নিয়োগের দাবিতে একটানা পথে পড়ে রয়েছেন ২০১৪-এর টেট উত্তীর্ণ নন-ইনক্লুডেড চাকরিপ্রার্থীরা। সল্টলেকের করুণাময়ীর রাস্তায় টানা চার দিন ধরে শুয়ে-বসে আন্দোলন চালাচ্ছেন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী। অনশন আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা। তাঁদের এই একরোখা আন্দোলনের পিছনের ইতিহাসটা ঠি কী? কেন তাঁদের এই আন্দোলন? কোন যুক্তির উপর ভর করে চাকরিপ্রার্থীদের এই আন্দোলন?
২০১৪ সালের টেটের পর ২০১৬-তে শুরু হয় নিয়োগ প্রক্রিয়া। করুণাময়ীতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ওই সময়ে ৪২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকার। তবে সেই নিয়োগে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতি ছিল বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের। লক্ষ-লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই সময়ে বহু নিয়োগ হয়েছিল বলে দাবি চাকরিপ্রার্থীদের। চাকরির দাবিতে এর আগেও একাধিকবার পর্ষদের দ্বারস্থ হয়েছেন ২০১৪-এর টেট উত্তীর্ণ নন-ইনক্লুডেড প্রার্থীরা। তবে সুরাহা মেলেনি।
চাকরিপ্রার্থীদের এই আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কান অবধি গিয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সালে ২০ হাজার চাকরিপ্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রথম পর্বে সাড়ে ১৬ হাজার ও পরের পর্বে সাড়ে ৩ হাজার জনকে নিয়োগ করা হবে। তবে আরটিআই করে তাঁরা জেনেছেন, সাড়ে ১২ হাজার জনকে নিয়োগ করা হয়েছে।
করুণাময়ীতে অবস্থান আন্দোলনে বসে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী ২০ হাজার নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সাড়ে ১২ হাজার পদে নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, চাকরিপ্রার্থীদের দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা সাড়ে ৭ হাজার পদে নিয়োগ এখনও হয়নি। ওই পদেই এবার নিয়োগের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন টেট উত্তীর্ণরা। প্রাথমিকের চাকরিতে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হেফাজতে বন্দি রয়েছেন প্রাক্তন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। তারও আগে গ্রেফতার হয়ছেন খোদ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- আন্দোলন ৪ দিনে, তবুও হকের চাকরি না পেলে ধরনায় অনড় চাকরিপ্রার্থীরা, একসুর পর্ষদ-ব্রাত্যর
এসবে চূড়ান্ত ক্ষোভ থাকলেও আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান-আন্দোলন কিন্তু ক্রমেই দৃঢ় হচ্ছে। দাবিতে অনড় চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, তৃণমূল আমলে প্রতিটি টেটে চাকরিপ্রার্থীদের স্কোর সিটের ব্রেক আপ-সহ বিস্তারিত প্যানেল লিস্ট প্রকাশ করতে হবে। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে, ২০১৭-এর প্রার্থীদের সঙ্গে ২০১৪-এর টেট উত্তীর্ণ নন-ইনক্লুডেড প্রার্থীদেরও ইন্টচারভিউ দিতে হবে। যদিও পর্ষদের এই বক্তব্য মানতে একেবারেই রাজি নন চাকরিপ্রার্থীরা।
তাঁদের যুক্তি, ২০১৭-এর পরীক্ষার ধরণ তাঁদের চেয়ে ভিন্ন ছিল। স্বাভাবিক কারণেই ২০১৭-এর প্রার্থীদের সঙ্গে তাঁদের অ্যাকাডেমিক স্কোরের ভিন্নতা থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাই চাকরির জন্য আর তৃতীয়বার ইন্টারভিউয়ে বসতে তাঁরা রাজি নন।
চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি মতো এখনও সাড়ে ৭ হাজার পদ ফাঁকা পড়ে আছে। তাহলে তাঁদের কেনও ওই পদগুলিতে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না? যদিও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এব্যাপারে আদালতের উপরেই ভরসা রাখছে। আদালতের নির্দেশিত পথ ধরেই তাঁরা এগোবেন বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ‘টাটা বিদায় নিয়ে মন্তব্য মমতার সেরা জোকস, এতে প্রায়শ্চিত্ত হবে না’, আক্রমণ দিলীপের
সল্টলেকের করুণাময়ীতে চাকরির দাবিতে আন্দোলন আজ চারদিনে পড়ল। এই চার দিন ধরে একটানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী। রাস্তায় শুয়ে-বসে চলছে স্লোগানিং। ইতিমধ্যেই আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। রাজনৈতিক নেতারাও পালা করে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীদের হয়ে গলা ফাটাতে। তবে এসবে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই আন্দোলনকারীদের। তাঁদের একটাই দাবি, 'চাকরি চাই'।