সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বগটুই-হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের। লালনের মৃত্যুর দায় নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। সিবিআইয়ের দাবি, 'আত্মহত্যা' করেছেন লালন। রাজ্যের শাসক দলের নিশানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল। প্রশ্ন তোলা হয়েছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। এসবের মধ্যেই মঙ্গলবার রামপুরহাট মেডিক্যালে হবে লালন শেখের দেহের ময়না তদন্ত। মৃতের আত্মীর, প্রতিবেশীরা সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসের সামনে ধর্নায় বসেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের শাস্তির দাবির করছেন তারা। লালনের মৃত্যুর ঘটনায় এবার কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে।
লালন শেখের মৃত্যুর কারণ জানতে বর্তমান কোনও বিচারপতির পর্যবেক্ষণে তদন্ত করুক কলকাতা হাইকোর্ট। এই আবেদন জানিয়ে আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলার আবেদন করেন। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। চলতি মাসেই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে হলে আদালত সূত্রে খবর।
গত ২১ মার্চ রাতে ভাদু শেখ খুন হন। তার পর ওইদিন রাতেই তাণ্ডব চলে বগটুই গ্রামে। বাড়িতেই জ্যান্ত পুড়িয়ে নৃশংস হত্যা করা হয় ১০ জনকে। তার মধ্যে শিশুও ছিল। এই ঘটনার বীভৎসতায় গোটা বাংলা কেঁপে উঠেছিল। তার পর ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনার ৯ মাস পর ৪ ডিসেম্বর মূল অভিযুক্ত লালনকে ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার করে সিবিআই। রাখা হয় রামপুরহাটের সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে।
আরও পড়ুন- ‘এত মেরেছিল, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারত না’, সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ লালনের পরিবারের
সোমবার বিকেলে রামপুরহাটের অস্থায়ী সিবিআই ক্যাম্পের শৌচাগারে গামছা গলায় জড়ানো অবস্থায় বগটুই গণহত্যার মূল অভিযুক্ত লালন শেখের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। সিবিআইয়ের দাবি, লালন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের এই যুক্তি অবস্য মানতে নারাজ লালনের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্যরা। লালনের স্ত্রীর অভিযোগ, 'আমার বাড়ি শেষ করে দিয়েছে সিবিআই। ভাদুর ভাইরা আমাদের ফাঁসিয়েছে। আমার স্বামীকে মেরে দিয়েছে সিবিআই। আমার সামনে আজকে মারল। আমাকেও মেরেছে সিবিআই।' লালনের দিদি সোমবার রাতেই বলেছিলেন যে, 'ওঁকে সিবিআই এত মেরেছিল যে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। ওঁকে জল পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। আমরা সিবিআইয়ের শাস্তি চাই।'
গতকালই রামপুরহাটের বগটুই কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তকারী তিন আধিকারিক বিলাস মাহাতগড, ভাস্কর মণ্ডল, ও রাহুলের নামে অভিযোগ মৃত লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবির। রাতেই এই তিন আধিকারিকের নাম উল্লেখ করে রামপুরহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি ৫০ লক্ষ টাকা ঘুস চাওয়ায় অভিযোগ সিবিআই এর বিরুদ্ধে। বর্তমানে লালনের স্ত্রী রেশমা বিবি হাসপাতে ভর্তি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।
এদিকে হেফাজতে লালন শেখের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেসিবিআই। সোমবার রাতেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দিল্লির সদর দফতরে পুরো ঘটনার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।