দীর্ঘ কয়েক দশক প্রতীক্ষার পর ফের শুরু হতে চলেছে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। ট্রেনটির নাম দেওয়া হয়েছে মিতালি এক্সপ্রেস। আগামী ২৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে এই রেল পরিষেবা। আপাতত সপ্তাহে দুদিন করে চলবে মিতালি এক্সপ্রেস। বাংলা নববর্ষের প্রাকমুহূর্তে এই দুদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরে।
আগামী ২৭ মার্চ রবিবার উত্তরবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন থেকে বেলা ১১ টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে ৩১৩২ ডাউন মিতালি এক্সপ্রেস। আগামী ২৬ মার্চ মিতালি এক্সপ্রেস বাংলাদেশ থেকে এসে ইন্দো-বাংলা সীমান্ত হলদিবাড়ি ব্লকের খালপাড়া সীমান্তে অবস্থিত রেলগেট পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছাবে। তার পরদিন থেকেই এই আন্তর্জাতিক যাত্রীবাহী ট্রেনটি নিয়মিত চলাচল করবে দুদেশের মধ্যে।
ইতিমধ্যেই এই আন্তর্জাতিক ট্রেন চলাচলে যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয় তার জন্য সীমান্তে আন্তর্জাতিক রেলগেটের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন সেন্টার। সম্প্রতি এই পরিকাঠামো ঘুরে দেখেছেন বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি অজয় সিং, এনজেপি এডিআরএম সঞ্জয় চিল, চিফ ইমিগ্রেশন অফিসার সৈকত সাহা, সিনিয়র ইমিগ্রেশন অফিসার রণধীর কুমার, কাস্টমস সুপার অগাষ্টা কুল্লু প্রমূখ।
ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত মিতালি এক্সপ্রেসের রেলপথ দূরত্বে ভারতের ৬৯ কিলোমিটার পথ বাদ দিলে বাকি পুরোটাই রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে। রেলমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, মিতালি এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ছাড়বে সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার আর ভারতের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়বে রবিবার ও বুধবার। রবি ও বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন থেকে ছাড়বে ভারতীয় সময় বেলা ১১ টা ৪৫ মিনিটে, এবং ট্রেনটি বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পৌছাবে ভারতীয় সময় রাত ১০ টা নাগাদ। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে ট্রেনটি ছাড়বে রাত ৯ টা ২০ মিনিটে, সেই ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছাবে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে।
আরও পড়ুন দোলের মেলা জমজমাট, নজর কাড়ছে হাজার টাকার পেল্লায় রসগোল্লা
এই ট্রেনে থাকছে ১০টি বাতানুকূল কোচ। এরমধ্যে চারটি করে মোট আটটি এসি ফার্স্ট ক্লাস ও এসি চেয়ারকার কোচ থাকবে। বাকি দুটি জেনারেটার ও ব্রেক আপ ভ্যান থাকবে। এসি বার্থের জন্য নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৪ হাজার ৯০৫ টাকা, এসি চেয়ারকারের ভাড়া ৩ হাজার ৮০৫ টাকা। ৫ বছর পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য মূল ভাড়ার ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। মিতালি এক্সপ্রেসের ভাড়া কার্যকর হবে চলতি বছরের ২৭ মার্চ থেকে। ট্রেন থেকে আয় ভাগাভাগির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দুদেশের মধ্যে। দূরত্ব অনুপাতে ভাড়ার ৮৫ শতাংশ ভাগ নেবে বাংলাদেশ, এবং বাকি ১৫ শতাংশ পাবে ভারতীয় রেল। বর্তমানে বাংলাদেশের রেলে ব্রডগেজ ট্রেনের জন্য কোন কোচ নেই। তাই ভারতের দেওয়া ১০ কোচের ট্রেন দিয়েই চলবে এই পরিষেবা। পরে বাংলাদেশ নতুন বগি আমদানি করলে সেই বগি দিয়েই চলাচল করবে মিতালি এক্সপ্রেস। ভারতের কোচ সহ ট্রেনটি ফিরিয়ে নেবে ভারত।
বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, এই ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে সরাসরি আসবে ইন্দো-বাংলা সীমান্ত হলদিবাড়ি স্টেশনে। যাত্রীদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের যাবতীয় বিষয় দেখা হবে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনেই। দুই দেশের ট্রেনের লোকো পাইলট হলদিবাড়ি স্টেশনে পাল্টাবে। সেখানে ট্রেনের কোনও যাত্রীকে নামতে দেওয়া হবে না।