Advertisment

Special: 'ভোটে ঠিকই বুঝাই দেবে', ক্ষোভে ফুটছে জঙ্গলমহলের একাংশ

দুর্নীতি, অনুন্নয়ন তো আছেই, সঙ্গে জোটেনি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা। আর তাতেই...

author-image
Joyprakash Das
New Update
Lead

সর্বত্র একই অভিযোগ। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

রানীবাঁধ থেকে বারিকূল যাওয়ার ৪-৫ কিলোমিটার আগে বাদিকে কাঁচা-ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে ভিতরে জঙ্গলের দিকে ঢুকেছে। ভিতরের গ্রামে ঢোকার একটু আগেই রাস্তার পাশে বসে মহুয়া ফলের খোসা ছাড়াচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী রবিলোচন মান্ডি ও সীতামনি মান্ডি। এই বীচ দিয়ে তাঁরা তেল তৈরি করবেন। ওই তেল রান্নাতেও ব্যবহার করা হয়, আবার ব্যথা-বেদনা নিরাময় করে। বললেন, রবিলোচনবাবু। কি হবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে? রবিলচনের স্পষ্ট জবাব, 'এবার কি হবে বলা যাবে না। ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবেন নির্বাচনী প্রচার সেরে গিয়েছে সব রাজনৈতিক দল।' রবিলোচনের দাবি, 'সরকারি কোনও ভাতাই পাই আমরা দু'জনের কেউই। কি জানি কবে জুটবে।'

Advertisment
publive-image
রাউতারা গ্রামে রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল। রাস্তার পাশাপাশি এখানেও রয়েছে জলের সঙ্কট। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

জঙ্গলমহলে পাহাড়-জঙ্গলের আড়ালে থাকা গ্রামগুলি মূল রাস্তা থেকে ঠাহর করা যায় না। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে একটু ভিতরে ঢুকলেই সন্ধান মিলবে গ্রাম, মানুষজনের। ভৈরববাঁকি নদীর পাশেই ধোবাকচা গ্রাম। গ্রামে বাস মাত্র ৩০টি আদিবাসি পরিবারের। নলকূপবাহিত জল গ্রামে এসেছে। আগে নদীর জল পান করত গ্রামের লোকজন। গ্রামে ঢোকার রাস্তা নিয়ে বড় অভিযোগ। তাছাড়া আবাস যোজনায় বাড়ি না পাওয়ার ক্ষত রয়েছে এই গ্রামে।

publive-image
বাঁকুড়ার বারিকূল গ্রামের বেহাল রাস্তার অবস্থা। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

রাউতারা পঞ্চায়েতের চুরকুরের রাস্তা দিয়ে বাস চলাচলই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে এলাকার বাসিন্দারা পথ অবরোধ করে ভোটবয়কটের ডাকও দিয়েছিল সম্প্রতি। পুলিশ-প্রশাসন এসে আশ্বাস দেওয়ায় আপাতত চুরকুরের গ্রামবাসীরা ভোট বয়কট থেকে সরে এসেছে। ৫৭ বছরের সুশান্ত টুডু বলেন, 'এই রাস্তা দিয়ে ঝিলিমিলি ভায়া বারিকূল বাঁকুড়া বাস চলত। রাস্তা খারাপের জন্য় বাস বন্ধ রয়েছে। নিয়মিত দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। এখন ৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাস ধরতে হয়।'

publive-image
গোবিন্দসোল গ্রামে বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক মিটার রাস্তা পঞ্চায়েত থেকে ঢালাই করেছে। এরপর বাকি রাস্তা খুবই খারাপ। কেউ অসুস্থ হলে নিয়ে যেতে হয় কাঁধে করে। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

তবে ক্ষোভ রয়েছে এখানকার প্রধান শীলাবতী বেসরার বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীদের বক্তব্য়, 'যা উন্নতি হয়েছে প্রধান-উপ্রধানের।' অশ্বিনী হেমব্রম বলেন, 'নাম থাকলেও আবাস যোজনার বাড়ি পায়নি অনেকেই। প্রয়োজনীয়দের নাম তালিকা থেকে উবে গিয়েছে।'

publive-image
রাস্তার ধারে বসে মহুয়া ফলের খোসা ছাড়াচ্ছেন স্বামী-স্ত্রী রবিলোচন মান্ডি ও সীতামনি মান্ডি। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

রাউতারা অঞ্চলের গোবিন্দসোল গ্রামে ঢুকতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ল বাসিন্দারা। নির্মল হেমব্রম বলেন, 'রাস্তা খুবই খারাপ। বৃষ্টি হলে তো সর্বনাশ। মাঝে কয়েক মিটার রাস্তা পঞ্চায়েত ঢালাই করেছে। তার আগে পরে হাঁটাই দায়। এক বছর আগে ট্যাপকল এলেও জল পাওয়া যায় না।' সুখচাঁদ বাস্কে, রাইমনি বাস্কেদের তালিকায় নাম থাকা সত্বেও জোটেনি আবাস যোজনার বাড়ি। রাইমনির কথায়, 'জানুয়ারি মাসে ঘর পাব ভেবেছিলাম। শুধু বলছে অমুক মাসে পাব, আবার বলছে অন্য় আরেক মাসে পাব। গরীব মানুষ জেরক্সের টাকা কোথায় পাবে? মনে হচ্ছে যেন ভোটই দেব না।' এই গ্রামে ঢোকার মুখেই বাড়ি রামপদ হেমব্রমের। ছোটবেলায় মৃত্যু হয়েছে বাবা-মায়ের। প্রতিবেশিদের তত্বাবাধানেই বড় হয়েছে। মাঠের কাজ করে কোনওরকমে দিনযাপন করে রামপদ। সেই রামপদও আবাস যোজনার ঘর পায়নি বলে ক্ষোভ ফেটে পড়েছে গ্রামবাসীরা।

publive-image
ধোবাকাচা গ্রামের চরম জলসঙ্কটে ভুগছে গ্রামবাসী। টাইম কল এলেও তাতে জল আসে না। এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ

গ্রামের লোকজন এক জায়গায় জড় হতেই সেখানে আসেন বছর পঞ্চাশের মহন্ত হেমব্রম। ৩ বিঘে জমিতে কোনওরকমে সংসার চলে মহন্তর। তিনি বলেন, 'ভোটের অবস্থা খারাপ হবে। ভোটে ঠিকই বুঝাই দেবে। সবই আসছে নীচের তলার নেতারা খেয়ে নিচ্ছে।' বারিকূল ও রাউতারা(ঝিলিমিলি) অঞ্চলের গ্রামগুলিতে কম বেশি একই ক্ষোভ কমবেশি শোনা গেল।

আরও পড়ুন- অনেক কিছুর মতই নেই প্রচারের কোলাহল, জঙ্গল-পাহাড়ঘেরা নির্জনতায় একটি গ্রামে একটিই পরিবারের বাস!

রানীবাঁধ ব্লক তৃণমূল সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাহাত বলেন, 'প্রধান বা সদস্য়দের সম্পত্তি বৃদ্ধির কথা যাঁরা বলছেন তাঁরা চক্রান্ত করছেন। ২০২০ ও ২০২১ লকডাউনের সময় তহবিলের ঘাটতির জন্য় সম্পূর্ণ কাজ করতে পারিন। পরবর্তীতে তা করব। কিছু কিছু আসন বিরোধীরা পাবে তবে রাউতারা, বারিকূলসহ রানীবাঁধের ৮টি গ্রামপঞ্চায়েতই দখল নেব, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।'

panchayat election 2023 Bankura Jungle Mahal
Advertisment