দেশে ক্রমেই কমছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবুও যেন উদ্বেগ কিছুতেই কাটছে না। ইতিমধ্যেই খুলেছে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্কুল। প্রায় ২ বছর পর গতকাল থেকেই চালু হয়েছে ছোটদের ক্লাস। তবে স্কুলে গেলে সন্তানেরা সুরক্ষিত থাকবে তো? চিন্তায় বহু অভিভাবক। এ নিয়ে কী মতামত চিকিৎসকদের? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরীর মতে, কোভিডের সংক্রমণ বা এতে মৃত্যু সত্ত্বেও স্কুল খোলার সময় হয়েছে। তিনি ‘‘আমার মনে হয়, স্কুল খোলার সময় এসেছে। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কখনই শূন্যে নামবে না। তবে করোনার থেকেও অন্যান্য সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তার মধ্যে বাচ্চাদের সংখ্যা প্রায় নগণ্য। সেই কারণেই ওদের স্কুল বন্ধ রাখার আর কোন মানে হয়না”। স্কুল খোলা থাকলে বাচ্চারা মানসিক ভাবে অনেক সুস্থ থাকবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর মতে, ‘‘বাচ্চারা মাস্ক পরার বিষয়ে বড়দের থেকে বেশি সচেতন। তা ছাড়া, বাচ্চাদের মধ্যে তেমন সংক্রমণ দেখা যায়নি। আর টিফিনের খাবার শেয়ার করলেই যে বাচ্চাদের মধ্যে করোনা ছড়াবে, তা-ও মনে হয় না।’’
তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে শিশুরাও ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছে। সংখ্যাটা কম হলেও কিছু বিষয় ভাবাচ্ছে অভিভাবকদের। করোনা তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে শিশু শরীরে। তবে গবেষণা অনুসারে দেখা গেছে, শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো করোনা সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতায় ভুগতে পারে। তবে সর্বশেষ গবেষণা বলছে, শিশুদের লং কোভিডের ঝুঁকি কম।
শিশুদের লং কোভিড ঝুঁকি কতটা?
শিশুদের ক্ষেত্রে সেভাবে ব্যাপক প্রভাব ফেলেনা লং কোভিড। তবে অনেকে কোভিড পরবর্তীতে লং কোভিডের সমস্যায় ভুগতে পারে। সেই সংখ্যাটা নিতান্তই কম। সেক্ষেত্রে কী কী সমস্যা তাদের মধ্যে দেখা যায় এটি আগে ভালো করে জানতে হবে।
আরো পড়ুন: হবু মায়েদের ক্ষেত্রে টিকা কমাতে পারে সন্তানের করোনা সংক্রান্ত জটিলতা, জানাল গবেষণা
শিশুদের লং কোভিডের লক্ষণ-
শিশুরা লং কোভিড এবং এর উপসর্গের শিকার হলে জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মনঃসংযোগের অভাব এবং পেটব্যথার মতো সমস্যায় ভুগতে পারে। সেইসঙ্গে বিরক্তি অথবা মানসিক অস্থিরতাকেও লং কোভিডের লক্ষণ হিসাবে বর্ণনা করছেন চিকিৎসকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশু-কিশোর হালকা উপসর্গে ভুগে থাকে এবং কারো কারো ক্ষেত্রে কোন উপসর্গই থাকেই না। তবে উপসর্গ দেখা দিলে তাদের উচ্চ জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, নাক বন্ধ বা নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, পেশী ব্যথা এবং ক্লান্তি ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দেয়।
স্কুলে, বাড়ির বাইরে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে আপনার সন্তান?
এব্যাপারে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পার্থ ত্রিপাঠি জানিয়েছেন, ‘অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে কোভিডবিধি মেনে চলার দিকে জোর দিতে হবে। বাচ্চাদের মাস্ক খোলা যাবে না। স্কুলে যাতে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা থাকে, তা দেখতে হবে। কোনও বাচ্চার জ্বর, সর্দিকাশি হলে অথবা অন্য শারীরিক অসুবিধা থাকলে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না। স্কুলের ভিতর বাচ্চারা যাতে দূরে দূরে বসে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ি ফিরে স্নান করা বা জামাকাপড় কেচে নেওয়ার দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। তবে ওয়েদার পরিবর্তনে সতর্ক থাকতে হবে। যে সব বাচ্চার কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্কুলে যাবে। কোভিডবিধি মেনে চললে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।’’ বেশির ভাগ শিশু করোনায় আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে সেভাবে লক্ষণ ফুটে ওঠে না। বাড়িতে থেকেই বেশিরভাগ সকলে ভালো হয়ে যায়, তাই আতঙ্কের কোন কারণ নেই।