/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/16/z3AFnsnp66iRMMZiKaeR.jpg)
সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী
PM Modi Honoured With Cyprus Highest Civilian Award: সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ সাধারণ সম্মান পেলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, অভিভূত প্রধানমন্ত্রী, বললেন এই সম্মান '১৪০ কোটি ভারতীয়ের সম্মান’।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ সাধারণ সম্মান ‘গ্র্যান্ড ক্রস অফ দ্য অর্ডার অফ ম্যাকারিওস III’ প্রদান করা হয়েছে। রবিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় সাইপ্রাস সফরের সময় তাকে এই সম্মানে ভূষিত করেন সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি নিকোস ক্রিস্টোডুলিডেস। বিশ্ব নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং ভারত-সাইপ্রাস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে মোদীর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সম্মান প্রদান করা হয়েছে। সম্মান গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন,“আমি এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মান বিনয়ের সঙ্গে গ্রহণ করছি। এটি কেবল আমার নয়, বরং ১৪০ কোটি ভারতীয় নাগরিকের সম্মান।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার (১৫ জুন) চার দিনের বিদেশ সফরে রওনা হয়েছেন। ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত তাঁর এই সফরে তিনি সাইপ্রাস, কানাডা এবং ক্রোয়েশিয়া সফর করবেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি কানাডায় অনুষ্ঠিত হতে চলা G-7 শীর্ষ সম্মেলনেও অংশ নেবেন। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা ও ভারতের 'অপারেশন সিন্দুর'-এর পর এটাই প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। এই প্রেক্ষাপটে মোদীর বিদেশ সফর কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সাইপ্রাস সফরে মোদী: তুরস্ক ও পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের প্রথম গন্তব্য সাইপ্রাস। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায় পৌঁছালে প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিডেস তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানান। মোদীর এই সফর কূটনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত তুরস্ক ও পাকিস্তানের মাখোমাখো সম্পর্কের প্রেক্ষিতে।
তুরস্ক সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে ভারতের বিরোধিতা করেছে। বিপরীতে, সাইপ্রাস প্রকাশ্যে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাক-স্পন্সরড সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তোলার ইঙ্গিত দিয়েছে সাইপ্রাস।
তুমুল বিক্ষোভের মুখে দমকলমন্ত্রী, অগ্নিকাণ্ডের পর খিদিরপুরে সুজিত বসুর সঙ্গে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা
দুদশকে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাইপ্রাস সফর
বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সাইপ্রাস সফরে গেলেন। এর আগে ১৯৮৩ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও ২০০২ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী সাইপ্রাস সফর করেছিলেন।সাইপ্রাস সফরে মোদী সেদেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এই সফরের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার বার্তা দিচ্ছে দিল্লি।
তুরস্ক-সাইপ্রাস বিরোধ এবং মোদীর কৌশলগত অবস্থান
১৯৭৪ সালে তুরস্ক উত্তর সাইপ্রাসে সামরিক অভিযান চালায় এবং অঞ্চলটি দখল করে নেয়। বর্তমানে সাইপ্রাসের দুই-তৃতীয়াংশ গ্রিক সাইপ্রিয়টদের দ্বারা শাসিত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ, বাকি এক-তৃতীয়াংশ তুর্কি অধিকৃত “উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি প্রজাতন্ত্র”, যেটিকে কেবলমাত্র তুরস্ক স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, মোদীর সাইপ্রাস সফর ভারতের 'তুর্কি-বিরোধী' বার্তাকে আরও স্পষ্ট করেছে। বিশেষত পাকিস্তানের সঙ্গে তুরস্কের সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতার বিরুদ্ধে।
ক্রোয়েশিয়া সফর ও ইউরোপে ভারতের কৌশলগত বিস্তার
সাইপ্রাস সফরের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী কানাডা যাবেন জি-৭ সম্মেলনে যোগ দিতে। এরপর তিনি ক্রোয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে প্লেঙ্কোভিচের আমন্ত্রণে ১৮ জুন ক্রোয়েশিয়া সফর করবেন। এই সফরের মাধ্যমে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি আরও সুসংহত হবে
সাইপ্রাস দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য ভারতের দাবিকে সমর্থন করে আসছে। পাশাপাশি,NSG ও IAEA-তে ভারতের সদস্যপদে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে।
বর্তমানে ভারত ও সাইপ্রাসের মধ্যে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, যা আরও বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই সফর শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার ক্ষেত্রেই নয়, বরং তুরস্ক ও পাকিস্তানকে কৌশলগতভাবে মোকাবিলার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
G-7 সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার (১৫ জুন) পৌঁছালেন সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোসিয়ায়। এই সফর শুধু এক প্রথাগত কূটনৈতিক সফর নয়, বরং তুরস্ক ও পাকিস্তানের প্রতি ভারতের একটি জোরালো বার্তা।
ইরান-ইজরায়েল উত্তেজনার মাঝেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশ্ব কাঁপানো হুঁশিয়ারি, ভয়াবহ সংঘাতের বিরাট সম্ভাবনা
তুরস্ক-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা এবং মোদীর বার্তা
গত কয়েক বছরে তুরস্ক পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। রাষ্ট্রসংঘে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক। সেই প্রেক্ষাপটে মোদীর এই সফরে ভারত যে পাল্টা বার্তা দিতে প্রস্তুত—তা পরিষ্কার।
IMEC করিডোরে সাইপ্রাসের সম্ভাব্য ভূমিকা
ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডোর (IMEC)-এ সাইপ্রাসের সম্ভাব্য ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সাইপ্রাস সফর ভারতের পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের প্রবেশাধিকার বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাসী ভারতীয়দের বার্তা ও কাশ্মীর ইস্যু
সাইপ্রাসে বসবাসকারী ভারতীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বে মোদী জানান, “এই সফর ভারত-সাইপ্রাস সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।” প্রবাসীরা কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
ভারত-সাইপ্রাস বাণিজ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মোদী জানান, “বর্তমানে ভারত ও সাইপ্রাসের মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, তবে আগামী দিনে সম্ভাবনা আরও অনেক বেশি।” সাইপ্রাস স্টক এক্সচেঞ্জ এবং NSE গুজরাট GIFT City-তে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ভারত-ইইউ ফ্রি ট্রেড চুক্তি (FTA) সম্পন্ন করার লক্ষ্য রয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই।