বেপাত্তা রাজীব কুমার। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই। তবে 'সুদক্ষ' আইপিএস রাজীব কুমারের এহেন পরিণতির জন্য ঠারেঠোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘দায়ী’ করলেন তাঁরই একসময়ের ‘ভাল মেয়ে’ তথা প্রাক্তন আইপিএস তথা বর্তমানে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি ভারতী ঘোষ। এ মুহূর্তে রাজীব কুমারকে নিয়ে তোলপাড় রাজ্য তথা দেশ, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ভারতী বললেন, ‘‘কেন একজন আইপিএস অফিসারকে পালিয়ে বেড়াতে হবে? শুধুমাত্র এই সরকারের জন্য...আজ যে কোনও অফিসার যে কোনও সময় বিপদে পড়তে পারেন’’।
উল্লেখ্য, সারদাকাণ্ডে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে মমতার চোখে ‘বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইপিএস’ রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। যতবার রাজীবের কাছে পৌঁছোনোর চেষ্টা করেছে সিবিআই, ততবারই প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ‘প্রিয় আইপিএস’কে আগলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই অভিযোগ। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজীবের সরকারি বাংলোয় সিবিআই হানার প্রতিবাদে তৃণমূল সুপ্রিমোর ধর্নাকে এ ক্ষেত্রে জ্বলন্ত উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন সমালোচকরা। এবারও রাজীব কুমারকে ধরতে রীতিমতো কালঘাম ছুটছে সিবিআই আধিকারিকদের। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজীবের মাথায় কোনও প্রভাবশালীর হাত রয়েছে। তাঁরই নির্দেশে আত্মগোপন করে রয়েছেন কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল। সেই ‘প্রভাবশালী’ বলতে মমতা সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছে বিরোধীরা। এই প্রেক্ষিতে ভারতী ঘোষের এই মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অশিক্ষিতকে ভয় পাই না: ভারতী ঘোষ
আরও পড়ুন: সিবিআই জেরার মুখে রাজীব মুখ খুললে ফল কী হবে? জানালেন বিজয়বর্গীয়
ঠিক কী বলেছেন ভারতী ঘোষ?
রাজীব কুমার প্রসঙ্গে প্রাক্তন দুঁদে আইপিএস ভারতী ঘোষ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলেন, ‘‘ শুধু একজন আইপিএস কেন, সমস্ত আইএএস-আইপিএস অফিসারদের নিয়ে ভাবুন, তাঁরা কীভাবে চাকরি করছেন। চাপ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাঁদের’’। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলী স্বভাব নিয়ে মারাত্মক তোপ দাগেন একদা অতিঘনিষ্ঠ এই মহিলা আইপিএস। তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা আমার (মমতা) খুব প্রিয়, খুব কাছের এমন এটা কথা বাজারে ছেড়ে দেন, আর এরপর তাঁদের অপব্যবহার করে বিপদে ফেলেদেন। এটা মুখ্যমন্ত্রীর স্বভাব’’। তাহলে কি রাজীব কুমারের এই পরিণতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দায়ী? জবাবে বিজেপি নেত্রী বলেন, ‘‘একদমই তাই। কেন একজন আইপিএস অফিসারকে আজকে পালিয়ে বেড়াতে হবে? কারণ, শুধুমাত্র এই সরকারের জন্য। এখানে কোনও ভাল প্রশাসক নেই, শুধু রাজনীতি হচ্ছে। বিভিন্ন পুলিশ সুপারদেরও চাপ দেওয়া হচ্ছে। অফিসারদের বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে এই সরকার। আজ যে কোনও অফিসার যে কোনও সময় বিপদে পড়তে পারেন’’।
আরও পড়ুন: রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জি সিবিআই-এর
প্রসঙ্গত, একদা মমতা ঘনিষ্ঠ আইপিএস ভারতী ঘোষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। এরপরই ভারতী ও তাঁর ব্যবসায়ী স্বামী এমভি রাজুর বিরুদ্ধে তোলাবাজির মামলা দায়ের করা হয়। যে অভিযোগের তদন্তের অঙ্গ হিসেবে ভারতীর সম্পত্তির পরিমাণ নিশ্চিত করতে তল্লাশি চালানো হয়। তখন থেকেই শাসকদলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক সময় ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে ডাকতেন যে ভারতী, তিনিই পরবর্তীকালে বিজেপিতে যোগ গিয়ে মমতা সমালোচকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ‘ভালো মেয়ে’, ‘গুড গার্ল’ ‘আমার মেয়ে’ বলে একদা ভারতীকে সম্বোধন করতেন স্বয়ং মমতা। শাসকদলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা প্রায়শই সরব হতেন। লোকসভা ভোটের আগে সেই ‘ভালো মেয়ে’ ভারতীই মমতার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়ে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন।