Mid Day Meal: কেন্দ্রীয় সরকার যেমন 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' (Beti Bachao Beti Padhao Scheme) প্রকল্প যেমন চালু করেছে তেমনই বাংলায় 'কন্যাশ্রী' (Kanyashree) প্রকল্প চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নারী শিক্ষায় একের পর এক প্রকল্প চালু থাকলেও আজও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব বহু জায়গাতেই দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি এরাজ্যেও এমনই এক স্কুল রয়েছে। যেখানকার কন্যাশ্রীরা স্কুলঘরে নয়, পাত পেড়ে মিড-ডে মিল (Mid Day Meal) খায় ফাঁকা মাঠেই।
পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) মঙ্গলকোটের (Mangalkot) কৈচর। এই স্কুলেই ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘর পর্যন্ত নেই। তাই বছরের পর বছর ধরে কৈচর ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরে পাঠরত কন্যারা শ্রেণিকক্ষের বাইরে ফাঁকা মাঠে বসেই মিড-ডে মিল খেতে বাধ্য হচ্ছে। পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘর যাতে স্কুলে হয়, তার জন্য 'দিদিকে বলো' (Didi Ke Bolo) থেকে শুরু করে প্রশাসনের নানা মহলেও দরবার করেছিলেন শিক্ষিকারা। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। তাই ফাঁকা মাঠে বসে মিড-ডে মিল খাওয়াটাকেই ভবিতব্য হিসেবে ধরে নিয়েছে ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরে পাঠরত কন্যারা ।
বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসেবেই পরিচিত মঙ্গলকোটের কৈচর। এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষজনের হাত ধরে
১৯৬৪ সালে কৈচর গ্রামে প্রতিষ্ঠা পায় ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দির। কৈচর ছাড়াও আশপাশের ক্ষীরগ্রাম, কানাইডাঙা সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কন্যাদের লেখাপড়া শেখার একমাত্র অবলম্বন এই স্কুলটি। প্রতিষ্ঠা লগ্নের পর থেকে এই স্কুলটি নানা সমস্যায় জেরবার হতে থাকে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গেই কিছু সমস্যা অবশ্য মিটেছে। তবে স্কুলের ছাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘর আর কিছুতেই পাচ্ছে না। নিদেনপক্ষে বসে মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা শেডও এই স্কুলে নেই।
খোলা আকাশের নীচে পাত পেড়ে মিড ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা।
এমন এক স্কুলে টিফিনের ঘণ্টা পরলেই ছাত্রীরা থালা হাতে নিয়ে সোজা চলে যায় মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে। যদিও ওই রান্নাঘরের অবস্থাও তথৈবচ। রান্নাঘর থেকে মিড-ডে মিল নিয়ে ছাত্রীরা সোজা চলে যায় ক্লাসরুমের বাইরে। সেখানে খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা মাঠে দল বেধে বসে ছাত্রীরা মিড-ডে মিল খায়। শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম, এভাবেই দিন কাটে ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরের ছাত্রীদের। বর্ষায় বৃষ্টি নামলে একান্ত নিরুপায় হয়েই ছাত্রীরা ভাতের থালা হাতে নিয়ে হয় স্কুলের বারান্দায়, নয়তো ক্লাসরুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
বছরের পর বছর ধরে ছাত্রীদের এই দুর্দশা দেখে শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী সহ অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। এনিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “তাঁরা ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘরের জন্য প্রশাসনের নানা মহলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এমনকী 'দিদিকে বলো' ফোন নম্বরেও ফোন করে স্কুলের ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। একই দাবির কথা সামনে এনে স্কুলের এক শিক্ষিকা সমাজমাধ্যমেও (Social Media) সরব হন। কিন্তু এত কিছুর পরেও আজ অবধি কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা গার্গী সামন্ত জানান।
এরই পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, "অনেক দিন আগে আমরা ব্লক অফিস থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে মিড-ডে মিলের রান্নাঘরটা শুধুমাত্র একটু সংস্কার করা গেছে।"
এব্যাপারে মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “ষোড়শীবালা বালিকা বিদ্যামন্দিরের পাঁচিল ও দুটি ঘর আগেই করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীদের মিড-ডে মিল খাওয়ার ঘর যাতে তৈরি হয় তার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে। আশা করছি সেটাও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে।"