NRC-CAA-Rajbanshi: BJP বিরোধীরা NRC, CAA নিয়ে সোচ্চার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সিএএ ও এনআরসির তীব্র বিরোধী। প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, নির্বাচনী প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম ইস্যু এনআরসি, সিএএ। কিন্তু তৃণমূলকে সমর্থন করলেও রাজবংশী নেতা বংশীবদন বর্মন ও (Bangshibadan Barman) কোচবিহারে (Cooch Behar) এনআরসি চাইছেন।
লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Election 2024) মুখেও রাজবংশীরা (Rajbanshi) এনআরসি নিয়ে সোচ্চার। এমনকী কোচবিহারের রাজবংশীদের বড় অংশই এনআরসি চাইছে। তাঁদের বক্তব্য, ভূমিপুত্ররা জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ছুটছে, অন্যদিকে বাইরের লোকজন এখানে এসে প্রভাব বিস্তার করছে। নির্বাচনের সময় রাজবংশীদের ভোট নিয়ে রাজনীতি চললেও তাঁদের অধিকারের মান্যতা না দেওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। রাজনৈতিক নেতারা হলুদ গামছা গলায় দিয়ে ঘোরায় কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না রাজবংশীদের একটা অংশ।
ভোট ব্যাঙ্ক। যে কোনও নির্বাচন এলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এই শব্দ। শুধু সংখ্যালঘু বা আদিবাসী ভোট ব্যাংকেই কিন্তু এখন আর সীমাবদ্ধ নেই। মতুয়া থেকে রাজবংশীদের ভোট ব্যাঙ্ক নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে বড় ফ্যাক্টর। কোচবিহারে লোকসভা নির্বাচনে রাজবংশী ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে গলায় হলুদ গামছা দিয়ে ঘুরছে প্রার্থী থেকে নেতা-কর্মীরা। রাজবংশীরা ভোটের সময়ও এনআরসির দাবি করছে। ভূমিপুত্র হলেও সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের ভোটের সময় ব্যবহার করছে বলে মনে করছে রাজবংশীদের বড় অংশ।
আবার বংশীবদন বর্মনের মতো নেতা সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতানোর আবেদন জানাচ্ছেন। আর অনন্ত মহারাজ তো বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। ভারতভুক্তির সময় কোচবিহারকে পৃথক রাজ্য করার কথা বলা হয়েছিল। সেই সাংবিধানিক অধিকার থেকে সরে আসতে নারাজ রাজবংশীরা। এই দাবিতে কিন্তু তাঁরা সকলেই একমত। কেন্দ্র বা রাজ্য দুই সরকারের ওপর তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। রাজবংশীদের একাংশের বক্তব্য, তাঁদের নিয়ে শুধু রাজনীতি হচ্ছে। ৭৩ বছর পরও তাঁরা সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
এদিকে দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের (Greater Cooch Behar Peoples' Association) সাধারণ সম্পাদক বংশীবদন বর্মন কোচবিহারের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে রাজবংশীদের নিয়ে মিটিং করছেন। বংশীবদন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "প্রথমে তৃণমূলের সঙ্গে ছিলাম না। ওরা যখন আমাদের নিয়ে ভাবতে শুরু করল তখন থেকে সাপোর্ট করা শুরু করলাম। আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা থাকব। একটা কথা আছে নুন খেলে গুণ গাইতে হয়। আজ যদি কেন্দ্রীয় সরকার বলে চুক্তি মোতাবেক তোমাদের সব কিছু ফেরত দেবে। তবে আজকেই ওনার পক্ষে আমরা কথা বলব। যে রাজনৈতিক দল আমাদের ভাল করবে সেই আমাদের আপনজন।"
