কলকাতা, 'সিটি অফ জয়' এবং এর লেখক দমিনিক ল্যাপিয়েরের মধ্যে অন্যতম শেষ সম্পর্ক সূত্রকে গত সপ্তাহেই হারিয়েছে এই শহর। কারণ, ল্যাপিয়েরের বন্ধু ও গাইড রেজিনাল্ড জন যিনি লেখককে হাওড়া পিলখানার গলি থেকে তস্য গলিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন, তিনি প্রয়াত হয়েছেন। হাওড়া পিলখানায় পরিচিত সেই সব বাসিন্দাদের বেশ কিছু চরিত্র পরবর্তী সময়ে ল্যাপিয়েরের বইয়ে স্থান পেয়েছেন।
বছর ৭০-এর রেজিনাল্ড জনকে পিলখানাবাসী 'জন স্যার' নামে চিনত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তিনি সেবা সংঘ সমিতির প্রশাসনিক আধিকারিক পদেও ছিলেন। পিলখানায় নানা প্রকার সেবামূলক কাজে এই সেবা সংঘ সমিতির গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। রেজিনাল্ড জনের নামের সঙ্গে পিলখানাবাসী 'স্যার' শব্দটা জুড়ে দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি এখানে স্কুল তৈরিতে সাহায্য করেছেন। শুধু তাই নয়, এখানকার বাসিন্দারা যাতে সন্তানদের স্কুলে পাঠায়, তার জন্য লাগাতার চেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছেন প্রয়াত 'জন স্যার'।
বুধবার 'স্যার জন'-এর মৃত্যুতে পিলখানাবাসী যেন তাঁদের 'বড় ভাই'কে হারাল। আর, সেই কারণে মধ্য হাওড়ার ওয়াটকিনস লেন এলাকায় রেজিনাল্ড জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এখানকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ দরিদ্র। একইসঙ্গে তাঁরা নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন। 'স্যার জন'-এর মৃত্যুর খবর পেয়ে পিলখানাবাসীর প্রতিক্রিয়া, তাঁরা 'অনাথ হয়ে' গেলেন।
এই পিলখানার বাসিন্দা মকতুব আলি। তিনি ঠিকা শ্রমিক। মকতুবের ভাষায়, 'তিনি আমাদের কাছে বড় দাদার মত ছিলেন। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি আমাদের অগ্রগতির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা সত্যিই অনাথ হয়ে গেলাম।' আটের দশকের গোড়ার দিকে দমিনিক ল্যাপিয়েরকে হাওড়া পিলখানার বিভিন্ন এলাকা তিনি কীভাবে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন, তা জানিয়েছিলেন রেজিনাল্ড জন।
আরও পড়ুন- ইডেনে চুটিয়ে দেখুন IPL, বিশেষ উদ্যোগ মেট্রোর! গুড ফ্রাইডে-তে পরিষেবার কী আয়োজন?
তাঁর সালকিয়ার বাড়িতে বসে তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের একবার এক রিকশওয়ালার সঙ্গে কথা হল। ওই রিকশওয়ালা সেবা সংগ্রহ সমিতি থেকে নিয়মিত সাহায্য পেতেন। তাঁর কাছে যাওয়ার পর তিনি আমাদের চা খেতে দিলেন। আর, তারপর নিজের জীবনের নানা যন্ত্রণার কথা বলতে শুরু করলেন। চা খেতে খেতেই ল্যাপিয়ের সব শুনছিলেন। আর, ওই রিকশচালককে একবার করে দেখে নিচ্ছিলেন। তিনি ওই রিকশচালককে সিটি অফ জয়-এর নায়কের চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।'