দুর্নীতির দায়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারে স্বস্তি পেলেও প্রকৃত চাকরিপ্রার্থীরা কেন বঞ্চিত হবে, সেই দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে ৪৯৬ দিন ধরে অবস্থানে বসে রয়েছেন এসএসসির চাকরিপ্রার্থীরা। ফের আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন ১৮-২০ লক্ষ টাকা দিয়ে অযোগ্যপ্রার্থীরা চাকরি পেয়েছেন। প্রকৃত যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাঁরা বসে রয়েছেন ফুটপাতে।
টানা ২৭ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গ্রেফতার করেছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। ২০১৯ সালে কলকাতা প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনে বসেছিল এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা। সেই সময় আন্দোলনকারী নেতৃত্বস্থানীয়দের চাকরি দিয়ে রাজ্য সরকার বাকিদের বঞ্চিত করেছিল বলে অভিযোগ। অভিযোগ, শুধু তাই নয় এর ফলে আরও বেশি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে ফের রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে এসএসসি চাকরি প্রার্থীরা।
পলাশী থেকে আসা সাজ্জাদ হাসান মন্ডল বলেন, 'আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি শিক্ষক নিয়োগে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। একাধিক দুর্নীতি হয়েছে। সেগুলি আজ হাইকোর্টে এভিডেন্স দেওয়ার পর বিশ্বাস হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যাঁরা যোগ্য তাঁরা কেন রাস্তায় পড়ে আছে? তাঁরা কেন টাকার বিনিময়ে বঞ্চিত হবে? আমাদের দাবি ন্য়ায্য চাকরিটা দেওয়া হোক। ২০১৯ সালে প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখেনি মুখ্য়মন্ত্রী। ফেল করা প্রার্থীরা চাকরি করছে। প্রকৃত মেধাতালিকায় নাম থাকারা রাস্তার ফুটপাতে বসে আছে।' সাজ্জাদের স্পষ্ট কথা, 'টাকা দিইনি তাই আমরা চাকরি পাইনি।'
ঘর-পরিবার ছেড়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দিনের পর দিন প্রতিবাদ-অবস্থানে রয়েছে চাকরিপ্রার্থীরা। কল্যানীর তনায় বিশ্বাস বলেন, 'আমাদের প্রকৃত যোগ্যতা আছে। প্রকৃত শিক্ষক আমরাই। আমরা চাকরির প্রকৃত দাবিদার। গ্রেফতার যাই হোক আমাদের দিকে দৃষ্টিপাত দেওয়া হোক। যেখানে আমাদের স্কুলে থাকার কথা অথচ আমরা ফুটপাতে বসে রয়েছি। আমরা শারীরিক, মানসিক সব দিক থেকে বিদ্ধস্ত। তনয়ার কথায়, 'এই গ্রেফতার সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। প্রকৃত খুশি হবো যেদিন হাতে নিয়োগপত্র পাবো।' হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময়ও স্বাগত জানিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। দুর্নীতির অভিযোগে এদিন ইডির হাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেতারের খবরের প্রেক্ষিতে আন্দোনকারীরা উচ্ছ্বসিত হলেও তাঁদের মূল দাবি চাকরিতে নিয়োগ। তাঁদের বক্তব্য, যাঁরা অন্যায় করবে তাঁদের শাস্তি হবে। তার সঙ্গে যোগ্যপ্রার্থীদের কথাও ভাবতে হবে।
রাজ্যে এসএসসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল অনেক আগেই। মেধা তালিকায় নাম থেকেও চাকরি হয়নি অথচ নাম না থাকা সত্বেও অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে স্কুলে নিয়োগপত্র পেয়েছে, এই অভিযোগ করে এসেছে আন্দোলনকারীরা। মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘির সঈদুল্লাহ ৩০০ দিন কাটিয়েছেন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। তিনি বলেন, 'সেই সময় ভুরি ভুরি দুর্নীতির কথা বলেছি। অর্থ লেনদেনের কথাও আমরা বলেছি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সময় টাকার লেনদেন আজ প্রমানিত। বঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়োগ করার আবেদন করছি। একএকজন প্রার্থীর থেকে ১৮-২০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। আমার কাছেও লক্ষ লক্ষ টাকা চেয়েছিল। আমরা অন্যায় পথে যাইনি। আমাদের সিটগুলো টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। অবস্থানে অংশ নেওয়া বর্ধমান থেকে পিউ ঘোষ জানিয়ে দিলেন, 'আমরা খুব কষ্টে আছি। নিয়োগ না করা অবধি আমাদের আন্দোলন চলবে।'