'দ্য়া কাশ্মিরী ফাইল' বিতর্কে তোলপাড় হয়েছে দেশ। কলকাতায় বই স্বাক্ষরের স্থান পরিবর্তন করে টুইট করে ফের বিতর্কে জড়ালেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। তবে কোয়েস্ট মল সংলগ্ন বাসিন্দারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন একেবারে ভুল বার্তা দিতে চেয়েছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। তিনি এখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই এমন মন্তব্য করেছেন। তৃণমূল বলছে বিজেপির তৃণমূল বলছে বিজেপির ক্য়াটালিষ্টের কাজ করেছেন বিবেক।
বিবেক অগ্নিহোত্রীর আরবান নকশাল শীর্ষক বই স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল পার্কসার্কাসের কোয়েস্ট মলে। তিনি টুইট করে জানিয়ে দেন, তিনি জেনেছেন কোয়েস্ট মল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা বলে নিরাপদ নয়, তাই সেখান থেকে সরিয়ে সাউথ সিটি মলের কথা বলেছেন। তাঁর এই মন্তব্যে পার্কসার্কাস এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া বিজেপির ভেদাভেদ রাজনীতি প্রয়োগ করেছেন বিবেক। কোয়েস্ট মল কতৃপক্ষ ও পুলিশ-প্রশাসন এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি।
দীর্ঘবছর ধরে পার্ক সার্কাস এলাকায় রয়েছেন মহম্মদ এনায়েত হোসেন। বিবেক অগ্নিহোত্রীর টুইট প্রসঙ্গে বলেন, 'চার্চ, মন্দির, মসজিদ সব এখানে আছে। উনি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। আমরা বেশ শান্তিতে আছি। এই তো নামাজ পড়ে ফিরছি। কোনও অশান্তি নেই। জন্ম থেকেই এখানেই আছেন ফয়জল। তিনি বলেন, 'যে টুইট করেছেন সে কি কখনও এখানে এসে থেকেছেন? এটা কি ওনার মহল্লা? বাইরে থেকে যা খুশি বলতে পারেন। যেখানে খুশি থেকে পার্কসার্কাসের বদনাম করবেন! আমরা এখানে একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করি। পার্সি লোক আছেন, তাঁদের কোনও সমস্যা আছে? খুব ভাল জায়গা।'
কাজের সূত্রে সারা দিন এখানেই কেটে যায় শ্যামসুন্দর ঢালির। শ্যামসুন্দর বলেন, 'বিবেক অগ্নিহোত্রী একেবারেই ঠিক বলেননি। এখনে অনুষ্ঠান হলেও কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না।' জন্ম থেকেই এই এলাকায় যাতায়াত করেন রবীন হালদার। তাঁর বক্তব্য, 'কোনও অসুবিধা নেই। এখানে হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে থাকে, কোনও ঝামেলা নেই।' স্থানীয় বাসিন্দা এমডি জামিরের বক্তব্য, 'মুসলিম বা হিন্দু যে এলাকাই থাকুক এটা নিয়ে বলা উচিত নয়। আমরা হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই হিসাবে থাকি। এখানে দুর্গাপুজো হয়, এখানে ঈদ পালন করি। এখানে অনেক বলিউড অভিনেতা আসে, অনেক খেলোয়াড় আসে। কখনও সমস্যা হয়নি।'
তৃণমূল কংগ্রেস বিবেক অগ্নিহোত্রীর টুইটকে বিজেপির বক্তব্য হিসাবেই দেখছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির শরিক কাশ্মিরী ফাইলের পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রতিক্রিয়ায় বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, প্রথমত, 'তিনি ভুল তথ্য়ের ওপর কাশ্মিরী ফাইল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বিজেপির রাজনীতি হচ্ছে হিন্দু-মুসলমানকে কেন্দ্র করে ভোট ভাগাভাগি করা। যাতে বিজেপির সুবিধা পায়। বিবেক অগ্নিহোত্রী এই রাজনীতিতে ক্যাটালিস্টের কাজ করছে। বিজেপি তো মানুষ দেখে না হিন্দু-মুসলমান দেখে।' আরবান নকশাল টার্মটাও নরেন্দ্র মোদি বা বিজেপির পছন্দের টার্ম বলে মন্তব্য করেন অরূপ চক্রবর্তী।
বিজেপির দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভানেত্রী সংঘমিত্রা চৌধুরী বলেছেন, ''একদম ঠিক বলেছেন বিবেক অগ্নিহত্রী। মানুষ কি ভুলে গিয়োছে যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে কি ভাবে নিগৃহীত করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে, বুদ্ধা ইন আ ট্রাফিক জ্যাম স্ক্রিনিং এ? এই তো ক'দিন আগে রাম নবমীর মিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার হল সালকিয়াতে। কারা করেছিল? কোয়েস্ট মলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠবে এটাই স্বাভাবিক। চুড়ান্ত রকমের তোষণের রাজনীতি চলছে বাংলায়। কি ঘটছে তা সারা পৃথিবীর মানুষ জানে। এ জন্যই বিজেপি, অ-বিজেপি বলে তকমা দিয়ে নিজেদের অপদার্থতাকে ঢাকার চেষ্টা নয় কি?'