বিজেপি-জোট ও বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জোরকদমে। এই দুই জোটের বাইরেও কয়েকটি দল রয়েছে। এদিকে ভিন রাজ্যে অভিযান লাঠে উঠে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তবে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে অন্যতম শরিক তৃণমূল। ২১ জুলাইয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এবার রাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রাপ্ত প্রকল্পের টাকা পেতে বড় কর্মসূচি নিয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় স্তরে এবার দলের মুখ হতে মরিয়া তৃণমূলের যুবরাজ।
সর্বভারতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে এখনও সেভাবে ডানা মেলতে পারেননি অভিষেক। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের মাটি বোঝার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ২০২১-এ রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন। তারপর দলের প্রবীণদের একটা অংশ অভিষেককে মেনে নেবেন না বলে হুঙ্কারও ছেড়েছিলেন। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে সৌগত রায়ের মতো সাংসদ বা নেতৃত্বরা আদি তৃণমূলকে মনে করাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক ধীরে ধীরে দলের রাশ হাতে নিতে থাকেন। শেষমেশ পঞ্চয়েতে নির্বাচনের আগে নবজোয়ার যাত্রা ও প্রার্থী বাছাইয়ের মাধ্যমে কর্তৃত্ব বজায় রাখেন অভিষেক। এবার যাত্রা শুরু করেছেন সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ভিনরাজ্য জয়ের ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক। নির্বাচনে লড়তে না সেই রাজ্যে জিততে যাবে তৃণমূল, এটাই ছিল অভিষেকের সঙ্কল্প। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। গোয়া ও ত্রিপুরায় লড়াইয়ে দাগই কাটতে পারল না জোড়াফুল। মেঘালয়ে ক্ষমতা পাওয়ার আশায় লড়াই করে ৫ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে কোনওরকমে দলের মুখরক্ষা হয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে এগোতে গিয়ে বারে বারে হোঁচট খেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো ঘোষণাই করেছিলেন গোয়া-সহ ভিনরাজ্যে তৃণমূল জয় পেলে অভিষেকের নেতৃত্ব মেনে নেবেন!
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের সর্বভারতীয় স্তরে সক্রিয় হয়েছেন অভিষেক। পাটনা, বেঙ্গালুরু, মম্বাইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে হাজির ছিলেন তিনি। এমনকী ওই জোটের সমন্বয় কমিটির তৃণমূলের সদস্য অন্য কেউ নন, অভিষেক। এবার আগাম ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে দিল্লিতে ধরনা দেবে তৃণমূল কংগ্রেস, নেতৃত্বে অভিষেক। সাধারণত দিল্লিতে আন্দোলন চললে সহজেই সর্বভারতীয় রাজনীতির আঙ্গিনায় নিজেকে মেলে ধরা সহজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর মুকুল রায়ের রাজ্য ও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পরিচিতি ছিল।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের লাখ লাখ চিঠি! রাখবে কোথায় মোদী সরকার?
তৃণমূলের সাংসদদের একটা অংশ বয়সে বেশ প্রবীণ। বৃদ্ধ তকমাও লেগে গিয়েছে কারও কারও। নেতৃত্বের শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আরেক প্রবীণ তৃণমূল নেতা তাপস রায়। এবার কে কে লোকসভা নির্বাচনে দলের টিকিট পাবেন না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। একদিকে দলের সংগঠনে, অন্যদিকে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের মুখে মুখে 'এবি'। রাজ্যে প্রভাব বিস্তারের পর এবার অভিষেকের লক্ষ্য সর্বভারতীয় রাজনীতি। যদিও দলের সর্বভারতীয় তকমা এখন নেই। তবে সর্বভারতীয় রাফ-টাফ রাজনীতির ময়দানে অভিষেক কতটা সফল হবে? রাজনৈতিক মহলের বড় প্রশ্ন।