Rajeev Kumar Verdict: জোর ধাক্কা খেলেন রাজীব কুমার। রাজীব কুমারের গ্রেফতারের অন্তর্বতী রক্ষাকবচ সরিয়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কলকাতার প্রাক্তন নগরপালকে গ্রেফতার করতে আর কোনও বাধা রইল না সিবিআইয়ের। এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। চাইলে রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে পারবে সিবিআই। তবে আইনি পদক্ষেপের জন্য রাজীবকে ৭ দিনের সময় দিয়েছে আদালত। ফলে আগামী ৭ দিন রাজীবকে গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই। এই ৭ দিনের মধ্যে আগাম জামিনের আবেদন জানাতে পারেন কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল, এমনই ব্যাখ্যা ওয়াকিবহাল মহলের। শুক্রবার এ মামলায় নির্দেশ দেয় বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ।
Supreme Court vacates protection from arrest granted to former Kolkata Police Comm’r Rajeev Kumar. But gives him 7 days time to seek suitable legal remedies. CBI to act in accordance with law @IndianExpress
— Ananthakrishnan G (@axidentaljourno) May 17, 2019
প্রসঙ্গত, দু’দিন আগেই রাজ্য থেকে রাজীব কুমারকে তুলে নেওয়া হয়। নির্বাচনের কমিশনের নির্দেশে মমতা ঘনিষ্ঠ ওই আইপিএসকে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে সরানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দফতরে হাজিরা দেন রাজীব। এর আগে সিআইডি এডিজি পদে ছিলেন রাজীব। কিন্তু কলকাতার ভোটে রাজীব প্রভাব খাটাতে পারেন, এই আশঙ্কায় তাঁকে কমিশন সরাল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ভোটের মধ্যেই রাজীব কুমার মামলা যে পথে এগোল, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারীরা।
কোন পথে এগিয়েছে মামলা?
সারদাকাণ্ডের তদন্তে তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। কলকাতার প্রাক্তন সিপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বারবার জানিয়ে এসেছে সিবিআই। সারদা তদন্তে রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। দীর্ঘ টালবাহানার পর শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে শিলংয়ে রাজীবকে টানা ৫ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালায় সিবিআই। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছিল, সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদে কার্যত ‘বেকায়দায়’ পড়তে হয়েছে কলকাতার প্রাক্তন নগরপালকে। একথা দাবি করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষও। শিলংয়ে কুণাল ও রাজীবকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দারা। সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের পরই কলকাতা ফিরে কুণাল এমন দাবি করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের পরও সন্তুষ্ট হয়নি সিবিআই। তদন্তের স্বার্থে রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন, এই আর্জিই শীর্ষ আদালতে রাখে সিবিআই।
আরও পড়ুন: রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই
এদিকে, তিনি তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করেছেন। ফলে, তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই বলে আদালতকে জানান রাজীব কুমার। একইসঙ্গে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ সামনে আনেন রাজীব। বিজেপি নেতাদের মদতেই সিবিআই তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন বলে আদালতে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন রাজীব। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং আদালতে বলেন, ‘‘রাজীব কুমারকে হেনস্থা করতেই নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে সিবিআই’’। শিলংয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ভিডিও পেশ করুক সিবিআই, এই আর্জি সর্বোচ্চ আদালতে রাখেন রাজীব। পাশাপাশি সিবিআই যে বয়ান নথিবদ্ধ করেছে, তাও তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানান রাজীব।
আরও পড়ুন: মুকুল-বিজয়বর্গীয়ের ইশারায় কাজ করছে সিবিআই, বিস্ফোরক রাজীব কুমার
এরপর এই মামলা নয়া মোড় নেয়। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে কেন রাজীব কুমারকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই? এ ব্যাপারে আদালতে যথোপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে সিবিআইকে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পেশ করা প্রমাণে আদালত সন্তুষ্ট হলে তবেই কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারকে গ্রেফতারের নির্দেশ নিয়ে ভাববে আদালত। সেইমতো প্রমাণও পেশ করে সিবিআই। গত ২ মে এই মামলার কোনও মীমাংসা করেনি শীর্ষ আদালত।
এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি রবিবার সন্ধ্যায় লাউডন স্ট্রিটে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের সরকারি বাসভবনে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি দল। এই ঘটনা ঘিরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানার প্রতিবাদে মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালতের নির্দেশেই ‘নিরপেক্ষ’ জায়গা হিসেবে শিলংয়ে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।