Purbasthali Midday Meal Controversy: প্রশাসনের তরফে স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন রোখার দাবি করা হলেও অভিভাবকদের একাংশের অসহযোগিতার কারণে তার বাস্তবায়নে এখনও যে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে তা একপ্রকার পরিষ্কার হয়েই গেছে। মিড ডে মিলের রান্না নিয়ে এই হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ যেন মিটেও মিটছে না খাস বাংলার এই স্কুলে। প্রশাসন শক্ত হলেও অভিভাবকদের অনেকে অনীহা প্রকাশ করেছেন, তাই পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কিশোরীগঞ্জ-মনমোহনপুর প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল নিয়ে দ্বিজাতি তত্ত্ব যেন এখনও জিইয়ে রয়েছে।
হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ, এই তত্ত্বকে আঁকড়ে আজ থেকে ৭৭ বছর আগে 'ভারত' ভাগ হয়েছিল। এই একই তত্ত্বে বহু বছর ধরে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ নং ব্লকের নাদনঘাটের কিশোরীগঞ্জ মনমোহনপুর প্রাথমিক স্কুলে চলছে মিড-ডে মিলের হেঁসেল। এখানকার রাঁধুনি থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার, বাসনপত্র সবই দুই ধর্মের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা-আলাদা করে রাখার বন্দোবস্ত আছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রাণী এই ঘটনার কথা জানার পরেই তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর ব্লক প্রশাসন তড়িঘড়ি বুধবার ওই স্কুলে পৌঁছে গিয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে মূলত ব্লকের যুগ্ম বিডিও জীবনকৃষ্ণ মণ্ডল, নাদনঘাট থানার আইসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ, মিড-ডে মিল দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্লকের আধিকারিক এবং স্থানীয় নসরৎপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কানন বর্মন ও উপ-প্রধান মহবিল হোসেন মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। এরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস ঘোষ ও অভিভাবকদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে যান। তবে পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন বলেন, “স্কুলে হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে আর মিড-ডে মিল রান্না করা যাবে না। দুই সম্প্রদায়ের রাঁধুনিকে এক সঙ্গে এক জায়গায় বসে মিড-ডে মিল রান্না করতে হবে।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates:ভাষণ শেষেই হঠাৎ অসুস্থ, বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখেই জ্ঞান হারালেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়
স্কুলের মিড-ডে মিলের হেঁশেলেও যে আর ধর্মের কোনও ভেদাভেদ রাখা যাবে না, সেকথা সরকারি আধিকারিকরাও এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের জানিয়ে দিয়েছেন। বুধবার থেকেই স্কুলের মিড-ডে মিলে ধর্মের যাবতীয় বেড়াজাল মুছে গিয়েছে বলে পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, "আজ থেকে আমার স্কুলের মিড-ডে মিলে ধর্মের বিভেদ মুছে যাওয়ায় আমি খুব খুশি।"
আরও পড়ুন- Actor arrested: জনপ্রিয় অভিনেতা গ্রেফতার, তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ
তবে পঞ্চায়েত প্রধান ও প্রধান শিক্ষক যাই দাবি করুন না কেন, অভিভাবকদের একাংশ এই সিদ্ধান্তে এখনও দ্বিধাবিভক্ত রয়ে আছেন। হিন্দু পরিবারের অনেক অভিভাবক এদিন পরিস্কার জানিয়ে দেন, আলাদা ভাবে রান্না করা না হলে তাঁদের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা স্কুলের মিড-ডে মিল খাবে না। যদিও মুসলিম পরিবারের অভিভাবকরা এমন মত পোষণ করেননি। উল্টে তাঁরা জানান, স্কুলের মিড মে মিল রান্না নিয়ে ধর্মীয় বিভেদ উঠে যাওয়ায় তাঁরা খুশি। যেই রান্না করুক না কেন তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা সেই মিড-ডে মিল খাবে বলেই মুসলিম অভিভাবকদের অনেকে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh: 'যেন মনে হচ্ছে এর আগে রথযাত্রা হয়নি', দিঘায় রাজ্যের 'বিরাট কার্যক্রম' নিয়ে তোপ দিলীপের
ওই স্কুলের মিড-ডে মিল রান্নার জন্য নিযুক্ত হিন্দু রাঁধুনি সোনালী মজুমদার এবং মুসলিম রাঁধুনি গেনো বিবি দু’জনেই জানান, তাঁরা আর আলাদাভাবে মিড ডে মিল রান্না করেননি। বুধবার স্কুলে একসঙ্গে মিলে মিড-ডে মিল রান্না হয়েছে। আগামী দিনেও এভাবেই তাঁরা মিড-ডে মিল রান্না করবেন বলেও জানিয়েছেন।