গিরীশপার্কে পোস্তা ব্রিজ ভেঙেছিল ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ। গার্ডেনরিচে নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ল ১৭ মার্চ শেষ হওয়ার মুহূর্তে। সেই সময় ছিল রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। এবার সামনে লোকসভা নির্বাচন। গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইতিমধ্যে ২ জন মারা গিয়েছেন। বেশ কয়েকজন মারাত্মক জখম। এখনও সেখানে আটকে রয়েছে ৭ জন। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন ৩ ফুটের রাস্তায় কি করে জি প্লাস ৫ ভবন তৈরি হচ্ছিল? দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু নিজে বলছেন, 'অপরিসর জায়গা। উদ্ধারের কাজে অসুবিধা হচ্ছে।' কলকাতা পুরসভা কর্তৃপক্ষের কারও নজরে পড়েনি এই বেআইনি নির্মাণ? আধিকারিকদের ওপর দায় চাপিয়েই কি মেয়রের দায়িত্ব শেষ? পাশাপাশি বাম আমলে গার্ডেনরিচে এই ভাবে বেআইনি বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এই কথা বলে মন্ত্রী তথা মেয়র কতটা দায়িত্ব এড়াতে পারেন তা নিয়েই বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
রবিবারবাসরীয় ছুটির দিনে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে গার্ডেনরিচে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বিরোধীরা একাধিকবার অভিযোগ করেছে, কলকাতা পুর এলাকার সর্বত্র বেআইনিভাবে বহুতল নির্মান হচ্ছে। চারিদিকে বস্তি, ৩ ফুটের রাস্তা, তার পাশে ৬ তলা বহুতল নির্মাণ চলছে অনায়াসে। তারওপর অভিযোগ, এলাকাটা জলাশয় ছিল। মেয়র নিজে বলছেন, 'এটা বেআইনি ভাবে নির্মাণ চলছিল।' এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, কিভাবে সম্ভব হচ্ছিল এই নির্মান? তাহলে কাউন্সিলররা কি কিছুই জানতেন না? মেয়র কাউন্সিলরদের কিছু জানা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়ে বলেছেন, 'এটা আধিকারিকদের বিষয়।' প্রশ্ন, স্থানীয় কাউন্সিলর বেআইনি নির্মান নিয়ে কিছু জানেন না। বিরোধীদের অভিযোগ, কাউন্সিলরদের আয় ও সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত করলেই প্রমাণ হয়ে যাবে তাঁরা এইসব বিষয় জানেন কি জানেন না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, 'স্ক্যোয়ার-ফিট অনুযায়ী কাউন্সিলররা টাকা নেয়। একএক জন কাউন্সিলরকে স্ক্যোয়ার-ফিট কাউন্সিলর বলে। তাঁদের সম্পত্তি দেখলেই তা বোঝা যায়।'
২০১৬-তে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পোস্তা সেতু ভেঙে পড়েছিল। এবার দুর্ঘটনা ঘটেছে রাত ১২ টা নাগাদ। মেয়র এদিন এই দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে বামফ্রন্ট আমলের কথা বলেছেন। ওই আমলে শুরু হয়েছিল এই এলাকায় বেআইনি নির্মাণের কাজ। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, বাম আমলের কথা বলে কি ফিরহাদ হাকিম দায় এড়াতে পারেন? কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকারের একাধিক দফতর, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কারও নজরে পড়ছে না এই ধরনের বেআইনি কাজ, প্রশ্ন এখানেই। তাহলে এই বেআইনি নির্মাণের পিছনে কিসের খেলা চলছে? তা নিয়ে সরব হয়েছে রাজনৈতিক মহল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা নির্বাচনের মুখে এই বেআইনি বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা ইস্যু তৈরি করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। পাশাপাশি শাসকদলও নেমে পড়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে। কিন্তু এই দুর্ঘটনা কি কোনও শিক্ষা দেবে? সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন। সরকারি বা মৌখিক অনুমতির পিছনে কারা আছেন? তা কি আদৌ প্রকাশ পাবে? ভোট আসে সরকার হয়, সাধারণ মানুষের কথা কে মনে রাখে।