Advertisment

কঠিন রোগেও দৃপ্ত বর্ধমানের সোনার মেয়ে ঐন্দ্রিলার কণ্ঠের জাদু, প্রশংসায় পঞ্চমুখ শ্রোতারা

শিঁড়দাড়ার কঠিন অসুখ কখনও পূর্ব-বর্ধমানের বড়শুলের বামুনপাড়ার বছর দশেকের ঐন্দ্রিলাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তবে চিকিৎসার খরচ যোগাতে তাঁর পরিবার স্বর্বশান্ত।

author-image
Joyprakash Das
New Update
oindrila and success

ঐন্দ্রিলা ও তার সাফল্যের নজির।

বর্ধমান, কলকাতা ছাড়িয়ে কটকের মঞ্চেও ঐন্দ্রিলার আবৃত্তি দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে দিয়েছে। একাধিক ছোট-বড় মঞ্চে ছোট্ট ঐন্দ্রিলার কণ্ঠে মোহিত হয়েছেন শ্রোতারা। আবৃত্তিতে প্রশংসার পাশাপাশি জুটেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মান। শিঁড়দাড়ার কঠিন অসুখ কখনও পূর্ব-বর্ধমানের বড়শুলের বামুনপাড়ার বছর দশেকের ঐন্দ্রিলাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তবে চিকিৎসার খরচ যোগাতে তাঁর পরিবার স্বর্বশান্ত। লড়াই করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ঐন্দ্রিলার পরিবারের।

Advertisment

রবিবার দিল্লি থেকে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন তাঁর বাবা-মা। মাসে দুবার দিল্লি যাতায়াত করতে হয় মেয়ের চিকিৎসার জন্য। ২০১৭ থেকে এইমসে যাচ্ছেন মেয়েকে নিয়ে। সুমন্ত বসু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'এইমসে পাঁচটা টেস্ট দিয়েছিল। এমআরআই, ইকো, পালমোনলজি করা হয়েছে। সামনে ১৮ তারিখ ফের অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। নিউরোসার্জেন ক্লিয়ারেন্স দেবেন, ইউএসজি করা হবে। ২১ তারিখ সিদ্ধান্ত হবে স্পাইনের অপারেশন হবে কীনা। তারপর পায়ের অপারেশন হতে পারে। খরচ যোগাতে আমার জমানো টাকা সব শেষ। বাড়িতে এখন কী খাব তা নিয়ে চিন্তা করছি।' ঐন্দ্রিলার বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের এই লড়াইয়ে আগাগোড়া পাশে ছিলেন শ্বেতা চট্টোপাধ্যায়, মাধব ঘোষ, অনামিকা কোনার, লিপিকা নাগ, শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী, কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়রা।

ঐন্দ্রিলাকে বাড়িতে সবাই টিক্কু বলে ডাকে। টিক্কুর কথায়, 'আমি বর্ধমান, কলকাতা, কটকসহ নানা জায়গায় আবৃত্তি করেছি। স্টেজে আবৃত্তি করতে খুব ভাল লাগে। অনলাইনেও অনুষ্ঠান করেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আমার প্রথম পছন্দ। তাছাড়া নজরুল ইসলাম, সুকুমার রায়, শুভ দাশগুপ্ত, শুভ্রা ঘোষের কবিতা আবৃত্তি করতে আমার খুব ভাল লাগে। আমার আবৃত্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। বাবা-মা-কে খুব কাছে পাই। পাশাপাশি শিখা আন্টি, সুদেষ্ণা আন্টি, সুদীপ্তা আন্টি, সুমিতা আন্টি, স্মৃতিপর্ণা ম্যামদের কাছে পাচ্ছি।'

আরও পড়ুন- বহুদিনের ইচ্ছেপূরণ, ঘরেই আস্ত ট্রেন বানালেন শ্রীরামপুরের প্রভাস আচার্য

বড়শুলের ব্রাহ্মনপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে বছর দশেকের ঐন্দ্রিলা। সুমন্ত বলেন, 'আবৃত্তিতে মেয়ে অংসখ্য পুরস্কার পেয়েছে। দুবছর আগে ওডিশার কটকে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছে। অনেক জায়গা থেকে অনুষ্ঠানের প্রস্তাব আসে, কিন্তু অর্থ ও শরীরিক কারণে ওকে নিয়ে যেতে পারি না। আমার ছোট ঘরে আলমারিতে ট্রফি রাখার আর জায়গা নেই। তিন বছর থেকে আবৃত্তি করছে। প্রথাগত ভাবে সে আবৃত্তি শেখেনি। গত দুবছর বর্ধমানে যায় আবৃত্তি শিখতে।'

একদিকে পড়াশুনা, আবৃত্তি, কাজকারবার, নিয়মিত চিকিৎসা, অর্থের যোগান সব মিলিয়ে টানা ৯ বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বামুনপাড়া গ্রামের সুমন্ত ও বিথীকা। ঐন্দ্রিলা ও ৬ বছরের ছেলে ঐশিক, সংসারের কাজ সামলান বিথীকা। বছর ৪৬-এর সুমন্ত বলেন, '৮ মাস বয়সে যখন বুঝতে পেরেছি তখন থেকেই লড়াই চলছে। ডিলেইড মাইলস্টোন, মেয়ের স্পাইনে কঠিন সমস্যা। এখন ১০৫ ডিগ্রি বাঁকা শিঁড়দাড়া। পায়ে দাড়ানোর সমস্যা। হামস্ট্রিং ছোট, ফ্রেক্সিবল নয়। বর্ধমান, বোলপুর, কলকাতা, মুম্বাইয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। গত ৬ বছর ধরে টানা দিল্লিতে এইমসে চিকিৎসা চলছে। মেয়েকে স্কুলে সাইকেলে নিয়ে গিয়ে বেঞ্চে বসিয়ে দিই। কখনও হুইল চেয়ারে স্কুলে যায়। টিফিনের সময় যেতে হয়। মাঝে মধ্যে পা ঠিক করে দিতে হয়। একভাবে বেশিক্ষণ বসলে অসুবিধা হয়।'

সংসারে আয় বলতে সুমন্তবাবু এক বিঘে জমিতে চাষাবাদ করেন। তিনি বলেন, 'ওই চাষ ছাড়া ১০০ দিনের কাজ আগে করতাম। তা-ও এখন বন্ধ। জমানো টাকা সব শেষ হয়ে গিয়েছে। সহৃদয় কিছু মানুষ পাশে আছেন। কতদিন যে টানতে পারব কে জানে।'

East Burdwan burdwan West Bengal
Advertisment