কোন কোন কাজ তৃণমূল সরকার করেছে, কেন তাদের সমর্থন করছেন বংশীবদন? সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। এই রাজবংশী নেতা বলেন, "বামপন্থীরা রাজবংশী ভাষায় কথা বললে উগ্রপন্থী বলে কেস দিত। সেই কাজ না করে ভাষা বোর্ড করেছে রাজ্য সরকার। ভাওয়াইয়া শিল্পীদের মর্যাদা দিয়েছে। ভাতা দিচ্ছে। স্কুলে সিলেবাস করে পাঠন-পাঠন শুরু করেছে রাজবংশী ভাষাতে। ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি বিবেচনা করছে সরকার। ঐতিহ্যে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছিল মাঝে। কোচবিহারের মহারাজা জীতেন্দ্র মোহনের নামের হাসপাতাল মেডিক্যাল কলেজ করার সময় নামে বদল ঘটিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবি মেনে ফের মহারাজার নামে রেখেছেন। পঞ্চানন বর্মনের (Panchanan Barma) জন্মদিনে ছুটি দিয়েছেন। তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে।"
তবে এনআরসি নিয়ে সোচ্চার বংশীবদন বর্মন। তিনি বলেন, "আমাদের মতে এনআরসি খুব দরকার। ভূমিপুত্র মানুষের চিহ্নিতকরণ খুব জরুরি। এখানকার ভূমিপুত্ররা বাইরে চলে যাচ্ছে কাজের জন্য। যারা ভূমিপুত্র নয়, তাদের সংখ্যা এখানে বেড়েই চলেছে। সিএএ এখানে চাই না। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের মতামত ছাড়া এখানে সিএএ বা নতুন কিছু লাগু করতে পারবে না। অন্যত্র সিএএ হলে আমাদের তাতে কোনও আপত্তি নেই। এই দাবির জন্য তৃণমূল কিছু ভাবলে তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।"
দ্য গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে দাবি করলেন গোসানিমারির বাসিন্দা সঞ্জীব বর্মন। সঞ্জীব বর্মন বলেন, "এখানকার মানুষকে ব্যবহার করছে রাজনৈতিক দলগুলি। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার এদের ভোট নিয়ে মন্ত্রী হচ্ছে। এখান থেকে ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে মানুষজন। ভূমিপুত্র হয়ে কাজ না জোটায় চলে যাচ্ছে। কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে রাজবংশী ভোট যে দিকে যাবে তারাই জিতবে। সবাই রাজবংশী ভোটের ওপর মুখিয়ে আছে। ভোটের সময় ভোট নেয়, পরে পাত্তা মেলে না।" বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক (Nisith Pramanik) রাজবংশী নয় বলে তাঁর দাবি। রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে হলুদ গামছা গায়ে দিচ্ছে রাজনৈতিক আবেগ জাগানোর জন্য অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন- Premium: এখনও দগদগে বীভৎস স্মৃতি! ব্ল্যাকবোর্ডে গুলির গর্ত মনে করাচ্ছে অসহনীয় ‘যন্ত্রণা’র কালো দিন
সঞ্জীব বর্মনও চাইছেন এনআরসি। তিনি বলেন, "আমরা এনআরসি চাই। সিএএ চাই না। আগে নাগরিকত্ব নির্ধারণ করা হোক তারপর নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। সংসদে গিয়ে কেউ আমাদের কথা বলে না। এখানকার ভূমিপুত্রদের সরকারকে চিহ্নিত করতে হবে।" কোচবিহারের নির্দল প্রার্থী গ্যাস সিলিন্ডারের প্রতীকে দাঁড়ানো অমল দাসকে রাজবংশীদের প্রার্থী বলে দাবি করেছেন তিনি।
দিনহাটার (Dinhata) ঘোসানিমারির বাসিন্দা যুবক সত্যজিৎ বর্মন, পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, "আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের জন্য আন্দোলন। ভোট এলে সবাই বলে দেব দেব, ভোট পার হয়ে গেলে আবার ৫ বছরের অপেক্ষা। তারপর আবার এভাবেই চলছে। আমাদের মানুষগুলোর সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিশ্বাসঘাতকতা করছে। ন্যায্য অধিকার ভারতভুক্তির চুক্তি অনুযায়ী এখানকার মানুষ পাচ্ছে না। সাধারণ রাজবংশী হিসাবে বলতে পারি যে সরকার আমাদের দাবি পূরণ করবে তাকেই ভোট দেওয়া উচিত। এখানে কর্মসংস্থান নেই, ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। রাজনৈতিক দলগুলি ললিপপ দিয়ে ভোট নিয়ে খেলা করছে। আমরা এনআরসি চাই। আমরাই এখানে ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছি। বাইরের থেকে এলে তাঁরা চিহ্নিত হয়ে যাবে।"