‘হে বিধাতা দাও দাও দাও মোদের গৌরব দাও’ দিয়ে শুরু, আর ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’ দিয়ে শেষ। বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে শুরু থেকে শেষ মোদীর ভাষণে জুড়ে রইলেন বিশ্বকবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘যদি কেউ তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ কিংবা ‘ওরে নতুন যুগের ভোরে’, আবার কখনও শোনা গেল ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য়, উচ্চ যেথা শির’। বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এভাবেই ফের রবি-স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন ভার্চুয়াল মাধ্য়মে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নমো বলেন, ‘‘উনি আমাদের গ্রাম, কৃষি, বাণিজ্য়ে আত্মনির্ভর দেখতে চেয়েছিলেন। নয়া ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর অবদান রয়েছে’’। আবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুজরাত যোগ নিয়েও এদিন মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী, যা রাজনৈতিকভাবে অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
কবিগুরুর গুজরাত যোগ প্রসঙ্গে এদিন মোদী বলেন, ‘‘গুরুদেবের বড় ভাই সত্য়েন্দ্রনাথ ঠাকুর আইসিএসে ছিলেন যখন, ওঁর নিয়োগ গুজরাতের আহমেদাবাদে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায়শই গুজরাত যেতেন। ওখানে বেশ লম্বা সময় কাটিয়েছেন। আহমেদাবাদে থাকাকালীন ‘বন্দি ও অমর ’ ও ‘নীরব রজনী দেখো’ লিখেছিলেন। ক্ষুধিত পাষাণের একটা অংশ ওখানে লিখেছিলেন উনি...সত্য়েন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী যখন আহমেদাবাদে ছিলেন, তখন দেখলেন, স্থানীয় মহিলারা শাড়ির আঁচল ডানদিকে রাখতেন। এর ফলে কাজ করতে মহিলাদের সমস্য়া হত। বাঁ দিকে শাড়ির আঁচলের প্রচলন উনিই চালু করেন, লোকে তাই বলে’’।
আরও পড়ুন: ‘বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান’! বিজেপির টুইটে শোরগোল, টিপ্পনী তৃণমূলের
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন প্রত্য়েক ভারতবাসীর কাছে গর্বের বিষয়। এটা আরাধ্য় জায়গা। এই প্রতিষ্ঠান দেশকে শক্তি জুগিয়েছে’’। মোদী আরও বলেন, ‘‘নয়া ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর অবদান রয়েছে। বিশ্বভারতী মানেই গুরুদেবের চিন্তন, দর্শন জুড়ে রয়েছে’’।
প্রধানমন্ত্রী আরও বললেন, ‘‘প্রকৃতির সঙ্গে মিলে অধ্য়য়ন ও জীবনচর্যার উদাহরণ বিশ্বভারতী। স্বাধীনতা আন্দোলনেও এই প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে। ভারতের শিক্ষাব্য়বস্থাকে নতুন রূপ দিয়েছে বিশ্বভারতী’’।
পৌষমেলা প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘‘এই অতিমারীতে এবার পৌষমেলা হচ্ছে না এখানে। পৌষমেলা সরকারের ভোকাল ফর লোকাল স্লোগানের আক্ষরিক রূপ। পৌষমেলায় আসা শিল্পীদের তৈরি পণ্য় অনলাইনে বিক্রির উদ্য়োগ নিন’’।
ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী, বীণা দাস, প্রীতিলতা ওয়েদেদ্দারদের নামও এদিন মোদীর মুখে শোনা গিয়েছে। মোদী বলেন, ‘‘ভারতের আত্মা, আত্মসম্মান, আত্মনির্ভরতা একে অপরের সঙ্গে সংম্পৃক্ত। দেশের স্বাধীনতা বাঙালিদের অবদান উল্লেখযোগ্য়। এঁরা সকলে হাসতে হাসতে দেশের আত্মসম্মান বজায় রাখতে নিজেদের জীবন দিয়েছেন’’।
উল্লেখ্য়, একুশের মহারণের আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বারবার ফিরে এসেছে বিশ্বকবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। লকডাউন পর্বে মোদীর সাদা দাড়ি দেখে অনেকেই বলেছেন, তাঁকে নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দেখাচ্ছিল। অন্য়দিকে, ‘মন কি বাত’-এ খেলনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনার কথাও তুলে ধরেছিলেন মোদী।
আরও পড়ুন: শাহী-ভোজের পর খোঁজ নেননি বিজেপি নেতারা, বাউল শিল্পীর মেয়ের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব নিল তৃণমূল
কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিও রবীন্দ্র ভাবনায় অনুপ্রাণিত, একথা বলেছিলেন নমো। বারবার মোদীর রবি-স্মরণ দেখে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি বাংলায় বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শরণাপন্ন হয়েছেন মোদী। একুশের নির্বাচনের আগে মোদীর এহেন রবি-স্মরণ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মলের একাংশ।
সম্প্রতি বোলপুরে পা রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বোলপুরে শাহের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দিয়ে হোর্ডিং ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আবার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান বিশ্বভারতী বলে বঙ্গ বিজেপির টুইট ঘিরেও বিতর্ক হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে মোদীর বক্তব্য় উল্লেখযোগ্য় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
অন্য়দিকে, বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এদিন টুইট করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন