Hatipota Devdas Smriti Mela: বাংলা সাহিত্যে (Bengali literature) চির অমর হয়ে রয়েছে কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (Sarat Chandra Chattopadhyay) লেখা 'দেবদাস' উপন্যাস। সেই উপন্যাসে দেবদাস মিষ্টির ভক্ত ছিলেন কি না তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে 'দেবদাস' (Devdas) উপন্যাসকে আঁকড়ে পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) কালনার (Kalna) হাতিপোতা (Hatipota) গ্রামে চলা দেবদাস স্মৃতি মেলা (Devdas Smriti Mela) প্রাঙ্গণ শুধুই যেন মিষ্টিময়। তাও আবার যে সে মিষ্টি নয়। পাঁচশো টাকা থেকে শুরু করে দু’হাজার টাকা পিসেরও এক-একটা পেল্লাই মিষ্টি মেলায় বিক্রি হচ্ছে। যার স্বাদ নিতে বহু মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। জমাটি ঠান্ডাতেও বিক্রি-বাটা ভালো হওয়ায় দেবদাসের নামে জয়ধ্বনিও দিচ্ছেন মিষ্টির কারবারিরা।
হাতিপোতা গ্রামটি পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১ নম্বর ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকায় অবস্থিত। এই গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, কথা সাহাত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই হাতিপোতা গ্রাম থেকেই তাঁর কালজয়ী দেবদাস উপন্যাস লেখার রসদ খুঁজে পেয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসে ভর করেই দেবদাসকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে হাতিপোতা গ্রামের মানুষজন প্রতি বছরই দেবদাস স্মৃতি মেলা ও উৎসবের আয়োজন করে থাকেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শরৎচন্দ্রের ছবিতে মালা পরিয়ে ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে হাতিপোতা গ্রামে শুরু হয়েছে ২৪তম বর্ষের 'দেবদাস স্মৃতি মেলা'। আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে।
উৎসব আয়োজকদের পক্ষে রেজাউল মোল্লার কথায়, "কথা সাহিত্যিকের ‘দেবদাস’ উপন্যাসে অন্তিম অনুরোধ ছিল, 'তাহার জন্য একটু প্রার্থনা করিও'। সেই প্রার্থনায় সাড়া দিয়েই প্রতিবছর শরৎচন্দ্রের মৃত্যু দিনটিকে স্মরণে রেখে দেবদাস স্মৃতি মেলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়।" তিনি আরও বলেন, "উপন্যাসে উল্লিখিত জমিদার বাড়ির সব স্মৃতি আজ সম্পূর্ণরূপে আর না থাকলেও আংশিক কিছুটা রয়েছে। সেই টানেই সাহিত্যপ্রেমী ও পর্যটকরা আজও হাতিপোতা গ্রামে আসেন।"
পেল্লাই সাইজের ল্যাংচা হাতে এক দোকানি।
আরও পড়ুন- Book Fair: একটি বইয়েই চাহিদার বিস্ফোরণ! কারণ কী? অবাক বিক্রিতে হতভম্ব বাঘা-বাঘা প্রকাশনা সংস্থা
হাতিপোতা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের দাবি, একটা সময়ে হাতিপোতা গ্রামের জমিদার ছিলেন ভুবনমোহন চৌধুরী। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী তালসোনাপুরের ‘পার্বতীই’ দেবদাস উপন্যাসের নায়িকা। তাঁরা আরও জানান,
উপন্যাসের একাংশে উল্লেখ রয়েছে, “পার্বতীর পিতা কাল বাটি ফিরিয়াছেন। এই ক'দিন তিনি পাত্র স্থির করিতে বাহিরে গিয়াছিলেন’। এ গাঁয়ের প্রবীণদের বিশ্বাস, হাতিপোতা গ্রামের জমিদারই সেই পাত্র।
উপন্যাসের কাহিনীর এক অংশে হাতিপোতা গ্রামের নাম প্রকাশ পেয়েছে। তাই বাস্তবের হাতিপোতা গ্রামের মানুষজন আজও মনে করেন ১৮৯৫ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে শরৎচন্দ্র নিজেই নদীপথে তাঁদের গ্রামেই এসেছিলেন। উৎসব কমিটির অপর সদস্য আবজেদ শেখ বলেন, "দেবদাস উপন্যাসের দৌলতেই ধন্য হয়েছে হাতিপোতা গ্রাম। বেড়েছে এগ্রামের গুরুত্বও।" রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,“দেবদাস উপন্যাসের দৌলতেই আজ হাতিপোতা গ্রামের নাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। কথা শিল্পীর উপন্যাসই এই গ্রামকে ধন্য করেছে।"
বিশাল সাইজের এই ল্যাংচা দেখতে বহূ দূর থেকেও এই মেলায় ভিড় জমান অনেকে।
এ তো না হয় গেল দেবদাস উপন্যাকে আঁকড়ে মেলা ও উৎসব আয়োজনের ইতিবৃত্ত। তারই মধ্যে দেবদাস মেলা প্রাঙ্গনে মিষ্টির কারবারিদের পেল্লাই মাপের মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির ভাবনাটাও বেশ রসালো। এ নিয়ে মিষ্টির ব্যবসায়ীদের, “দেবদাস উপন্যাসের মতোই বিখ্যাত কিছু একটা করে দেখানোর ভাবনা নিয়েই তাঁরা 'পেল্লাই মিষ্টি' তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেন।" নদিয়া থেকে মেলায় এসে মিষ্টির দোকান খুলে বসা আকবর আলি শেখ জানান, ছানার সঙ্গে ময়দা ও অন্যান উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে তা ভালো করে মেখে
তাঁরা ছোট সাইজ থেকে শুরু করে পেল্লাই সাইজের নানা ধরণের মিষ্টি (Sweets) তৈরি করে তা বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন- Exclusive: BJP-তে পদ গেলেও আশ্চর্যজনক নিশ্চুপ অনুপম, ভোটের মুখে ‘সুনামি’র পূর্বাভাস?
মেলার দোকানগুলিতে পাত্রে রাখা বিভিন্ন সাইজের মিষ্টি।
মেলায় ক্রেতাদের কাছে নজর কেড়েছে পেল্লাই সাইজের 'নোড়া পান্তুয়া'। সাইজ অনুযায়ী সেই সব মিষ্টির কোনওটির দাম পাঁচশো, কোনওটির হাজার আবার কোনওটির দু-হাজার টাকা। আকবর আলির কথা অনুযায়ী, “দু-হাজার টাকা দামের একটা মিষ্টি তৈরি করতে প্রায় ৪ কিলো ছানা লাগে। তার সঙ্গে থাকে ময়দা-সহ অন্যান্য সামগ্রী। রসে ডোবানোর পর ওই একটি মিষ্টির ওজন প্রায় সাত কেজিতে গিয়ে দাঁড়ায়।"
কিন্তু তাতে কি বা যায় আসে! আকবর আলি নামে ওই মিষ্টি বিক্রেতার দাবি, "দাম এত বেশি হলেও স্বাদে ও আকারে চমকপ্রদ এমন মিষ্টি। অন্য কোথাও এমিষ্টির বিক্রি হয় না। তবে দেবদাস মেলায় দেদার বিক্রী হচ্ছে।" আর এক মিষ্টির কারবারি লালন শেখের কথায়, “এমন মিষ্টি দেখতেও দূরদূরান্তের অনেক মানুষ দোকানে ভিড় করছেন।"