জেলা রাষ্ট্রীয় সম্মিলনীতে যোগ দিতে আসবেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। চারদিকে চাপা উত্তেজনা। ব্রিটিশ সেনারা ফাঁদ পেতে রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করার জন্য। তবে ইংরেজদের নিশ্চ্ছিদ্র ঘেরাটোপের ফাঁদ পেরিয়েই সুভাষচন্দ্র বসু এলেন সম্মিলনীতে। পরে জলপথে অতি গোপনে ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন তিনি।
সালটা ছিল ১৯৩৮-এর ৪ জুন। ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের বর্ষপূর্তির আগে স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী মাখন চন্দ্র কর্মকার। তাঁর বাবা প্রয়াত রামকমল কর্মকার ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় চলা একজন যোদ্ধা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। সেই সময়ে রামকমলবাবু কলেজ পড়ুয়া একজন যুবক। ইংরেজবাজার ব্লকের ফুলবাড়িয়া পঞ্চায়েতের নওঘরিয়া খেলার মাঠে ১৯৩৮ সালের ৪ এবং ৫ জুন সুভাষচন্দ্র বসুর ডাকে মালদহ জেলা রাষ্ট্রীয় সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই মূলত এই সম্মিলনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সম্মিলনী সফল করতে মাসখানেক আগে থেকে শুরু হয় প্রচার পত্র বিলির কাজ। প্রচার পত্রের নীচে ডানদিকে নিবেদক হিসেবে ছিল প্রয়াত শ্রী দেবেন্দ্রনাথ ঝায়ের নাম। 'রাষ্ট্রপতি সুভাষচন্দ্র বসু আসছেন সম্মিলনীতে যোগ দিতে' প্রচারপত্রে এমনই লিখে শুরু হয় বিলির কাজ। সেই প্রচার পত্রটি আজও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মাখন চন্দ্র কর্মকারের বাড়িতে পরম যত্নে সংরক্ষণ করে রাখা রয়েছে।
মাখনচন্দ্র কর্মকারের কথায়, ''আমার বাবা রামকমল কর্মকার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আদর্শেই জীবন কাটিয়েছেন। বাবার মুখে শুনেছিলাম উনি খুব কাছ থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে ক্ষণিক সময়ের জন্য দেখেছিলেন। বাবা বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় সম্মিলনীর প্রধান কর্তা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মালদহে এসে সেবারই প্রথম সম্মিলনীতে যোগ দিয়েছিলেন।''
তিনি বলেন, ''সময়টা ছিল ১৯৩৮ সালের ৪ জুন। দু'দিন থাকার কথা হলেও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৪ জুন মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্যই সম্মিলনীতে এসেছিলেন। ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে মালদহ থেকে জলপথে এখনকার বাংলাদেশে চলে গিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশ ছিল অখণ্ড ভারতেরই অংশ।''
আরও পড়ুন- জেলে পার্থ-অনুব্রত, জোড়া ফুলের শীতল ‘খেলা’ জমজমাট, বাজিমাতে কে এগিয়ে?
মাখনবাবুর কথায়, ''মালদহের নওঘরিয়া মাঠে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ওই সম্মিলনীর ডক দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের গড়ার ডাক দিয়েই ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার জন্য সেই সময় এক টাকা করে চাঁদা নিয়ে সদস্যপদ সংগ্রহ করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। আমার বাবা রামকমল কর্মকার ওই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে কাজ করেছিলেন। বাড়ি-বাড়ি প্রচার পত্র বিলি করেছিলেন। ব্রিটিশদের নিশানায় ছিলেন আমার বাবাও। কিন্তু উনি ধরা পড়েননি। গোপনে দেশের হয়ে কাজ করে গিয়েছেন।''
আরও পড়ুন- বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকেই জেরা CBI-এর, মেয়ের জন্য মন খারাপ অনুব্রতর
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী মাখনচন্দ্র কর্মকারের পরিবারে এখন ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী সকলেই রয়েছেন। স্বাধীনতা দিবস যখনই আসে তখনই বাড়ির কাঠের আলমারিতে সংরক্ষণ করে রাখা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সেই উপস্থিতির সম্মিলনীর প্রচার পত্র বারবার হাত বুলিয়ে নেন মাখনবাবু । মনে করেন তাঁর বাবার সেই সময়কার বিপ্লবী আন্দোলনের কথা। যা এখনও এই প্রচার পত্রে অমলিন এক স্মৃতি হয়েই রয়ে গিয়েছে।