ফের ধাক্কা খেল মানবতা! শিলিগুড়ি তিন মাইল হাট ও মাগুরজান স্টেশনের মধ্যবর্তী রেল লাইনের উপর থেকে উদ্ধার হলএক শিশুকন্যা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রেললাইনের মাঝখানে পড়েছিল শিশুটি। রেল লাইন পরীক্ষা করার সময় শিশুটিকে লাইনের উপর পড়ে থাকতে দেখে তৎক্ষণাৎ নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন রেল কর্মীরা। রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিশুটি উদ্ধারের কিছুটা আগেই এই লাইন দিয়েই চলে গিয়েছে কলকাতাগামী ১৩১৪১ আপ তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস। শিশুটি ট্রেন থেকে পড়ে গেছে না তাঁকে কেউ রেল লাইনে ফেলে গিয়েছে তা নিয়েই এখন ধন্দে রেল পুলিশ।
ঠিক কি হয়েছিল?
নিয়মমাফিক বৃহস্পতিবার বিকালে রেল লাইন পরীক্ষা করছিলেন রেলকর্মীরা। সেই সময়েই হঠাৎ তাঁদের চোখে পড়ে রেল লাইনে পড়ে আছে একটি শিশু। ঘটনাস্থল থেকে যত দ্রুত সম্ভব শিশুটিকে উদ্ধার করে রেলকর্মীরা আরপিএফের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে যায় নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা দেখেন শিশুটির মাথায় এবং হাতে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে শিশুটির কোনও পরিচয় পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। বর্তমানে শিশুটি অনেকটাই সুস্থ আছে বলে খবর হাসপাতাল সূত্রে।
আরও পড়ুন- পথ চলতি মানুষের জন্য পাবলিক ফ্রিজ! অভিনব উদ্যোগ শিলিগুড়িতে
উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে বর্তমানে রাখা হয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালের ফিমেল মেডিকেল ওয়ার্ডে। শিশুটির মাথায় আঘাত থাকার কারণে স্ক্যান এবং বেশ কয়েকটি রক্ত পরীক্ষাও করা হয়েছে। পরম যত্নে শিশুটির দেখভাল করছেন হাসপাতালের নার্সরাই। ওয়ার্ড ইনচার্জ কৃষ্ণা দাস বলেন, "শিশুটি আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ রয়েছে। ২৪ ঘন্টা শিশুটিকে বিশেষ নজরে রাখা হচ্ছে। কাল সন্ধ্যার পর থেকেই তাকে বেশ কয়েকবার দেখে গিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নবীন বিশ্বাস। এমনকী প্রসূতি বিভাগ থেকে দুধ এনেও খাওয়ানো হচ্ছে শিশুটিকে"।
আরও পড়ুন- ভারত স্বাধীন হলেও পরাধীন শিলিগুড়ির এই গ্রামের মানুষরা
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শিশুটির বয়স প্রায় ১ বছর। পরিচয়হীন শিশুকন্যাটির প্রতি এরমধ্যেই মায়া জন্মেছে হাসপাতালের কর্মীদের। এমনকী শিশুটির জন্য জামা কাপড়ও এনে দিয়েছেন হাসপাতালেরই চিকিৎসক এবং নার্সরা। তবে তাঁদের প্রত্যেকেরই এখন একটাই চাওয়া, শিশুটি যেন ফিরে পায় তার পরিবারকে। এক বছরের শিশুটিকে দেখতে এদিন নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালে যান জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়ও। শিশুটির চিকিৎসা ও যত্নে যাতে কোনরকম ত্রুটি না থাকে সে জন্য তিনি কর্তব্যরত নার্সদের আবেদনও করেছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শিশুটির খোঁজ খবর নিয়েছে চাইল্ড লাইনের সদস্যরাও। তবে এখনও পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি শিশুটির পরিবারের।
আরও পড়ুন- ‘দিনের আলোয় রাতের জঙ্গল’, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারির অভিনব উদ্যোগ
পুলিশ জানিয়েছে, শিশু নিখোঁজের কোনও অভিযোগ এখনও আসেনি। আর এখানেই আশঙ্কার মেঘ দেখছে সব পক্ষ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হতে পারে শিশুটিকে। তাই যদি হয় তবে শিশুটি ট্রেন লাইনের মাঝে গেল কী করে? পুলিশের একাংশ মনে করছে, শিশুটির প্রাণ নাশের কথা ভেবেই ট্রেন লাইনের মাঝে ফেলে রাখা হয়েছে তাকে। তবে শিশুটির পরিবারের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। রেল লাইনে শিশুকন্যা ফেলে যাওয়ার মতো এমন অমানবিক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিলিগুড়ি শহরজুড়ে।
শিলিগুড়ির আরও খবর পড়ুন এখানে