21 July Martyr's Day Rally: বাংলায় প্রশাসন ও তৃণমূল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে বলে প্রায়শই অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগেই এবার যেন সিলমোহর দিল রাজ্যের কৃষি দফতর। রীতিমতো ফ্লেক্স বানিয়ে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের 'শহিদ সভা' কর্মসূচি সফল করার প্রচার চালিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক কৃষি দফতর। এমনই ছবি ধরা পড়েছিল জামালপুর ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তার দফতরে ঢোকার দরজার সামনে। সেখানেই ঝোলানো ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সহযোগে তৈরি ২১ জুলাইয়ে 'শহিদ সভা'র সমর্থনে ফ্লেক্স। যার নীচে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, “প্রচারে- কৃষি দফর , জামালপুর ব্লক, পূর্ব বর্ধমান।” আর এমন ফ্লেক্স নিয়েই তৈরি হয় তুমুল বিতর্ক। প্রতিবাদে স্বোচ্চার হয় বিরোধীরা।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় শহিদ স্মরণ সভা হয়ে আসছে। বাম সরকারে অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দল বাংলায় ক্ষমতায় আসে। তার পর থেকে তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ কর্মসূচী আরও ব্যাপকতা লাভ করে।
সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বাংলার ২৯ আসনে জয়লাভের পর এবারের ২১ জুলাইয়ের শহিদ সভাকে সামনে রেখেই হতে চলেছে তৃণমূলের প্রথম বড় জনসভা। তাই উন্মাদনার জোয়ারে ভাসছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
সভায় রেকর্ড জমায়েত করার জন্য পূর্ব বর্ধমান-সহ রাজ্যের জেলায় জেলায় চলছে জোরদার প্রচার। তা দেখেই যেন অতি উৎসাহিত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের কৃষি দফতর।
তারাও তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ সভার সমর্থনে প্রচারের জন্যে ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে একেবারে দফতরের সামনেই ঝুলিয়ে রেখেছিল। যা দেখে তাজ্জব বনে যান দফতরে নানা কাজে যাওয়া মানুষজনও। সরকারি কৃষি দফতরের রাজনৈতিক দলের প্রচারে নামা নিয়ে জামালপুর ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জিবুল ইসলা বলেন, “বিষয়টি কাঙ্খিত নয়। ওই রকম ফ্লেক্স সরকারি দফতরে ঝোলানোটা ঠিক কাজ হয়নি। আমি জানতাম না। বিষয়টি জানার পরেই আমি ওই ফ্লেক্স দফতরের দেওয়াল থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। জেলা কৃষি আধিকারিক নকুল চন্দ্র মাইতিকে ওই ফ্লেক্সের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ভুল করে ওটা হয়েছে।" যদিও জামালপুর ব্লকের তৃণমল বিধায়ক আলক মাঝির দাবি, “বিতর্ক তৈরি করতে কেউ চক্রান্ত করে এমন ফ্লেক্স কৃষি দফতরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।"
তবে কৃষি দফতরের কর্তারা এবং তৃণমূল বিধায়ক বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করলেও ফ্লেক্স কাণ্ডকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ বিরোধীরা। জেলা বিজেপি সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “বাংলায় প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি যে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে সেটা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে খোদ জামালপুর ব্লক কৃষি দফতরের ফ্লেক্স তৈরি করে প্রচারে নামাটাই প্রমাণ করে দিল, আমরা যে অভিযোগ করে আসছি সেটা সত্য। বাংলার প্রশাসন এখন তৃণমূলের দলদাস।"
আরও পড়ুন- Eastern Rail: যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ রেলের! এমন অভূতপূর্ব উদ্যোগের ঢালাও প্রশংসা
অন্যদিকে, সিপিএমের জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, “তৃণমূলের রাজত্বে এই সবই স্বাভিবিক ঘটনা। শুধু ফ্লেক্সেই নয়, বাংলায় যে কোনও নির্বাচনেও প্রশাসন ও তৃণমূলের আঁতাত গাঢ় ভাবে ধরা পড়ে।" জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, "প্রশাসনের তৃণমূলীকরণ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যে যে কোনো ভোটে এই সরকারি কর্মচারীরাই তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী।"