বেহাল অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা থানার অন্তর্গত বিধবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের শিবপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বাম আমলে তৈরি হওয়া বর্ধমান জঙ্গলমহলের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই মুহূর্তে আক্ষরিকই বেহাল দশা। ঝোপঝাড়ে ঢাকা এই প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র গরু, ছাগলের বাসস্থলে পূর্ণ হয়েছে। প্রায় সর্বত্রই উইঢিবি। দেওয়াল ঘেরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখন এলাকার সাধারণ মানুষের যাতায়াতের শর্টকাট রাস্তা।
আরও পড়ুন- কাঁচিতে কাটল সদ্যজাতর বুড়ো আঙুলের ডগা, অভিযুক্ত জুনিয়ার ডাক্তার
তবে এমন অবস্থার মধ্যেই শিবপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও বসেন একজন করে হোমিওপ্যাথিক এবং অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার। অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার মাঝে মধ্যে অনুপস্থিত হলে হাসপাতালের ফার্মাসিস্টরাই ওষুধ দিয়ে দেন রোগীদের। হাসপাতালের করুণ দশা এবং ডাক্তারদের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণেই হাসপাতালের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন স্থানীয়রা। দশ-পনেরোটি শয্যা এবং ডাক্তারদের নিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। অল্পদিনের মধ্যেই চিকিৎসার সুনামের জেরে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছিল যথেষ্ট। কিন্তু হঠাৎ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে একে একে সব জিনিস চুরি হয়ে যেতে থাকল এবং কিছুদিনের মধ্যেই বেহাল হল পরিষেবা।
ভেঙ্গে পড়ছে ছাদ, ফাটল দেওয়াল মেঝেতে। ছবি- অনির্বাণ কর্মকার
আরও পড়ুন- রাস্তার হাল ফেরানোয় ‘গড়িমসি’, পঞ্চায়েতে ক্ষোভ স্থানীয়দের
বিধবিহার গ্রামের এই একটিই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর সেটিরই এমন হাল হওয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শিবপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল দশায় সবথেকে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হয় এলাকার গর্ভবতী মহিলারা। হঠাৎ কোনও শারীরিক সমস্যায় পড়লে এলাকাবাসীকে দৌড়তে হয় কুড়ি কিলোমিটার দূরের দূর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। তবে জানা যাচ্ছে, তৃণমূল সরকারের আমলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশ কিছু ডাক্তার নিয়োগ করা হয়েছে। যদিও ভগ্নপ্রায়, ফাটল ধরা হাসপাতালের এই ছাদের তলায় ডাক্তাররা বসেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই।
হাসপাতালে বসেন দুজন মাত্র ডাক্তার। ছবি- অনির্বাণ কর্মকার
বর্তমান সরকারের আমলে কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করছেন এলাকার বাসিন্দারা। এক স্থানীয় বলেন, "বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসায় কিছুটা আশার আলো দেখছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। আগের মতো চিকিৎসা শুরু হলে বহু সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান হবে"। তবে ভগ্নপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র কি ফিরে পাবে তাঁর আগের জৌলুস, মানুষের মনে ফিরবে কি আস্থা, বিধবিহারের সাধারণ মানুষের চোখে মুখে এখন এই প্রশ্নগুলিই উঁকি মারছে।