বুকে বোমা ছুড়ে মারে খুনীর দল। পরবর্তীতে বাবা মারা যায়। কাজল শেখের পরিবার অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে। এই লড়াই সংগ্রামের জন্য বীরভূমের মানুষ আমাদের পরিবারটাকে ভালবাসে। বাম আমলে এই গ্রামে ৮ জন রাজনৈতিক আক্রমণে খুন হয়েছে। এই গ্রামের নিরীহ, গরীব পরিবারগুলোর ওপর সীমাহীন অত্যাচার হয়েছে। এই কারণেই বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ এত বেশি। বামফ্রন্টের নাম শুনলে মাথা গরম হয়ে যায়।

প্রশ্ন- বীরভূমে কি একতরফা তৃণমূল জিতবে বলে আশা করছেন?

কাজল শেখ- কটা জিতবে সে বিষয়ে মন্তব্য করব না। মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবে। কিন্তু জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রামপঞ্চায়েতগুলি তৃণমূলের দখলে থাকবে।

প্রশ্ন- ভোট না হওয়ার আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। বীরভূমে কি হবে?

কাজল শেখ- যে বামফ্রন্ট আমার বাবা-দাদাদের মেরেছিল, যাঁদের মনোনয়ন দিতে এবার মানুষ বাধা দিয়েছিল তাঁদের আমি নিজে গাড়ি করে মনোনয়ন দিতে বিডিও অফিসে পৌঁছে দিয়েছি। বিজেপির যাঁরা ভয়ে আসছিল না তাঁদেরও মনোনয়ন দিতে নিয়ে গিয়েছি। এরপরেও যদি অভিযোগ করে তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। কোথাও ধমকানো, চমকানো হয়নি।

প্রশ্ন- বীরভূমে তৃণমূল থেকে কেউ কেউ কংগ্রেসে গিয়েছে। কোনও প্রভাব পড়বে?

কাজল শেখ- এত বড় জেলা বীরভূম কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ঘটনা তো ঘটবেই। এটা তো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় কারও পক্ষে। সব মানুষকে সন্তুষ্ট করাও সম্ভব নয়। সবাই তো জন্ম থেকে তৃণমূল করছে না। কেউ কংগ্রেস থেকে এসেছে, কেউ সিপিএম থেকে এসেছে। এত বড় পরিবার ঠোকাঠুকি তো হবেই। সবাই তো চাইবে টিকিট নেব, মেম্বার হব। সবাই কি পাবে? ৫০ শতাংশ নতুন মুখ প্রার্থী হয়েছে, বাকি ৫০ শতাংশ বাদ গিয়েছে তাঁরা তো ক্যারিশ্মা দেখানোর চেষ্টা করবে। সে তো হবেই। কেউ মূল স্রোতে থাকবে, কেউ  কেউ  অন্য স্রোতে যাবে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। রাজনীতিতে উত্থান-পতন তো আছেই।

panchayat election 2023 Birbhum kajal shaikh tmc
Advertisment