হিন্দি ভাষার আগ্রাসন নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। দেশের অহিন্দি ভাষী জনগোষ্ঠী হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে জোরদার প্রতিবাদের রাস্তায় নেমেছে। ইতিমধ্যে এরাজ্যে কলকাতা, জেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। শিক্ষা, প্রশাসন ও আইনের ক্ষেত্রে হিন্দি বাধ্যতামূলক হলে বাঙালিসহ অহিন্দি ভাষীদের কাছে সমূহ বিপদ বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। কীভাবে বিপদের সম্মুখীন হতে চলেছেন অহিন্দি ভাষীরা সেকথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানিয়েছেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার।
হিন্দি দিবসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ হিন্দি ভাষার সমর্থনে মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্রীয় সংসদীয় কমিটি উচ্চশিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষার ব্যবহার নিয়ে সুপারিশ করেছে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবী পড়ুয়ারা কীভাবে বাধার সম্মুখীন হবেন সেকথা বলেছেন পবিত্র সরকার। প্রবীণ শিক্ষাবিদ বলেন, 'শুধু বাঙালি নয়, সমস্ত অহিন্দি ভাষীদের কাছে বড় বিপদ। উচ্চশিক্ষা যদি পুরোপুরি হিন্দিতে হয় তা হলে সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউটগুলিতে অন্য প্রদেশের লোকেদের জায়গা কমে আসবে। যদিও অপশনাল বলেছে তবে তা সব জায়গায় থাকবে না। এবং ধরে নেওয়া হবে এরা ভারতে চাকরি করবে। এরা বিদেশে যাবে না, বিদেশে কাজকর্ম করবে না। একসময় আইআইটির ৫০ ভাগ পড়ুয়া বিদেশে চলে যেত। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বিদেশ যাওয়া কম হবে। সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউটে পড়তে হলে অনেকেই নতুন করে হিন্দি শিখে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ দেখাবে না।'
দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের ক্ষেত্রে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিলে বড় সর্বনাশ হতে পারে বলে মনে করছেন পবিত্রবাবু। তাঁর মতে, 'প্রশাসন জনসংযোগের ব্যাপার। যেখানে যে রাজ্যে যে ভাষা জনগণ বোঝে সে ভাষায় প্রশাসন চালাতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে অহিন্দিভাষীদের চাকরি কম হবে। হিন্দিভাষীরা এগিয়ে যাবে। অহিন্দিভাষীরা বঞ্চিত হবে।'
আরেকটি উল্লেখযোগ্য় দিক হল আইন, বলছেন পবিত্র সরকার। এক্ষত্রে সাক্ষী, অভিযোগপত্র, বিচারে সওয়াল-জবাব স্থানীয় ভাষায় হওয়া উচিত। তা নাহলে বিচারপ্রার্থীরা কিছু বিঝুতে পারবে না। খুব প্রয়োজন হলে একটা হিন্দি অনুবাদ রেকর্ড রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও জনসাধারণের অধিকার ক্ষুন্ন হবে যদি হিন্দি ভাষা চাপানো হয়।'
তবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিন্দি বলা নিয়ে আপত্তি নেই পবিত্র সরকারের। সেক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা দেখছেন না তিনি। তিনি বলেন, 'সেখানে অনুবাদের ব্যাপার থাকে। উচ্চশিক্ষা, প্রশাসন ও আইন তিনটে জায়গায় অন্যদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। বৈষম্য বাড়বে। হিন্দিভাষীদের অকারণ প্রাধান্য হবে। জোর করে হিন্দি সেখানোর কোনও অর্থ হয় না। গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে এটা একেবারে অনুচিত বলে আমি মনে করি।'