রাজ আমলের রীতি মেনে মহানবমীতে দেবীজ্ঞানে নয় কুমারীর পুজো হল বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। এখানে নবমী তিথিতে নয় জন কুমারীকে দেবী দুর্গার নয়টি রূপে পুজো করা হয়ে থাকে। দশভুজার এই নয়টি রূপের মধ্যে অন্যতম কালিকা মালিনী, সুভগা, কব্জিকা,
কালসন্দর্ভা ও উমা। অন্যান্যবারের মতো এবারও কুমারী পুজো দেখার জন্য মঙ্গলবার সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়েছিল।
বর্ধমান রাজ পরিবারের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দির হল রাঢ়বঙ্গের ঐতিহাসিক মন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম। বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলা অঞ্চলে বাস করা চুনুরীদের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ঠি পাথরের অষ্টাদশী ভূজা দেবী মূর্তি বর্ধমানবাসীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পরিচিত। ১৭৪০ সালে রাজা কীর্তি চাঁদ অষ্টাদশী দেবী মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে সর্বমঙ্গলা নামেই দেবী পূজিত হয়ে আসছেন। পরবর্তীকালে রাজা মহতাব চাঁদ দেবীর মন্দির তৈরি করেন।
তবে এখন রাজাও নেই, নেই তাঁর রাজ্যপাটও। তা বলে দেবীর বন্দনায় কোনও খামতি নেই। বরং রাজ আমলের রীতি মেনেই এখনও পুজোর দিনগুলিতে নিষ্ঠার সঙ্গে সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজো হয়ে আসছে। নিয়ম-নিষ্ঠায় কোনও খামতি রাখেননি মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ড। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অষ্টমীতেই কুমারী পুজো হলেও যেহেতু সর্বমঙ্গলা মন্দিরে নবরাত্রির পুজো হয়, তাই এখানে নবমী তিথিতেই কুমারী পুজো হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন- ‘ওরা পুজো মানে না, তা পুজোর দিনেই কেন স্টল?’, বামেদের বিঁধে সরব কুণাল
রাজ আমলের অবসান হওয়ার পর তৎকালীন মহারাজা উদয় চাঁদ ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেছিলেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডের হাতেই তিনি প্রাচীন মন্দিরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সেই ট্রাস্টি বোর্ডই এই মন্দিরের পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব সামলে আসছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকী ভিন জেলা থেকেও নবমীতে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে নয় কুমারীর পুজো দেখতে ভিড় উপচে পড়ে।
ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ''পুরনো নিয়ম মেনেই এখানে নব কুমারী পুজো হয়। কোভিডের জন্য গত বছর শুধুমাত্র একজন কুমারীকে পুজো করা হয়েছিল। কিন্তু এবার ৯ জন কুমারীকেই পুজো করা হচ্ছে।'' পুজো শেষে এদিন মালসায় ভোগ বিতরণ করা হয়।