একটা ধরনার বয়স ২১২ দিন। আরেকটা ধরনা চলছে ৩৯দিন। কেউ বাচ্চা কোলে নিয়ে ঝড়-বৃষ্টির মধ্য়ে মঞ্চ আগলে রেখেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে এসে এক পোশাকে, এক আধ-পেট খেয়ে মরানপন আন্দোলনের শরিক হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রার্থীরা। প্রতিশ্রুতি নয়, স্পটে থেকেই সরকারি নোটিফিকেশন চাইছনে তাঁরা।
২০১৯-তে টানা ২৯ দিন অনশন করেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি প্রার্থীরা। তারপর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। এরইমধ্য়ে এসএসসি নিয়োগে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তোলপাড় শিক্ষামহল। মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ২১২ দিন ধরে ধরনা-অবস্থানে বসে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আর প্রতিশ্রুতি নয়, এবার ধরনা মঞ্চে বসেই নোটিফিকেশন চাইছেন তাঁরা। যতক্ষণ না সরকারি নোটিফিকেশন প্রকাশিত হচ্ছে ধরনা থেকে উঠবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
মালদার মতিউর রহমান। গান্ধীমূর্তির নীচে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের মূল দাবি মেধা তালিকাভুক্ত সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ করা। আমাদের সঙ্গে বঞ্চনা করা হয়েছে। ভুয়ো শিক্ষক পরীক্ষা দেয়নি, পাস করেনি বা মেধাতালিকায় একেবারে পিছনের দিকে আছে। তাঁরা বিভিন্ন ভাবে টাকার বিনিময়ে আজ শিক্ষকতা করছে। কিন্তু আজ আমরা মেধাতালিকায় থাকা সত্বেও এখনও স্কুলে যেতে পারিনি।'
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধরনা থেকে ওঠার কোনও প্রশ্নই নেই, জানিয়ে দিলেন মতিউর। তিনি বলেন, 'মুখ্য়মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন মেধাতালিকাভুক্ত প্রার্থীরা কেউ বাদ যাবে না। সেই নির্দেশ অন্যভাবে পালিত হয়েছে। মেধাতালিকা থেকে না নিয়ে বাইরে থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। গত ঈদের দিন সরাসরি কথা হয়েছে মুখ্য়মন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি কথা দিয়েছিলেন নিয়োগের। তারপর শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে আমাদের ৫২৬১ আসন বাড়ানো হবে বলেছেন। এখন আমরা নোটিফিকেশন পাইনি। নোটিফিকেশন পেলে ধরনা মঞ্চ থেকে উঠে যাব।'
গান্ধীমূর্তির মতো রেড রোডের শুরুর মুখে মাতঙ্গিনী মাজরার মূর্তির নীচে ৩৯দিন ধরে ধরনায় বসে রয়েছেন আরেক দল আন্দোলনকারী শরীরশিক্ষা-কর্মশিক্ষা শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টিকে অবজ্ঞা করে ২বছর ৫মাস বয়সের সন্তান কোলে নিয়ে ধরনা মঞ্চে বসে রয়েছেন কলকাতা থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার দূরের মালদার গাজোলের তৃপ্তি কীর্তনিয়া। তৃপ্তির বক্তব্য়, দিনের পর দিন ঝড়-বৃষ্টির মধ্য়ে বাচ্চা নিয়ে ধরনায় বসে আছি। কাজে যোগ না দেওয়া পর্যন্ত ধরনা তুলব না। প্রদীপ মন্ডল, নিশিকান্ত পাত্র, মারিয়াম খাতুনরা স্পষ্ট জানিয়েছে নোটিফিকেশন না পাওয়া পর্যন্ত ধরনা চলবে। এখান বসেই কাউন্সিলিং চাইছেন তাঁরা।
নদিয়ার পলাশি থেকে ধরনা মঞ্চে যোগ দিয়েছেন মারিয়াম খাতুন। তিনি বলেন, 'ঝড়-জল-বৃষ্টির মধ্য়ে ধরনা চলছে। দাবদাহে রোজা পার করেছি। এখানেই ঈদ পালন করেছি। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই নিয়ে ৬বার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার অনস্পট কাউন্সিলিং চাই। অন স্পট কাজে যোগ দিতে চাই।' মারিয়ামের বক্তব্য়, 'প্যানেলভুক্ত হয়ে কেন চাকরি পাব না। হক পূরন না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।'
সম্প্রতি হাইকোর্টে এসএসসির গ্রুপ-সি নিয়োগে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের রিপোর্টে রাজ্য তোলপাড় হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে দুর্নীতি সামনে এসেছে। এসএসসি নিয়োগ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। সরকার শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নতুন ঘোষণা করলেও তার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না মহানগরের দুই ধরনা মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। না আঁচালে বিশ্বাস নেই, তাই প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে ধরনা চলবে অনির্দিষ্ট কাল।