রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক ছিলেন রামতারক গুপ্ত। তাঁর পরিবারের কালীপুজো ৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, কামারপুকুর এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন এবং জাগ্রত শ্রীপুরের বৈদ্যবাড়ির কালী। মা এখানে চামুণ্ডা রূপিনী। মায়ের পা, কোমর শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে। প্রচলিত নিয়মে, পুজোর দিন কোনও মহিলা লালপাড় শাড়ি, পায়ে আলতা এবং নূপুর পরে মায়ের পূজা দিতে পারবেন না। মা তাতে অসন্তুষ্ট হন বলে মনে করা হয়। মা রুষ্ট হলে ওই পরিবারে ঘনিয়ে আসে মহা বিপর্যয়, এমনটাই বিশ্বাস। তাই অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে এই কালীপুজো করা হয়।
তিনশত বছরের প্রাচীন রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক পরিবারের কালীপুজো
পুজোর ইতিহাসের বর্ণনা দেন বৈদ্য পরিবারের সদস্য লক্ষ্মীকান্ত গুপ্ত। তিনি বলেন, "আমরা আদতে বৈদ্য ব্রাহ্মণ। পূর্বপুরুষ রামতারক গুপ্ত ছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক। তিনি আমাদের ঠাকুরদার ঠাকুরদা। তাঁর আমল থেকেই এই পুজো শুরু। তাঁদের বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যেই এই মন্দির।"
এই প্রতিমাকে নিয়ে অনেক কাহিনী আছে। লক্ষ্মীবাবু বলেন, "শুনেছি, আমাদের পাঁচ প্রজন্ম আগে পরিবারের এক মহিলা লালপাড় শাড়ি আর পায়ে নূপুর-আলতা পরে সন্ধ্যায় ওই মন্দিরে আরতি করতে যেতেন। কিন্তু একদিন তিনি আর ফিরে আসেন নি। আসতে দেরি দেখে মহিলার শ্বশুর ওই মন্দিরে যান। গিয়ে দেখেন এক ভয়ংকর দৃশ্য। মায়ের মুখে রক্তমাখা সেই কাপড়ের লাল পাড়। পুত্রবধূকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকেই ওই মন্দিরে সন্ধ্যায় আরতি করতে মহিলাদের যাওয়া নিষেধ। শুধু তাই নয়, মায়ের পুজোর সময়েও কোনো মহিলা পায়ে, নুপুর, আলতা বা লালপাড় পরে যেতে পারেন না। এমনকি আমাদের পরিবারের মহিলাদের নূপুর পরাই নিষেধ।''
আরও পড়ুন: সেফটিপিন’-এর প্যান্ডেল! কালীপুজোয় চমক ব্যারাকপুরের
ওই পরিবারের অপর এক সদস্য বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ''আমাদের এই কালীপুজোয় বেশ কিছু নিয়ম আছে যা অন্য কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই। যেমন মায়ের মূর্তিতে ঠোঁটের এক কোণে রক্ত এবং লাল পাড় আঁকা থাকে। মা আমাদের নির্জনতা পছন্দ করেন। তাই ওই মন্দিরে শুধু একটা ল্যাম্প আর মোমবাতি জ্বালানো হয়। কোনো মাইক্রোফোন বা লাউড স্পিকার বাজানো হয় না। বাজনা বলতে শুধু ঢাকের বাদ্যি।" তিনি আরও বলেন, "মাকে আমাদের চেন দিয়ে কোমর বেঁধে রাখার নিয়ম, এছাড়া আমাদের একাসনে পূজা। রাত বারোটায় পুজো শুরু হলে একেবার ভোর রাতে পুজো শেষ করে সুতো কেটে পুরোহিত উঠবেন। এরপর শুরু হয় বলি। ছাগল, আখ, ছাঁচি কুমড়ো বলি হয়। অনেকেরই মানত থাকে। এরপর সন্ধ্যায় স্বপ্নে দেখা এক স্থানীয় পুকুরে মায়ের প্রতিমা নিরঞ্জন করে আবার কাঠামো নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। আর মায়ের প্রতিমা কোনো ছাঁচে হয় না। বংশপরম্পরায় এই মূর্তি বানানো হয়। বংশপরম্পরায় পুজোও করে আসছেন চট্টোপাধ্যায় পরিবার।''