সত্যিই এযেন এক অন্য দুর্গা। ছেলে ডেঙ্গির কবলে পড়ায় তাঁর মান বাঁচাতে সর্বোপরি পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস টিকিয়ে রাখতে এবার ময়দানে ৯০ বছরের বৃদ্ধা। বয়স ৯০ ছুঁলেও তাঁর অদম্য জেদ আর অফুরন্ত ইচ্ছাশক্তিতে বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি। রাত-দিন এক করে এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন বৃদ্ধা।
মৃৎশিল্পী ছেলে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে বিছানা নিয়েছেন। এদিকে, প্রতিম গড়ার বায়না বিভিন্ন ক্লাবের থেকে আগেই নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। অসুস্থ ছেলের এই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে তাঁর ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা-ই মৃৎশিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। ধীরে ধীরে প্রতিমা গড়ার বাকি কাজ তিনিই করে চলেছেন।
পুরাতন মালদা পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিচুপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত পাল পেশায় মৃৎশিল্পী। পরিবারে তাঁর বৃদ্ধা মা রয়েছেন। বাবা বহু বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মূলত প্রতিমা বানিয়েই সংসার চলে এই পাল পরিবারের। এবছর সুশান্তবাবু চারটি ক্লাবের দুর্গা প্রতিমা তৈরির বায়না নিয়েছেন। কিন্তু আচমকা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় মূর্তি গড়া নিয়েই দুশ্চিন্তা শুরু হয় পাল পরিবারে।
এই পরিস্থিতিতে ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা কমলাদেবী ছেলের বাকি পড়ে থাকা কাজ নিজে হাতেই করছেন । বয়সের ভারে চলাফেরা দায় হলেও ছেলের সম্মান বাঁচাতে এখন কমলাদেবী প্রতিমাগুলিতে মাটির প্রলেপ দিয়ে গড়তে শুরু করেছেন। সপ্তাহ পেরোলেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়বে। কিন্তু তার আগে কি পারবেন চার চারটে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করতে?
চোখে ভালো দেখতেও পান না, হাঁটতে চলতেও বেশ কষ্ট হয়, তাও ছেলের মান বাঁচাতে রাত-দিন এক করে ঠাকুর গড়ছেন কমলাদেবী।
আরও পড়ুন- গর্ত খুলতেই কিলবিল করতে করতে ওগুলো কী বেরোল? দেখেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া!
এবিষয়ে বৃদ্ধা কমলাদেবী বলেন, "ছেলে প্রতিমা গড়েই সংসার চালায়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছেলে সুশান্ত পাল। তবে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছে। এখন অনেকটাই ভালো আছে। কিন্তু শরীর প্রচণ্ড দুর্বল। একা হাতে ছেলে প্রতিমা তৈরি করতে পারছে না। তাই আমি ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে যতটা পারছি প্রতিমার কাজে হাত লাগিয়েছি। একটা সময় আমার স্বামী প্রতিমা বানাতেন, ওনার কাছেও কিছুটা শিখেছিলাম। তাই অতটা সমস্যা হচ্ছে না । কিন্তু হাতে আর সময় নেই। চারটি দুর্গা প্রতিমা সময়ের মধ্যে তৈরি করতে হবে। নইলে টাকা মিলবে না। ফলে ছেলে যতটা না পারছে, তার থেকে বেশি আমি কাজ করছি। অনেক রাত পর্যন্তও দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছি।"
মৃৎশিল্পী সুশান্ত পাল বলেন, "ডেঙ্গিতে একেবারেই কাহিল হয়ে পড়েছিলাম। কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। লোকসান তো হবেই ভেবেছিলাম। তার ওপর পুজো কমিটিগুলির চোখ রাঙানি দেখতে হতো। সময়ের মধ্যে দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে দিতে পারব না, এভাবেই দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আমার বৃদ্ধা মা এখন দুর্গা প্রতিমা বানাতে শুরু করেছেন। আমার শরীর দুর্বল। ধীরে ধীরে কাজ করছি । কিন্তু আমার বৃদ্ধা মা গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে দেবী প্রতিমা অনেকটাই বানিয়ে ফেলেছেন। তাই এখন কিছুটা হলেও নিশ্চিন্তে আছি। আর কিছুদিন পর মহালয়া। তারপরেই দেবীর বোধন। সময়ের মধ্যে এখন চারটি পুজো কমিটিকে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে দেওয়াটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।"