অদম্য জেদকে সঙ্গী করে জীবনভর তপস্যার স্বীকৃতি পেয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা প্রীতিকণা গোস্বামী। দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান 'পদ্মশ্রী' পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর নজরকাড়া সাফল্যের পিছনের ইতিহাসটা অনেকের কাছেই অজানা।
সেই একরত্তি বয়সে বাবাকে হারিয়ে জীবনের প্রতি পদে কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে গিয়েছেন আজকের বৃদ্ধা প্রীতিকণা গোস্বামী। দশকের পর দশক ধরে দাঁতে দাঁত চেপে চলেছে মরণপণ লড়াই। শেষমেশ তাঁর সেই লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত সরকার। মিলেছে পদ্ম সম্মান।
সোনারপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রীতিকণা গোস্বামী। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। মা ও পাঁচ বোনের সংসারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্য। পরে জ্যেঠু তাঁকে নিয়ে যান তাঁর বাড়িতে। সেখানেই মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন প্রীতিকণাদেবী। তবে মাধ্যমিকের পাঠ শেষে ফের ঘরে ফেরা। ছোটবেলা থেকেই সেলাইয়ের কাজে সিদ্ধহস্ত প্রীতিকণা দেবী। বান্ধবী রমা দাসের সেলাইয়ের কাজ তাঁকে উৎসাহ দেয়। রমাদেবী সেলাইয়ের কাজের অর্ডার পেতেন।
আরও পড়ুন- গাছের আড়াল থেকে এক ঝাঁপ নৌকায়! যুবককে কামড়ে খেল ভয়াল বাঘ
তারই সূত্র ধরে পীতাম্বরি নামে একটি সংস্থা তাঁকে সেলাইয়ের কাজ দেন। এরই মধ্যে ১৯৭৭ সালে প্রীতিকণাদেবীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। সিটি কলেজে ভর্তি হন। তবে সন্তানসম্ভবা হয়ে যাওয়ায় আর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তিনি। যদিও সেলাইয়ের কাজ কিন্তু থেমে থাকেনি। ১৯৯০ সালে ওয়েস্টবেঙ্গল ক্রাফট কাউন্সিল থেকে নকসিকাঁথার কাজের অর্ডার আসে। সেই কাজ এতটাই ভালো হয় যে পরের বছরই নকসিকাঁথার কাজ শেখানোর একটি বিভাগ চালু করা হয়। যে বিভাগটির দায়িত্ব এসে বর্তায় প্রীতিকণাদেবীর কাঁধেই।
আরও পড়ুন- মমতার মুকুটে নয়া পালক, দ্বিতীয়বারের জন্য বিরাট সম্মানে ভূষিত মুখ্যমন্ত্রী
২০০১ সালে প্রীতিকণা গোস্বামী তাঁর নিখুঁত কাজের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে জাতীয় পুরষ্কার পান তিনি। তারও আগে তাঁর কাকা পণ্ডিত নিখিল ঘোষ সংগীতের জন্য পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন। এখন কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই নকসিকাঁথা বোনার কাজ শেখান প্রীতিকমা দেবী। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই বিদেশ থেকেও তাঁর কাজ প্রশংসা পেয়েছে। বিশেষ এই কাজ শেখাতে তিনি বিদেশেও বিদেশেও।