আপাতত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে নিরস্ত হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবির। পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুর্শিদাবাদের এই বিদ্রোহী নেতা।
আজ, মঙ্গলবার ডোমকলে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি থাকা সত্বেও বরহমপুরে পৃথকবাবে সভা ডেকেছিলেন হুমায়ুন কবির। এর আগে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে হুমায়ুন কবির বলেন, 'গতকাল রাত পর্যন্ত সভা করার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীদা রাত ১০টার পরে আমাকে ফোন করে সভা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তিনি আমাকে বলেছেন একই দিনে তোমার ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কর্মসূচি হলে জেলায় তৃণমূল কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।'
আরও পড়ুন জ্বলে পুড়ে খাঁক ভাঙড়, কিন্তু হাসিমুখে পাশাপাশি নৌশাদ-শওকত! তারপর?
তিনি আরও বলেন, 'আমিও সে কথা বিবেচনা করে আজকের সভা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে জেলা নেতৃত্বকে সরানো হবে বলে কথা দিয়েছেন সুব্রত বক্সীদা। যদি না সরায় তাহলে ২৫ জুলাইয়ের পর ফের স্বমূর্তি ধারন করব।'
তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে যাবেন? জবাবে হুমায়ুন বলেন, 'এখনও অভিষেকের কর্মসূচিতে যাব কিনা ঠিক করিনি। তবে আমি আর বর্ষীয়ান নেতা ও দলীয় বিধায়ক নিয়ামত শেখ একসঙ্গে আছি। আমরা আলোচনা করে ঠিক করব। কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য অভিষেক নিজেও বলেছেন। সুব্রত বক্সীও বলেছেন।'
তাহলে কি একফোনে নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ মিটে গেল? হুমায়ুন কবির বলেন, 'ক্ষোভ ঠিক না, আমার যুক্তিসঙ্গত দাবি বা ইস্যু রয়েছে। আমার রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি কোনও ক্ষোভ নেই। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বরে প্রতি আছে। শাওনি সিংহ রায় মুর্শিদাবাদে ভোটে দাঁড়িয়ে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছিলেন। তারপর ওই বছর ১৬ অগাস্ট তাঁকে এখানে সভানেত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিল দল। ২২ মাস ধরে তিনি ব্যর্থ। তিনি এখনও কমিটি করতে পারেননি। কমিটির দিশা দেখাতে পারেননি জেলায়। সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন না। আমরা বিধায়ক, আমাদের তাঁর কাছে কোনও গুরুত্ব নেই। আমাদের কথার মূল্য দেয় না। আমার ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা তাঁকে হঠাতে হবে। হঠানোর বিষয়টাতে রাজ্য সভাপতি ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, উভয়েই সম্মতি দিয়েছেন। তবে তাঁরা একটু সময় চেয়েছেন। সেই সময়টা ২১ জুলাই শহিদ দিবসের পর ২৫ জুলইয়ের মধ্যে কার্যকরী হবে।'
পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অশান্তির জেরে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। নির্দল প্রার্থীদের সঙ্গ দিয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন ইসলামপুরের বিধায়ক আবদুল করিম চৌধুরী। দক্ষিণ ২৪ পরগানার তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসউদ্দিন মোল্লাও পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুর্শিদাবাদের হুমায়ুন কবিরসহ বিদ্রোহী বিধায়কের সংখ্যা বেশি।
হুমায়ুন বলেন, 'দলীয় প্রার্থীদের বাদ দিয়েছে। দলীয় লোকেদের অসম্মান করেছে বলেই তো আমার এত লড়াই। অবহেলিত, অপমানিত বা সাইড করে দিয়েছে প্রকৃত তৃণমূলের ভালো ভালো কর্মীদের। পঞ্চায়েতে টিকিট দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদেই তো গত ২০ জুন থেকে ২৬ জুন রাত ১০টা ৪০ পর্যন্ত আমি আমার পয়েন্টে স্ট্যান্ড ছিলাম।' তবে তাঁর দাবি, 'তৃণমূল শক্তিশালী, যতই কেন্দ্রীয় বাহিনী আসুক মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের ফল ভাল হবে।
তৃণমূল বিধায়কের বক্তব্য, 'অনেক অযোগ্য লোক এবার প্রার্থী হয়েছে যা গত ২০১৮ সালেও হয়েছিল। যা করেছিল তৎকালীন দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু অধিকারী। টাকার বিনিময়ে প্রধান করা হয়েছিল। এবারও আটকানোর চেষ্টা হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতকে মান্য করে যাতে প্রধান নির্বাচিত করা যায় এবং পঞ্চায়েত সমিতি, স্থায়ী সমিতি হয়, তার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলায় আমি লড়াই করব।'
তৃণমূল করা নির্দলরা জয় পেলে কী করবেন? দল তো কড়া বার্তা দিয়েছে। হুমায়ুন কবির বলেন, 'অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বার্তা দিয়েছেন। তবে এঁরা জিতলে তৃণমূলেই থাকবে। হারলেও তৃণমূলে থাকবে। তবে তাঁরা তো কোনও পদে নেই যাঁরা তৃণমূলের ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন জানিয়েছিল। সেটাই তো গ্রাহ্য হয়নি। সাধারণ ভাবে তাঁরা মনোনয়ন দাখিল করেছিল। তাঁরা তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবেই আবেদন করেছিল। কিন্তু তাঁরা দলের প্রতীক না পাওয়ায় নির্দল প্রার্থী হিসাবে থেকে যায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে ১০ মিনিট বাকি থাকতে দলীয় প্রতীক বন্টন করায় তাঁরা আর মনোনয়ন তুলে নিতে পারেনি। কারণ তাঁরা ভেবেছিল তাঁরাই টিকিট পাবে। তাই নির্দল থেকে গিয়েছে।'
জনজোয়ারে পঞ্চায়েত ভোটে মানুষের প্রার্থী ঠিক হবে বলে অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন। কি বলবেন? তাঁর জবাব, 'উনি দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি. ওনার ফর্মুলা নিয়ে কিছু বলব না।' 'তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কথামত জেলা সভাপতিকে না সরালে ২৫ জুলাইয়ের পর আবার আমি স্বমহিমায় আমার মূর্তিধারন করব।' হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন হুমায়ুন কবির।