Operation Sindoor: অপারেশন সিঁদুর সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর, এবার কৌশলগত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার চায়, এই অভিযানের বার্তা যেন আন্তর্জাতিক মহলে সুস্পষ্টভাবে পৌঁছায়। সেই লক্ষ্যেই বিশ্বের একাধিক দেশে সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। সূত্রের খবর, বেশ কয়েকজন বিরোধী সাংসদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছে সরকার। তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই আন্তর্জাতিক মিশনের অংশ হতে। এই প্রতিনিধিদল মূলত ইউরোপ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন রাজধানীতে যাবে। উদ্দেশ্য একটাই—বিশ্ববাসীকে জানানো যে, ভারত একত্রিতভাবে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিদেশ মন্ত্রক লোকসভা ও রাজ্যসভা সচিবালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাংসদদের একটি তালিকা প্রস্তুত করছে। মূল লক্ষ্য, বৈশ্বিক মহলে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা—ভারত প্রথমে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রত্যাঘাতে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি লঞ্চ প্যাডে হামলা চালিয়ে ভারত উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের সর্বদলীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অতীতেও হয়েছে। ১৯৯৪ এবং ২০০৮ সালে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ভারত একই ধরনের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল।
বর্তমান উদ্যোগে সরকার যে সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—কংগ্রেসের শশী থারুর ও সালমান খুরশিদ, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে, টিএমসির সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, এআইএমআইএমের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, ডিএমকে-র কানিমোঝি এবং বিজেপির বিজে পান্ডা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু জানিয়েছেন, "জাতীয় স্বার্থে" এই প্রতিনিধিদলের গঠন করা হচ্ছে। শশী থারুর বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং সালমান খুরশিদ একজন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হওয়ায় তাঁদের অভিজ্ঞতা এই প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারের এই উদ্যোগ পিভি নরসিমহা রাও সরকারের সেই পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যখন তৎকালীন বিরোধী নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ অধিবেশনে পাঠানো হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সালমান খুরশিদ বলেন, "আমি সরকারের পক্ষ থেকে একটি ফোন পেয়েছি। বিষয়টি কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানিয়েছি। এটা সর্বদলীয় প্রচেষ্টা, তাই সিদ্ধান্ত দলেরই।"
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই উদ্যোগের রাজনৈতিক তাৎপর্যও কম নয়। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সরকারকে আক্রমণ করেছে ভারত-পাক যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে। পাশাপাশি, বিজেপি দেশজুড়ে তেরঙ্গা যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে, আর কংগ্রেস জয় হিন্দ সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে একাধিক শহরে। কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে—কেন প্রধানমন্ত্রী কেবল এনডিএ মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করলেন, সকল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কেন আমন্ত্রণ জানানো হল না? সবমিলিয়ে, অপারেশন সিঁদুরকে ঘিরে ভারতের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক মহলে চলছে তৎপরতা ও কৌশলী পদক্ষেপ।