Motivational News: ছয় ছয়টি ঘোড়া, গোটা দশেক ছাগল, দুটি ডোবারম্যান এছাড়া অসংখ্য দেশি কুকুর। না কোন চিড়িয়াখানায় নয়, নয় কোন পশু হাসপাতালের কাহিনী। আসলে এরা প্রত্যেকেই পেয়েছে এক স্থায়ী নির্ভরযোগ্য আস্তানা। সৌজন্যে এক পশুপ্রেমী।
আসলে প্রতিটি পশুর ক্ষেত্রেই আছে করুণ কাহিনী। প্রত্যেকটি জন্তুকেই রক্ষা করা হয়েছে। হুগলির পোলবা থানার অন্তর্গত পুরুষোত্তমবাটি এলাকায় দিল্লি রোডের ধারে একটি কারখানা আছে কয়েক বিঘা জুড়ে। একসময় সেই কারখানায় "আমার পিসি" ব্র্যান্ডের কম্পিউটার তৈরি হতো। বর্তমানে সেই কারখানায় অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি হচ্ছে। বাবার পথ অনুসরণ করে মেধাবী দুই কন্যা সম্পূর্না ও সম্রাজ্ঞী ঘোষ দুই বোন মিলে নিজেদের বৈদ্যুতিক পণ্য বাজারজাত করার জন্য অবিরত পরিশ্রম করে চলেছেন। এটা গেল অন্য দিক।
পাশাপাশি অত্যন্ত পশুপ্রেমিক এই দুই বোন। সম্পূর্না কর্মসূত্রে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। করোনা কালে ময়দানে অনেক বয়স্ক ঘোড়া কে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের প্রয়োজন হয়তো ফুরিয়ে যাওয়ার জন্য ফিটন গাড়ির মালিকেরা এই কাজ করেছিলেন। কেউ কেউ তো আবার তাদের মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা ও করেছিল। সম্পূর্না জানতে পেরে তাদের নিয়ে চলে আসে এই কারখানায়। আশ্রয় করে দেয় কারখানার একপাশে। তেমনই কোন এক রাতে শ্যামবাজার মোড়ে এপিলেক্সিতে আক্রান্ত ক্ষুধার্ত মা ডোবারম্যান যখন তার ছানাকে নিয়ে ঘরছাড়া হয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই খবর পেয়ে সম্পূর্না নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি।
স্থানীয় মানুষদের সহযোগিতায় তাদের কে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এই কারখানায়। এমনি করেই দেখতে দেখতে কয়েক বছরে অনেক অসহায় জীবদের স্থান হয়েছে এই কারখানায়। সম্পূর্ণার কথায়, আমার বাবা এবং মা দুজনেই পশুপ্রেমী। তাঁদের রক্ত আমাদের দুই বোনের মধ্যে বইছে। আমরা কি আলাদা হতে পারি?
বিরাট কারখানার মূল প্রবেশদ্বার পেরিয়ে ডান ও বাম উভয় দিকে রীতিমতো পাকা আস্তানা আছে এদের। বাম দিকে থাকে ঘোড়াগুলি। সেখানে ঘেরা জায়গা। বাগান করে দেওয়া আছে। মনের আনন্দে তারা ঘরে। ডানদিকে আছে ছাগ সম্প্রদায়ের আস্তানা। খাবারের ব্যবস্থা সব বাবা করেন। জানান সম্পূর্না। বাকি কাজ আমি আমার বোন সম্রাজ্ঞী একসঙ্গে করি। পর্যাপ্ত খাবার তারা পায়। এছাড়া সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
পশু চিকিৎসক নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। কলকাতা পোলো ক্লাব থেকে ঘোড়াদের পরিচর্যা করার জন্য লোক ও আসে। শীতকালে দিল্লী রোডের ধারে যাঁরা বসবাস করেন তাঁদের কাছে এই এলাকাটি দার্জিলিং এর সমান। তাই প্রবল ঠাণ্ডাতেও পশুরা যাতে সুস্থ থাকে তার জন্য প্রত্যেক পোষ্য দের ঘরে পর্দাও দেওয়া আছে। একটা ষাঁড় ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলাম। পরে সেটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছি। জানান সম্পূর্না। আর সম্পূর্ণার সাথে সম্রাজ্ঞী এব্যাপারে পরস্পরের পরিপূরক।
সম্রাজ্ঞী একথাও জানান, কোথাও কোন অবহেলিত পশুকে দেখলেই আমাদের খবর দেবেন আমরা তাদের আশ্রয় দেব। সম্পূর্ণাদের এই 'জীবালয়ে'র ব্যাপারে বাবা সান্তনু ঘোষ বেশ গর্বিত। তিনি জানান, আমার শিক্ষায় মেয়েরা বড় হয়েছে। অসহায় অবলা পশুদের পাশে থেকে সাধ্যমত তাদের দেখভাল করাটাই একজন প্রকৃত মানুষের কাজ বলে আমি মনে করি।