তামিল পরিচালক লীনা মণিমেকাইলার তথ্যচিত্রের পোস্টারে কালী ধূমপান করছেন, এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন থেকেই বিতর্ক তুঙ্গে। এই বিষয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, ‘আমার কাছে কালী এমন একজন দেবতা, যিনি মদ, মাংস সবই খান। সিকিমে কালীর প্রসাদ হুইস্কি।’ এই মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় এমন জায়গায় বয়ে যায় যে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসও দলীয় সাংসদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে। থানায় থানায় মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কথা বলেছে বিশিষ্ট পুরাণবিদ অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর সঙ্গে। তাঁর কথা আমরা তুলে ধরছি।
মহুয়া মিত্র একজন অত্যন্ত ডিগনিফায়েড মহিলা। বড়মাপের সাংসদ। তিনি ভগবানকে ওয়াইন দেওয়া হয় সেকথা বলেছেন। একদিক থেকে সেকথা বলতে পারেন। তবে পাবলিকলি এটা বলা যায় না। কারণ, তান্ত্রিক সাধনমার্গে অনেক গূঢ় রহস্য় আছে। যেগুলি আমরা কেন অনেকেই জানেন না। স্যার আর্থার অ্যাভালন(Sir Arthur Avalon) তন্ত্রসার অনুবাদ করেছেন। এতবড় পন্ডিত পর্যন্ত বলেছেন, গূঢ় রহস্যগুলো সাধনার দ্বারা সম্প্রদায়গত ভাবে লব্ধ। এগুলো পড়ে হয় না। এই কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ওনারা মদ্য, মাংস নিবেদন করেন দেবীকে। কিন্তু কালীপুজোর নানান রকম ধরন আছে। শুধু তান্ত্রিকি কালী তা তো নয়, দক্ষিণা কালী আছে, রামকৃষ্ণদেব পুজো করতেন। কালী যেহেতু শক্তির দেবতা তাঁর কাছে এসব উপাচার চলতেই পারে। কিন্তু এমন নয়, এই সাধনমার্গ নিয়ে মন্তব্য করতে পারি যে আমার দেবতা এইরকম।
কারণ চণ্ডী থেকে আরম্ভ করে সর্বত্র নানা বিষয় রয়েছে। চণ্ডীর মধ্যে আছে 'রক্তবীজও বধে দেবী…' রক্তবীজ যখন বধ করা হচ্ছে। একটা ফোটা রক্তবীজ পড়লে আর একটা রক্তবীজ জন্মাচ্ছে। একটা প্রবাদ হয়ে গিয়েছে, রক্তবীজের বংশ। দেবী চামুন্ডা তখন তিনি কী করলেন। চন্ডী বললেন, দেখ কালী চামুন্ডে তুমি এই রক্তটা পান কর। তাহলে রক্তটা মাটিতে পড়বে না। আমি তখন তাকে শেষ করতে পারব। তাহলে আমি কী বলব একটা 'ব্লাড হ্যাপি' দেবতা? এটা বলতে হবে আমাকে? দেবতাদের ক্ষেত্রে একটা খুব সুন্দর কথা আছে ভাগবত পূরাণে। তাঁরা যা আচরণ করছেন সেটা আমাদের পালনীয় নয়। সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। ওনারা যা বলছেন ওটা আমাদের দেখার কথা।
তান্ত্রিক উপাচারে যে পুজো হয় সেখানে মদ্য-মাংস নানা কিছু আছে। বৈরভী চক্র আছে। স্ত্রী লোকের ব্যাপার আছে। এগুলো তো গূঢ় রহস্যের ব্যাপার। এগুলো কী আমরা বিচার করব? সাধানমার্গকে বিচার করব?
রামচন্দ্র বৈষ্ণব দেবতা হিসাবে গন্য হয়েছেন। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন রামচন্দ্র কি মাছ মাংস খেতেন। ওনাকে কী বলব? খোদ রামায়ণের মধ্যে যে বর্ণনা আছে তিনি পাঠা, ভেড়া, বরাহ, ময়ুরের মাস খেতেন। যেদিন সীতা হরণ হচ্ছেন সেদিনও দুখানা হরিণ মেরে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানেন না বাড়ি গিয়ে সীতাকে খুঁজে পাবেন না। তিনি তো ক্ষত্রীয়। সেখানে সেইরকম ভাবে তাঁরা আচরণ করেছেন। ক্ষত্রীয়দের মধ্যে মদ-মাংস সব তাঁদের চলবে। এই ব্যাপারটা আমি কি বলব রামচন্দ্র একজন মদ্য-মাংস প্রিয় লোক ছিল? তাঁর তো পুজোতে কোনও মাংস লাগে না। তাই বলে এটা বলতে পারি না রামচন্দ্র একজন মদ্য-মাংসপ্রিয় দেবতা। পাবলিকলি সাধনমার্গের কথা বলা ঠিক না। এমনকী যেখান থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। বহুরূপী বাইরে সিগারেট খাচ্ছে। কালী সিগারেট খাচ্ছে, এই ছবিটা কেন দেবে? কালীর ছবি দাও। সাধনমার্গের গূঢ় রহস্যের জায়গা বাইরে আনা যাবে না সেটা সাধকের মধ্যেই থাকবে।
আরও পড়ুন- নূপুর-মহুয়াদের মন্তব্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ, বিতর্কে ফায়দা কাদের?
মহুয়ার কালী মন্তব্য, কী ব্যাখ্যা পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কথা বলেছে বিশিষ্ট এই পুরাণবিদ-অধ্যাপকের সঙ্গে।
Follow Us
তামিল পরিচালক লীনা মণিমেকাইলার তথ্যচিত্রের পোস্টারে কালী ধূমপান করছেন, এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন থেকেই বিতর্ক তুঙ্গে। এই বিষয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন, ‘আমার কাছে কালী এমন একজন দেবতা, যিনি মদ, মাংস সবই খান। সিকিমে কালীর প্রসাদ হুইস্কি।’ এই মন্তব্যকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় এমন জায়গায় বয়ে যায় যে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসও দলীয় সাংসদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করে। থানায় থানায় মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। মহুয়ার মন্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কথা বলেছে বিশিষ্ট পুরাণবিদ অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর সঙ্গে। তাঁর কথা আমরা তুলে ধরছি।
মহুয়া মিত্র একজন অত্যন্ত ডিগনিফায়েড মহিলা। বড়মাপের সাংসদ। তিনি ভগবানকে ওয়াইন দেওয়া হয় সেকথা বলেছেন। একদিক থেকে সেকথা বলতে পারেন। তবে পাবলিকলি এটা বলা যায় না। কারণ, তান্ত্রিক সাধনমার্গে অনেক গূঢ় রহস্য় আছে। যেগুলি আমরা কেন অনেকেই জানেন না। স্যার আর্থার অ্যাভালন(Sir Arthur Avalon) তন্ত্রসার অনুবাদ করেছেন। এতবড় পন্ডিত পর্যন্ত বলেছেন, গূঢ় রহস্যগুলো সাধনার দ্বারা সম্প্রদায়গত ভাবে লব্ধ। এগুলো পড়ে হয় না। এই কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ওনারা মদ্য, মাংস নিবেদন করেন দেবীকে। কিন্তু কালীপুজোর নানান রকম ধরন আছে। শুধু তান্ত্রিকি কালী তা তো নয়, দক্ষিণা কালী আছে, রামকৃষ্ণদেব পুজো করতেন। কালী যেহেতু শক্তির দেবতা তাঁর কাছে এসব উপাচার চলতেই পারে। কিন্তু এমন নয়, এই সাধনমার্গ নিয়ে মন্তব্য করতে পারি যে আমার দেবতা এইরকম।
কারণ চণ্ডী থেকে আরম্ভ করে সর্বত্র নানা বিষয় রয়েছে। চণ্ডীর মধ্যে আছে 'রক্তবীজও বধে দেবী…' রক্তবীজ যখন বধ করা হচ্ছে। একটা ফোটা রক্তবীজ পড়লে আর একটা রক্তবীজ জন্মাচ্ছে। একটা প্রবাদ হয়ে গিয়েছে, রক্তবীজের বংশ। দেবী চামুন্ডা তখন তিনি কী করলেন। চন্ডী বললেন, দেখ কালী চামুন্ডে তুমি এই রক্তটা পান কর। তাহলে রক্তটা মাটিতে পড়বে না। আমি তখন তাকে শেষ করতে পারব। তাহলে আমি কী বলব একটা 'ব্লাড হ্যাপি' দেবতা? এটা বলতে হবে আমাকে? দেবতাদের ক্ষেত্রে একটা খুব সুন্দর কথা আছে ভাগবত পূরাণে। তাঁরা যা আচরণ করছেন সেটা আমাদের পালনীয় নয়। সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। ওনারা যা বলছেন ওটা আমাদের দেখার কথা।
তান্ত্রিক উপাচারে যে পুজো হয় সেখানে মদ্য-মাংস নানা কিছু আছে। বৈরভী চক্র আছে। স্ত্রী লোকের ব্যাপার আছে। এগুলো তো গূঢ় রহস্যের ব্যাপার। এগুলো কী আমরা বিচার করব? সাধানমার্গকে বিচার করব?
রামচন্দ্র বৈষ্ণব দেবতা হিসাবে গন্য হয়েছেন। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন রামচন্দ্র কি মাছ মাংস খেতেন। ওনাকে কী বলব? খোদ রামায়ণের মধ্যে যে বর্ণনা আছে তিনি পাঠা, ভেড়া, বরাহ, ময়ুরের মাস খেতেন। যেদিন সীতা হরণ হচ্ছেন সেদিনও দুখানা হরিণ মেরে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানেন না বাড়ি গিয়ে সীতাকে খুঁজে পাবেন না। তিনি তো ক্ষত্রীয়। সেখানে সেইরকম ভাবে তাঁরা আচরণ করেছেন। ক্ষত্রীয়দের মধ্যে মদ-মাংস সব তাঁদের চলবে। এই ব্যাপারটা আমি কি বলব রামচন্দ্র একজন মদ্য-মাংস প্রিয় লোক ছিল? তাঁর তো পুজোতে কোনও মাংস লাগে না। তাই বলে এটা বলতে পারি না রামচন্দ্র একজন মদ্য-মাংসপ্রিয় দেবতা। পাবলিকলি সাধনমার্গের কথা বলা ঠিক না। এমনকী যেখান থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। বহুরূপী বাইরে সিগারেট খাচ্ছে। কালী সিগারেট খাচ্ছে, এই ছবিটা কেন দেবে? কালীর ছবি দাও। সাধনমার্গের গূঢ় রহস্যের জায়গা বাইরে আনা যাবে না সেটা সাধকের মধ্যেই থাকবে।
আরও পড়ুন- নূপুর-মহুয়াদের মন্তব্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ, বিতর্কে ফায়দা কাদের?