দুর্নীতির অভিযোগে তিনি জেলবন্দি। খুইয়েছেন মন্ত্রিত্ব। তৃণমূল থেকেও সাসপেন্ড। দলের স্বচ্ছতা তুলে ধরতে আপাতত তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপকেই তুলে ধরছে রাজ্যের শাসক দল। এসবের মধ্যেও নেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে মুখ খোলেননি দল থেকে তাঁকে সাসপেন্ড ঘোষণাকারী তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রসঙ্গে। এবার সেটাও করলেন। সোমবার জেল থেকে তাঁকে আদালতে পেশের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আওড়ালেন তৃণমূলের অপসারিত মহাসচিব। করলেন অভিষেক ও তাঁর নেতৃত্বাধীন 'নব-জোয়ার' কর্মসূচির প্রশংসা।
আদালতে পেশে সময় এ দিন সাংবাদিকদের দেখেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'একটা কবিতা বলব।' এরপরই পুলিশের গাড়িতে নামতে নামতে তিনি কবিগুরুর লেখা 'বিম্ববতী' কবিতার পংক্তি আওড়ান। বলেন, 'মসী লেপে দিল তবু ছবি ঢাকিল না, অগ্নি দিল তবু গলিল না সোনা।' পঞ্চায়েতের আগে রাজ্যের শাসক দলের অপসারিত মহাসচিবের মুখে এহেন কবিতা ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অর্থাৎ এমনই খাঁটি সোনা তিনি যে তাঁকে অগ্নিস্পর্শেও গলান যাবে না, সেটাই কী বলার চেষ্টা করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়?
এরপরই তৃণমূলের প্রাক্তন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পার্থ চট্টোপাধ্যায়ে কাছে অভিষেকের বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন 'নব-জোয়ার' কর্মসূচি সমন্ধে জানতে চান। জবাবে চেঁচিয়ে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত জেলবন্দি পার্থ বলেন, 'অভিষেকের নবজোয়ার ১০০ শতাংশ সফল।' এখানেই না থেমে থেকে তিনি বলেন, 'অভিষেকের নবজোয়ার আসলে জনজোয়ার।'
আরও পড়ুন- বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরেছে মামলা, অভিষেককে পার্টি করতে নির্দেশ হাইকোর্টের
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত মার্চে শহিদ মিনার থেকে তৃণমূলের ছাত্র-যুবদের বৈঠকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, তৃণমূল দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। তার প্রমাণ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত৷ এরপরও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেকের ওই মন্তব্যে সরাসরি কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে বলেছিলেন যে, 'অভিষেকের মন্তব্যে নিয়ে কিছু বলব না৷ কিন্তু দলের কাছে প্রমাণ করব, আমি কোনও অন্যায় করিনি৷ আমি মন্ত্রী ছিলাম, নিয়োগ কর্তা না৷' তবে বারবার দলনেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা শোনা গিয়েছে পার্থর মুখে। দাবি করেন, 'কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে মমতার লড়াই চিরকাল ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার হয়ে লড়াই করার সংগ্রামী নেত্রী। তিনি বাংলার ভাগ্য দেখবেন, উন্নয়ন দেখবেন। উনি বাংলার টাকা উদ্ধার করবেন। বিনা বিচারে জেল বন্দি হয়ে পরে আছি। সত্য একদিন বেরোবে। মমতার উপরে একশো শতাংশ ভরসা আছে৷'
আসলে দল তাঁকে বহিস্কার করলেও তিনি যে এখনও দলের অনুগত সেটাই যেন বারংবার প্রমাণে মরিয়া জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।