গত বছর লকডাউন থেকেই যাত্রীবাস পরিবহণে ঘোরতর সংকট শুরু হয়েছিল। এবার সেই পরিস্থিতি আরও ভয়ানক দিকে এগোচ্ছ। বাসমালিকদের অভিমত গাঁটের কড়ি খরচ করে রুটে বাস নামানো সম্ভব নয়। ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় বাস চলার কথা ছিল। তবে অধিকাংশ বাসই এদিন পথে নামেনি। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
জয়েন্ট কাউন্সিল অব বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "বাস নামবে কী করে? ৯৬ টাকা ডিজেলের লিটার। রাজ্য ও কেন্দ্র দুই সরকারকেই বলেছি ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কোনও পথ নেই। দুই সরকারই উদাসীন। ২০২০-এর কমিটির রিপোর্ট সামনে আসেনি। ২০২১-তেও কমিটি হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে গাড়ি বসে আছে। ইএমআই ফেল, মেইনটেন্যান্স ও ইনসিওরেন্স রয়েছে। পরিবহণ ব্যবসা ভয়ানক পরিণতির দিকে এগোচ্ছে।"
গতবছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন এবার থেকে বাসের ভাড়া ঠিক করবে বাসমালিকরা। তারপর কমিটিও গঠিত হয়েছিল। তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মোটর ভেহিকেলস আইনে আছে ভাড়া ঠিক করবে রাজ্য সরকার। সরকার সেই আইন পরিবর্তন করে বলুক বাসমালিকরা ভাড়া নিজেরা ঠিক করবে। আইনও পরিবর্তন করবে না, আবার ভাড়া নিজেরা বাড়ালেও বিপদ। ভাড়া বৃদ্ধি না হলে কোনও ভাবে বাস চলাচল সম্ভব নয়।" তাঁর দাবি, "প্রতিদিন রাস্তায় বাস নামালেই লোকসান ১৫০০-২০০০টাকা। সরকার তো ভর্তুকি দিয়ে গাড়ি চালায়, আমরা কোথায় টাকা পাব?"
আরও পড়ুন- বেসরকারি বাস শূন্য কলকাতা, একই ছবি জেলার, চরম দুর্ভোগ যাত্রীদের
কলকাতায় বাস ও মিনিবাস মিলেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাস রয়েছে। রাজ্যে রয়েছে প্রায় ৪২ হাজার বাস। হাতে গোনা কয়েকটি রুট ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিডবিধি শিকেয় উঠেছে। বৃহস্পতিবার বাসে পা রাখার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। বাসমালিকদের একাংশ বলছেন, দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে এদিন কটা বাস চলছে।
"ডিজেল থেকে প্রতি লিটারে মোট ৫৮ টাকার ট্যাক্স নেয় দুই সরকার। কেন সরকার ডিজেলের দাম নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে না?" প্রশ্ন তুলেছেন তপনবাবু। তাঁর মতে, "সামগ্রিক অর্থনীতির কথাই ভাবা হচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ শিল্পে সংকট ভয়ানক। মালিকদের আত্মহত্যা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।" আগামিকাল থেকে পথে কি বাস নামতে পারে? "বাস নামানোর তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই", বলেন তিনি।
এদিন থেকে কোভিডবিধি শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। বহু মানুষ অফিস, ব্যবসা ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য পথে বেরিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়ে। এদিকে বন্ধ লোকাল ট্রেনও। ওয়েস্টবেঙ্গল বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু বলেন, "গাড়ি চলছে না। দু-একটা রুটে বাস চলছে। দুপুরের পর ওই গাড়িগুলিও বন্ধ হয়ে যাবে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণ মালিকরা করলেই যাত্রী পরিবহণ সম্ভব। কলকাতায় এদিন সাড়ে ৬হাজার বাস নামেনি। আমাদের ডিজেল কেনার পয়সা নেই। সমস্যার সমাধান না হলে বাস নামানো সম্ভব নয়।" কেন্দ্রীয় সরকারের ওপরই দায়ভার চাপিয়েছেন প্রদীপবাবু।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন