একটা সময় কুমোরটুলিতে ঘরে ঘরে বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি হত। বিগত কয়েকবছর ধরেই ব্যাপকহারে কমতে শুরু করেছে বিশ্বকর্মা পুজো। সেই আঁচ পড়েছে কুমোরটুলিতেও। এখন হাতে গোনা বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি হয় সেখানে। তবে গণেশ পুজোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে বহুগুন। কুমোরটুলি এখন অপেক্ষা করে গণেশ পুজোর জন্য। হাজার হাজার গণেশ প্রতিমা তৈরি হয় পালপাড়াতে। এবার পর-পর দিনে বিশ্বকর্মা ও গণেশ পুজো হওয়ায় তুলনা চলে আসছে। এই বাংলাতে বিশ্বকর্মাকে বেশ কয়েক গোল দিয়েছে সিদ্ধাদাতা গণেশ।
মৃৎশিল্পীদের গলাতেও বিশ্বকর্মা নিয়ে হতাশার সুর। ৭১ বছরের সত্যব্রত মিত্র বলেন, 'একটা সময় এখানে গণেশের কোনও চাহিদা ছিল না। বিশ্বকর্মা পুজো ভালই হত। এখন তো ইন্ডাস্ট্রি কিছু নেই। তাই চাহিদাও কমে গিয়েছে। প্রত্যেক ঘরে এখন একটা-দুটো করে বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি হয়। আগে ১৫-২০টা করে বানানো হত। এখন কারও উৎসাহ নেই। তবে গণেশের চাহিদা ব্যাপক। গতবছর ২০টা গণেশের প্রতিমা করলে এখন সে ৩০-৪০টা তৈরি করছে।'
গণেশ চতুর্থীতে পুজোর তেমন একাট চল বাংলায় ছিল না। এখানে গণেশ পুজো মানে ১লা বৈশাখ। নতুন বাংলা বছরে হালখাতার সময় গণেশ পুজোর প্রচলন দীর্ঘ দিনের। শিল্পকারখানার কি দশা তা কুমোরটুলিতে গেলেই স্পষ্ট। সেকথা বলছেন খোদ মৃতশিল্পের সঙ্গে যুক্তরা। প্রতিমা শিল্লী সমর পাল বলেন, 'বিশ্বকর্মার বাজার ডাউন। গণেশের চাহিদা কয়েকবছর ধরে। আগে অবাঙালিরা গণেশপুজো করত। এখন বাঙালিরাও গণেশ পুজো করছে। কলকারখানা নেই। যে ঠাকুরের চাহিদা আছে তাঁর বিক্রি বেড়েছে। আমি এবার ১৬ ফুট উচ্চতার গণেশের প্রতিমা বিক্রি করেছি। আগে এত বড় ঠাকুর বিক্রি করিনি। গণেশ বিক্রি করে লাভও বেশি হচ্ছে। এখন ১০ শতাংশ বিশ্বকর্মা ঠাকুরও তৈরি হয় না।'
আরও পড়ুন- গণেশ পুজোয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ রিদ্ধি-সিদ্ধি, জানুন কারা তারা?
একই কথা শোনা গেল বঙ্কিম পাল, জয়ন্ত দত্ত, দিলীপ মাঝিদের গলায়। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন একদিকে যেমন ব্যাপক হারে কমে গিয়েছে বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি পাশাপাশি বেড়েছে গণেশ তৈরি। বঙ্কিম পাল বলেন, 'আগে বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করতাম। ছোটবেলায় বিশ্বকর্মা প্রতিমা ১হাজার তৈরি হলে এখন ৬০-৭০টা হয় না কিনা সন্দেহ। আগে ১-২টো গণেশ তৈরি হত। এখন হাজার হাজার তৈরি হয়। বাড়িতে বাড়িতে পুজো হয়। গতবছর ২০টা গণেশ তৈরি করেছিলাম। এবার ৩১টা বানিয়েছি। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গতবছর ২ টো বিশ্বকর্মা বানিয়েছিলাম অর্ডারে। এবারে একটামাত্র বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরি করেছি।' দিলীপ মাঝির কথায়, 'গতবছর দুই গাড়ি অর্থাৎ প্রায় ১শো বিশ্বকর্মা প্রতিমা বিক্রি করেছি। এবার অর্ধেক বিক্রিও হয়নি। অথচ গনেশ প্রতিমা বিক্রি হয়েছে ২০০। আসলে বাঙালি-অবাঙালি সবাই এখন গণেশ পুজোয় মেতেছে।' জয়ন্ত দত্ত বলছেন, 'কলকারখানা বন্ধ তাই বিশ্বকর্মা পুজোও কমে গিয়েছে। গণেশ প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন।'
মুম্বাইয়ের গণেশ চতুর্থী রীতিমো থাবা বসিয়েছে বাংলায়। ব্যবসায়ীরা যেমন পুজো করছে, পাশাপাশি পারিবারিক পুজোও বেড়েছে কয়েকগুন। কুমোরটুলিতেই এসে তা বেশ টের পাওয়া গেল। বিশ্বকর্মা প্রতিমার চাহিদা না থাকায় কুমোরটুলির শিল্পীরাও টের পাচ্ছেন কলকারখানা কমে গিয়েছে এ রাজ্যে। তবে ছোট ব্যবসা বেড়েছে। গণেশ বাবাজিই যেন এখন বাংলার আশা-ভরসা।