বীরভূমের বগটুই পূর্ব পাড়ার দুই মহল্লায় গিয়ে দেখা গেল দু'রকম দৃশ্য। ভাদু শেখের বাড়ির এলাকার আশেপাশে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। বাড়ি ফেরাদের নিরাপত্তায় সর্বক্ষণ সশস্ত্র পুলিশ ক্যাম্প। ওখানেই লালনের নতুন বাড়িতে তালা। অন্যদিকে কিছুটা দূরে লালন শেখের পুরনো বাড়ির পাড়ায় স্থানীয়দের ভিড়ে ভিড়ে ছয়লাপ। এই পাড়ার বাসিন্দাদের সিবিআইয়ের ওপর কোনও ভরসা নেই। তবে গ্রামবাসীরা বগটুইয়ের কোনও ঘটনা নিয়েই আর মুখ খুলতে চাইছেন না। মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
Advertisment
এর আগে সিবিআইয়ের ওপর তোপ দেগেছেন মৃত লালনের স্ত্রী রেশমা বিবি। সিবিআই দফতরের সামনে বিক্ষোভও চলেছে। তিন সিবিআই আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন রেশমা। প্রথমে অস্বীকার করলেও দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর লালন শেখের দেহ নিয়েছে তাঁর পরিবার। গ্রামের বাসিন্দারা এখনও লালনের মৃত্যু নিয়ে ক্ষুব্ধ। স্থানীয়রা বলেন, মৃত্যুর আগের দিন লালনকে তাঁর নতুন বাড়ি, পুরনো বাড়ি ও শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে এসেছিল সিবিআই। একটু খুঁড়িয়ে চললেও পরের দিন এমন ঘটনা ঘটবে তা তাঁরা কল্পনাও করেননি। তাঁদেরও দাবি, শেষ বারের মতো দেখানোর জন্যই সিবিআই লালনকে গ্রামে ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
লালন শেখের নির্মিয়মান বাড়ি।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সিবিআই গ্রামের ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করছে। এরা কেউ বগটুইয়ের গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত নয় বলে তাঁদের দাবি। গ্রামবাসীদের দাবি, সিবিআইয়ের তদন্ত মানেই প্রহসন। ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও কেউ নামপ্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয়। লালনের বাড়ির পাশের রাস্তায় দিনভর ভিড় জমিয়েছে গ্রামের পুরুষ-মহিলারা। তাঁদের দাবি, 'মিডিয়ায় বক্তব্য রাখলেও আমাদের ধরে নিয়ে গিয়ে অত্য়াচার চলছে।'
Advertisment
গত ২১ মার্চ রাতে স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন। তার পর ওইদিন রাতেই বগটুইয়ে কয়েকটা বাড়িতে দরজা বন্ধ করে জীবন্ত পুড়িয়ে নৃশংস হত্যা করা হয় ১০ জনকে। এই বীভৎস ঘটনায় তোলপাড় হয়ে যায় সারা বাংলা। গণহত্য়ার তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনার ৯ মাস পর মূল অভিযুক্ত লালনকে গ্রেফতার করে সিবিআই। এবার লালনের সিবিআই হেফাজতে মৃত্য়ুর ঘটনা নিয়ে ফের শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
লালনের পুরনো বাড়ির সামনে স্থানীয়দের ভিড়
গত কয়েক মাসে ঘটনার ঘণঘটায় পরিশ্রান্ত বগটুই। বাসিন্দারা চাইছেন না আর নতুন করে কোনও অশান্তি ঘটুক। লালনের নতুন বাড়ির পাশের বাসিন্দা টোটোচালক ইয়াসিন বলেন, 'আমরা মানুষের মুখে শুনেছি লালনকে সিবিআই মেরে দিয়েছে। মানুষ তদন্ত চাইছে। তবে গ্রামে এখন কোনও অশান্তি নেই। আমরা গ্রামে শান্তি চাই, শুধু শান্তি চাই।'