Durga Puja 2024: আরজি কর-কাণ্ডের অশ্রু, বাঙালির চোখ থেকে দুর্গাপুজোর আনন্দের ঝিলিক আগেই কেড়ে নিয়েছিল। এবার সেটাও যেন ভাসিয়ে দিল ডিভিসির ছাড়া জল। টলটলে জলভরা চোখে আসন্ন পুজোর অপেক্ষায় এখন বঙ্গের আট থেকে ৮০। কাশফুলের দুলুনিতে মন দোলানো, ঢাকের বাদ্যির আসক্তি, শিউলির গন্ধ, নতুন পোশাকের ইচ্ছা- সব যেন এখন বিষাদে পানসে।
শারদীয়ার গল্প-উপন্যাসের জন্য প্রহর গোনা, পুজোর গান বাজারে আসার প্রতীক্ষা- বাঙালির জীবন থেকে আগেই অন্তর্ধান হয়েছে, দুর্বল-নিরাপত্তাহীন আর্থিক সঙ্গতির দৌলতে। তবুও আলোয় পথঘাট ভরে ওঠা, থিমায়ন, রবীন্দ্র, নজরুল, কিশোর, লতা, আশা, রফি সাহেবের গান, আধুনিক টলি-বলি, নচিকেতাদের সুর বাঙালির জীবনে দুর্গাপুজোকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। যার দৌলতে খুঁটিপুজো, চক্ষুদান থেকে কার্নিভালের মত অনেক নতুন সঙ্গ বাঙালি পেয়েছে। কিন্তু, এবার যেন সেই সবেই জলে থইথই ভাব।
৯ অগাস্টের আরজি কর-কাণ্ডের বীভৎসতা বাঙালিকে বারবার যেন পুজোর গন্ধে মেতে উঠতে, আনন্দের অঙ্গনে পা ফেলতে বাধা দিচ্ছে। বাকি আনন্দ কেড়ে নিয়েছে রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। বিভিন্ন জায়গায় ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ জলবন্দি। কোথাও আবার পুজোর অস্থায়ী মণ্ডপও বুকজলে। বিভিন্ন জেলার প্রতিমা শিল্পীদের তিল তিল করে গড়ে তোলা প্রতিমার কাঠামো ফের শুরুর আগের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। একরের পর একর জমি জলের তলায়, অন্যান্য ফসলের চাষিদের মত ফুলচাষিদেরকেও কাঁদিয়ে ছেড়েছে।
আরও পড়ুন- ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলার হাল বাম জমানা থেকেই খারাপ, কেন্দ্রীয় রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য
ঠিক যেন ১৯৭৮-এর ২৫ সেপ্টেম্বর। সেদিনও দক্ষিণবঙ্গে পুজো শিকেয় উঠেছিল। বঙ্গের দক্ষিণের একের পর এক জেলা চলে গিয়েছিল জলের তলায়। টানা তিন দিন বৃষ্টি। আর, তাতেই ঘটেছিল সাড়ে সর্বনাশ। কোথায় পুজো, কোথায় কী! কীসেরই বা আনন্দ! অনেকেরই আজও মনে পড়ে সেসব দিনের কথা! সেবছর সেপ্টেম্বরে নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছিল। লা নিনার প্রভাব কি না, তখন আবহাওয়া দফতর তা জানাতে পারেনি। তবে, এটুকু জানিয়েছিল যে বৃষ্টি হয়েছিল ৯৪৪.৭ মিলিমিটার। আর, সেই প্রবল বৃষ্টিতে একের পর এক নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। দক্ষিণবঙ্গের ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছিল। মোট ১৬টি জেলা প্লাবিত হয়েছিল।
১৯৭৮-এর ২৫ সেপ্টেম্বর | বৃষ্টি হয়েছিল ৯৪৪.৭ মিলিমিটার |
সেবছর মহালয়া ছিল ১ অক্টোবর | মহানগরীর রাজপথে নৌকো চলেছিল |
তিলোত্তমা কলকাতাও রক্ষা পায়নি। মহানগরীর রাজপথে নৌকো চলেছিল। কোমর সমান জলে বন্দি ছিলেন শহর ও শহরতলিবাসী। অনেকেই সেসময় বাড়ির ছাদে কোনওমতে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। এবার যেমন ২ অক্টোবর মহালয়া। সেবছর মহালয়া ছিল ১ অক্টোবর। দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সেই বছর নামমাত্র পুজো হয়েছিল। কোথাও আবার হয়নিই। এবারও একই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে এবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতিটা- 'ম্যান মেড।' সেবারটা অবশ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপরই যাবতীয় দায় ঠেলে দিয়েছিল প্রশাসন।
তবে, এবার শুধু 'বন্যা' বা 'বন্যা পরিস্থিতি'ই নয়। আরজি কর আন্দোলনের জেরেও রাজ্যবাসীর পুজোর আনন্দটাই মাটি হয়ে গিয়েছে। বছর চারেক আগে করোনা আবহ এমন ভাবেই বাংলার থেকে দুর্গাপুজোর আনন্দকে কেড়ে নিয়েছিল। তার বেশ কয়েক বছর আগে, ২০০৭-এ পুজোর আনন্দে বাধ সেধেছিল রিজওয়ানুর-কাণ্ড। আর, এবার আরজি কর-এ নারকীয় ঘটনা! যা নিয়ে এখনও প্রতিবাদ, আন্দোলন অব্যাহত। অগুণতি মানুষ সেই আন্দোলনে শামিল।
ভবানীপুরের মল্লিক বাড়ির ঘোষণা
ভবানীপুরের মল্লিক বাড়ির শতবর্ষের ঐতিহ্যমণ্ডিত পুজো জানিয়ে দিয়েছে, এবার তাদের দরজা ভক্তদের জন্য বন্ধ থাকবে। ভিতরে পুজো হবে আড়ম্বরহীনভাবে। দেবীর কাছে, 'মেয়েটির বিচার হোক' প্রার্থনা করে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। জানিয়েছেন, উৎসবের জাঁকজমকে থাকবেন না। উৎসব ছাড়াই এবার তাঁদের পুজো হবে, কোনওমতে।