তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভায় বলেছিলেন, ৫ মিনিটের জন্য দরজা খুলবো নাকি? তার আগেই বলেছেন, লকগেট খুললে হুড় হুড় করে সব ঢুকে যাবে। দরজা খোলার পাল্টা হুংকার ছিল জানলা খুলবো নাকি, বলেছিলেন খড়গপুরের বিজেপি সাংসদ হিরণ চট্টোপাধ্যায়। যাকে নিয়েই ছিল দলবদলের প্রবল জল্পনা। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর দাবি, একাধিক তৃণমূল বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, রাজনীতির ময়দানে এসব দাবি, পাল্টা দাবি চলতেই থাকে। তবে বঙ্গ রাজনীতিতে দলবদল থমকে কেন? তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে।
বিজেপি বিধায়ক অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের দলবদল বিতর্ক প্রসঙ্গ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির দাবি ছিল, কেশপুরে ৪ ফেব্রুয়ারি অভিষেকের জনসভা বা তার আগে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বিজেপি বিধায়ক বা নেতৃত্ব। তা অবশ্য এখনও দেখা যায়নি। কিন্তু দলবদল বন্ধ কেন? তাহলে কী তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব নয়া কৌশল নিয়েছে? নাকি দলবদলুদের চুক্তি না-পসন্দ?
বিগত কয়েক বছর ধরে দলবদলের রাজনীতি দেখতে দেখতে ক্লান্ত বাংলার মানুষ। সকাল-বিকেল দল পাল্টে ফেলছে। কালীঘাট থেকে ঘুরে দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে গেরুয়া উত্তরীয় পড়ে নিয়েছে। চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি উড়ে গিয়েছে। ২০২১ বিধানসভার পর আবার এদের অনেকেই সুরসুর করে তৃণমূলের ঘাসফুলে গিয়ে ভিড়েছেন। সামনেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন, তারপরই লোকসভা ভোট। ফের এই পোশাক বদলের দৃশ্য দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আরও পড়ুন- বীরভূমে বোমা ফেটে জোড়া মৃত্যু, পুলিশ সুপারকে সরালেন মমতা
রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবার আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না তৃণমূল শিবির। স্থানীয় স্তরে দলবদল করলে টিকিটের দাবিদার যেমন বাড়বে তেমনই দলের আদি কর্মীরা ক্ষুব্ধ হবে। একেই স্থানীয় নেতৃত্বের রেষারেষিতে দলের জেরবার অবস্থা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেশপুরের জনসভায় তা স্বীকারও করেছেন। স্থানীয় স্তরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঝুঁকি রয়েছে, আর পরবর্তীতে রয়েছে লোকসভার টিকিটের দাবিদার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। রাজ্যস্তরের বিরোধী নেতৃত্ব দলে এলেই সেই সমস্যা তৈরি হবে।
আরও পড়ুন- কুন্তলকে টেনে সায়নীকে ‘টিপ্পনি’, সৌমিত্রকে ‘কড়া শবক’ সায়নীর
অভিজ্ঞ মহলের মতে, পঞ্চায়েত বা লোকসভার প্রার্থী হওয়ার দাবিদার তো বাড়বেই, তা নাহলে অন্য কোনও বিশেষ সুবিধা না পেলে দলবদল করবেই বা কেন? রাজনৈতিক প্রমোশন বা সুবিধা ছাড়া দলবদল কি সম্ভব? একসময় তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল, সারদা কাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মুকুল রায় সহ তৃণমূলের একাধিক নেতৃত্ব। পরবর্তীতে মুকুল রায় সপুত্র তৃণমূলে ফিরে যান। সেক্ষেত্রে নানা পুলিশ ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে তিনি তৃণমূল ফিরেছেন বলে বিজেপি দাবি করে। এমনকী বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তৃণমূলের কাউন্সিলর হয়ে কাঁচরাপাড়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, ঠিকঠাক দর না পাওয়ায় আপতত বড় ধরনের দলবদল ঘটছে না।